Advertisement
E-Paper

চিটফান্ড নজরদারিতে নতুন গোয়েন্দা জাল

চোর পালালে বুদ্ধি খাটানোর দিন শেষ। চুরির আগেই এ বার চোরের কারসাজি ধরে ফেলার চেষ্টা হবে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৬ ০৩:৪৮

চোর পালালে বুদ্ধি খাটানোর দিন শেষ। চুরির আগেই এ বার চোরের কারসাজি ধরে ফেলার চেষ্টা হবে।

সুদীপ্ত সেনের সারদার মতো সংস্থাগুলিকে এ বার অঙ্কুরেই বিনাশ করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। গ্রামেগঞ্জে বা মফস্‌সলের মানুষকে মাত্রাছাড়া মুনাফার লোভ দেখিয়ে টাকা জমা নেওয়া শুরু হলেই যাতে সিবিআইয়ের কাছে খবর যায়, তার জন্য তৈরি হবে পৃথক গোয়েন্দা ব্যবস্থা। সরকারের লক্ষ্য হল, মানুষকে সর্বস্বান্ত করার আগেই এই সংস্থাগুলির দরজায় তালা ঝোলানো।

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে সারদা কেলেঙ্কারির তদন্তে নামার পরে সিবিআই কেন্দ্রীয় সরকারকে জানায়, সারদা-সহ বিভিন্ন সংস্থা ৬ কোটি মানুষকে প্রতারণা করেছে। এই সংস্থাগুলি বাজার থেকে ৬৮ হাজার কোটিরও বেশি টাকা তুলেছে। অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির বক্তব্য, অর্থনীতির বিষয়ে তেমন জ্ঞানগম্যি না থাকা মানুষরাই বেশি করে এর শিকার হচ্ছেন। তাই চলতি বছরের বাজেটে জেটলি ঘোষণা করেন, ভুয়ো অর্থলগ্নি সংস্থাগুলির দৌরাত্ম্য বন্ধ করতে একটি সার্বিক আইন আনা হবে। সেখানে আরও কড়া শাস্তির বিধান থাকবে।

সেই আইন তৈরি করতে গিয়েই মোদী সরকারের টনক নড়ে। দেখা যায়, দেশের কোথায় কোন কোন সংস্থা কী ধরনের অর্থলগ্নি প্রকল্প চালাচ্ছে, এর মধ্যে কোনগুলি বেআইনি, তার কোনও সার্বিক রিপোর্ট বা সমীক্ষাই নেই। কারণ সেই তথ্য জোগাড় করারও কোনও ব্যবস্থা নেই। তা থেকেই মোদী সরকার এখন মনে করছে, শুধু কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করলেই হবে না। এ সব আটকাতে একটি গোয়েন্দা ব্যবস্থা প্রয়োজন। যাতে একেবারে প্রত্যন্ত গ্রামে সারদার মতো সংস্থাগুলি কাজকারবার করলেই তা প্রশাসনের নজরে আসে। না হলে পরে তদন্তে নেমে এই সব সংস্থার মালিক বা কর্তাকে গ্রেফতার করে, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেও কোনও লাভ হয় না। তত দিনে গরিব মানুষের সঞ্চয়ের অর্থ অন্য কোনও সংস্থায় বা বিদেশে সরিয়ে ফেলা হয়। যার হদিস মেলে না। গরিব মানুষের টাকা ফেরানোও কঠিন হয়ে পড়ে।

এ বিষয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রক গোষ্ঠী হয়েছিল। সেই গোষ্ঠীই একটি ‘জাতীয় গোয়েন্দা ব্যবস্থা’ তৈরির সুপারিশ করে। সেই সুপারিশ মেনেই এ বার বেআইনি চিট ফান্ডের নজরদারিতে নতুন ব্যবস্থা তৈরি হতে চলেছে। কেন্দ্র ও রাজ্য, এই দু’টি স্তরে নতুন গোয়েন্দা ব্যবস্থার কাঠামো তৈরি হবে। জাতীয় ও রাজ্য স্তরে সিবিআই ‘নোডাল এজেন্সি’ হিসেবে কাজ করবে। সঙ্গে থাকবে কেন্দ্র ও রাজ্যের অর্থ দফতর, কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রকের এসএফআইও, পুলিশ, আর্থিক অপরাধ দমন শাখা, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, সেবি, আয়কর ও শুল্ক দফতর, কোম্পানি নিবন্ধক, ব্যাঙ্ক, ইকনমিক ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা। প্রতিটি সংস্থার তরফে জাতীয় ও রাজ্য স্তরে এক জন বিশেষ অফিসারকে এর দায়িত্ব দেওয়া হবে। প্রতি মাসে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তারা এ বিষয়ে বৈঠকে বসবেন। রাজ্য স্তরে সিবিআইয়ের আঞ্চলিক কর্তা এই দায়িত্ব সামলাবেন। জাতীয় স্তরে সিবিআইয়ের এক জন কর্তাকে এর দায়িত্ব দেওয়া হবে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন কাঠামোয় গোটা দেশে একেবারে প্রত্যন্ত এলাকাতেও তথ্য জোগাড়ের ব্যবস্থা তৈরি হবে। কোনও একটি সংস্থা কিছু তথ্য পেলে সঙ্গে সঙ্গে বাকিদের জানানো হবে। গ্রামগঞ্জের মাঠময়দান থেকে উঠে আসা তথ্যের পর্যালোচনায় সিবিআই পৃথক তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগ তৈরি করবে। অর্থলগ্নি সংস্থাগুলি ইন্টারনেট বা সোশ্যাল মিডিয়ায় কী ভাবে প্রচার চালাচ্ছে, সে দিকেও নজর রাখবে এই বিভাগ। রাজ্য স্তরে পাওয়া তথ্য সিবিআই সদর দফতরে পাঠানো হবে। বেআইনি লগ্নি সংস্থা বা ভুয়ো লগ্নি প্রকল্পের সন্ধান মিললেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সিবিআই-এর এক কর্তার মতে, লগ্নি সংস্থাগুলি কমিশন এজেন্টের মাধ্যমে কাজ করে। তারাই মানুষকে চড়া হারে আয়ের লোভ দেখিয়ে সঞ্চয়ের টাকা সংগ্রহ করে। ফলে সব সময় দিল্লিতে বা রাজ্যের রাজধানীতে বসে এ সব জানা যায় না। যত দিন নতুন সঞ্চয় আসতে থাকে, তত দিন চড়া হারে সুদও দেয় এরা। কিন্তু প্রথম থেকেই বাজার থেকে তোলা টাকা অন্যান্য সংস্থায় বা বিদেশে সরিয়ে ফেলা হয়। এত জটিল লেনদেনের মাধ্যমে টাকার হাতবদল হয় যে তদন্তে নেমে কোন টাকা কার অ্যাকাউন্টে গিয়েছে, তার হদিস মেলে না।

অর্থ মন্ত্রকের কর্তারা মনে করছেন, বেআইনি লগ্নি প্রকল্পে নজরদারি চালানোটাই সব থেকে কঠিন। নজরদারিতে যে ফাঁক রয়েছে, সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার সময়েই তার উল্লেখ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। চলতি সপ্তাহেও শীর্ষ আদালত সে বিষয়ে ফের সরকারের জবাবদিহি চেয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, সমস্যা হল বিভিন্ন ধরনের অর্থলগ্নি সংস্থা রয়েছে। কারও উপর নজরদারির দায়িত্ব সেবি-র, কারও উপর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। কারও উপর আবার রাজ্য সরকারের। এরই সুযোগ নেয় বেআইনি কারবারিরা।

এর আগে আদালতে সিবিআই জানিয়েছিল, তাঁদের কাছে যথেষ্ট লোকবল নেই। ফলে তদন্ত ঠিক ভাবে করতে অসুবিধা হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধিতার মুখেও পড়তে হয়েছিল সিবিআইকে। কেন্দ্র ও রাজ্যের এতগুলি সংস্থাকে নিয়ে নতুন ব্যবস্থা কতটা সফল হতে পারবে, তা সময়ই বলবে। তবে এ ক্ষেত্রে রাজ্যগুলির সঙ্গে সমন্বয়ের মধ্য দিয়েই এগোতে চায় মোদী সরকার। সরকারি স্তরে ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে, তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বিরাট মাপের লোকবলের প্রয়োজন হবে না। যেটা দরকার, তা হল নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রযুক্তি-নির্ভর নয়া ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার।

chit funds surveillance
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy