Advertisement
E-Paper

ইশরত কাণ্ডে নয়া মোড়! সাজানো সাক্ষ্যের ব্যবস্থা করেছে মোদী সরকার?

মামলার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন যিনি, তিনি জেরার আগে ফোন করছেন এক সাক্ষীকে। জেরার সময় তিনি কী প্রশ্ন করবেন, তা বলে দিচ্ছেন। সেই প্রশ্নের জবাবে সাক্ষীকে কী বলতে হবে, তাও শিখিয়ে দিচ্ছেন!

সংবাদ সংস্থা

শেষ আপডেট: ১৬ জুন ২০১৬ ২১:৩৩

মামলার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছেন যিনি, তিনি জেরার আগে ফোন করছেন এক সাক্ষীকে। জেরার সময় তিনি কী প্রশ্ন করবেন, তা বলে দিচ্ছেন। সেই প্রশ্নের জবাবে সাক্ষীকে কী বলতে হবে, তাও শিখিয়ে দিচ্ছেন!

কোনও ছোটখাট মামলা নয়, ইশরাত জাহানের ‘ভুয়ো’ এনকাউন্টার মামলা সংক্রান্ত তদন্তে এই বিশাল অনিয়ম সামনে এসেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব বিকে প্রসাদের বিরুদ্ধে এই মারাত্মক অভিযোগ এনেছে একটি সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিক। প্রসাদের সেই বিতর্কিত ফোনালাপের রেকর্ডিং-ও প্রকাশ করা হয়েছে।

ঠিক কী বিষয়ের তদন্ত করছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব বিকে প্রসাদ?

ইশরত জাহান মামলার তদন্ত ইউপিএ আমল থেকে চলছে। সেই সময় ওই মামলার বিষয়ে যে দ্বিতীয় হলফনামাটি সরকারের তরফে আদালতে পেশ করা হয়েছিল, তাতে ইশরতের বিরুদ্ধে লস্কর-ই-তৈবার সঙ্গে যোগ থাকার অভিযোগ বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। কী পরিস্থিতিতে ইশরতের বিরুদ্ধে ওঠা লস্কর যোগের অভিযোগ সরকারি হলফনামা থেকে বাদ গেল, তা নিয়েই তদন্তের নির্দেশ দেন পরবর্তী তথা বর্তমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। তদন্তের দায়িত্ব বর্তায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব বিকে প্রসাদের উপর। তিনি নিজের তদন্ত রিপোর্ট আজ, ১৬ জুন জমা দিয়েছেন। কিন্তু সেই রিপোর্টে ইশরত জাহান মামলার গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেননি অতিরিক্ত সচিব।

গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত আসলে নাকি ঠিক পথে হয়নি। বিষয়টি নাকি গোড়া থেকেই চাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন প্রসাদ। অনেকটা এমনই দাবি করা হয়েছে ইংরেজি সংবাদপত্রটিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে। যে অডিও রেকর্ডিংটি ওই সংবাদমাধ্যমের তরফে প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে বিকে প্রসাদকে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্য এক অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে শোনা গিয়েছে, যে অফিসার আগে ইশরত জাহান মামলার তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন, কিন্তু এখন রয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রকে। খোঁজ নিয়ে জানা গিয়েছে, সেই অফিসার হলেন অশোক কুমার। ২০১১-র মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত অশোক কুমার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ডিরেক্টর (অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা) পদে ছিলেন। তখন ইশরত মামলার ফাইলপত্র তিনি দেখভাল করেছেন। বর্তমানে অশোক বাণিজ্য মন্ত্রকে যুগ্ম সচিব পদে রয়েছেন।

দেখে নেওয়া যাক অশোকের সঙ্গে ফোনে কী কথা হয়েছে বিকে প্রসাদের।

প্রসাদ অশোক কুমারকে ফোন করে বলেন, যে সব অফিসার ইশরত মামলার তদন্তে বিভিন্ন সময়ে যুক্ত ছিলেন, তাঁদের সবাইকেই জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। অশোক কুমারকেও তিনি ডাকবেন। এর পর প্রসাদ অশোককে জানান তাঁকে কী প্রশ্ন করা হবে। তিনি বলেন, ‘‘আমি আপনাকে জিজ্ঞাসা করব, আপনি এই সব নথিপত্র দেখেছেন? আপনাকে বলতে হবে, আমি দেখিনি। সোজা কথা।’’ এতেই থামেননি প্রসাদ। অশোক কুমারের উপর ঘুরিয়ে চাপও সৃষ্টি করেন তিনি। অডিওতে প্রসাদকে বলতে শোনা গিয়েছে যে যদি কোনও অফিসার বলেন যে তিনি ওই সব নথিপত্র দেখেছেন, তা হলে সেই নথি কোথায় গেল, তা বলার দায়ও তাঁর ঘাড়েই চাপবে। এর পর প্রসাদ বলেন, ‘‘আপনাকে এটুকু তো অন্তত বলতেই হবে যে ওই ফাইলগুলো নিয়ে জীবনে আমি কখনও কোনও কাজই করিনি, ফাইল দেখার সুযোগই পাইনি কখনও। ...আমারও মনে হয়, আপনি কখনও ওই সব ফাইল দেখেননি। ব্যাস, এইটুকুই আমি আপনার থেকে চাই।’’

আরও পড়ুন: আরও এক ‘নেতাজি’! এ বার বিদারের লালধারী মুত্যা

যে ইংরেজি দৈনিক এই অডিও প্রকাশ করেছে, তাদের তরফে জানানো হয়েছে, প্রতিবেদক অন্য একটি খবর সংগ্রহের জন্য ফোন করেছিলেন প্রসাদকে। সেই সময় প্রতিবেদককে অপেক্ষা করতে বলে অন্য ফোন থেকে অশোক কুমারের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন প্রসাদ। প্রতিবেদক যে বিষয়ে মন্তব্য নেওয়ার জন্য প্রসাদকে ফোন করেছিলেন, সে বিষয়ে প্রসাদের মন্তব্য হুবহু প্রকাশ করার জন্য কল রেকর্ড করছিলেন। ফলে অন্য ফোন থেকে অশোক কুমারের সঙ্গে প্রসাদ কী কথা বলছিলেন, তাও রেকর্ড হয়ে যায় প্রতিবেদকের ফোনে। এই রেকর্ডিং-এর ভিত্তিতে অশোক কুমারের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছিল দৈনিকটির তরফে। তিনি স্বীকার করেন যে বিকে প্রসাদ ইশরত মামলা সম্পর্কে কথা বলতে তাঁকে ফোন করেছিলেন। কিন্তু বিশদে কিছু বলতে তিনি রাজি হননি। বিকে প্রসাদ নিজেও সব অভিযোগ নস্যাৎ করেছেন। তিনি ইংরেজি দৈনিকটিকে মেইল করে জানিয়েছেন, তদন্তের স্বার্থেই অফিসারদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। কেউ যখন জানতে চেয়েছেন, কী ধরনের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, তখন তিনি ফোনেই তাঁদের নমূনা দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন, প্রশ্নোত্তর কেমন হবে। যে তারিখে কথোপকথন রেকর্ড করা হয়েছে বলে প্রতিবেদকের দাবি, সেই তারিখের পর যে সব অফিসারকে জেরা করা হয়েছে, তাঁদের কারও জবাবেই ওই অডিওতে শ্রুত উত্তরগুলি খুঁজে পাওয়া যাবে না বলে দাবি করেছেন প্রসাদ।

প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পি চিদম্বরম এই প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে তীব্র আক্রমণ করেছেন মোদী সরকারকে এবং তৎকালীন গুজরাত সরকারকে। তিনি বলেছেন, ‘‘যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, তাতে খুব স্পষ্ট বাবে প্রমাণিত হয়েছে, আমার অবস্থানই ঠিক ছিল। ইউপিএ সরকার যে দ্বিতীয় হলফনামা জমা দিয়েছিল, তা যে সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল, তা আবার প্রমাণিত হয়েছে।’’ সাক্ষ্যপ্রমাণ সাজিয়ে ইশরত জাহান মামলার মোড় ঘোরানোর চেষ্টা হচ্ছে বলে চিদম্বরমের দাবি। তবে কোনও ভাবেই সত্য চাপা থাকবে না বলে প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মন্তব্য করেছেন।

Ishrat Jahan Missing Paper Case B K Prasad Ashok Kumar Tutored Witness
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy