কালো টি শার্ট। তাতে একটি ল্যাপেল লাগানো। চোখে-মুখে অদ্ভুত একটা শান্তভাব। একটি ঘরে বসে রয়েছেন দিল্লি বিস্ফোরণকাণ্ডের মূল চক্রী তথা চিকিৎসক উমন-উন-নবি। সামনে ক্যামেরা চালু করা। খুব ধীরস্থির ভাবে বলা শুরু করলেন তিনি। ‘অ্যাকসেন্টেড’ ইংরেজিতে। আত্মঘাতী বোমারু নিয়ে যে সমাজের ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে, সাধারণ বোমা বিস্ফোরণের সঙ্গে আত্মঘাতী বোমার কতটা ফারাক, কেন আত্মঘাতী বোমারু বানানো হয়, খুব সংক্ষেপে সেই ব্যাখ্যা দিয়েছেন। ভিডিয়োটি সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। দাবি করা হচ্ছে, দিল্লিতে বিস্ফোরণের আগে এই ভিডিয়োটি করেছিলেন উমর (যদিও ভিডিয়োটির সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার ডট কম)।
ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, একটি ঘরের মধ্যে একা বসে রয়েছেন উমর। তার পরই তিনি আত্মঘাতী বোমারু নিয়ে বলতে শুরু করলেন। উমরকে বলতে শোনা যাচ্ছে, আত্মঘাতী বোমারুদের নিয়ে বেশির ভাগেরই ভুল ধারণা রয়েছে। যাঁদের আত্মঘাতী বোমারু বলে দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আসলে তাঁরা আত্মঘাতী বোমারু নন। তাঁরা আসলে ইসলামের এক এক জন শহিদ। উমর আরও দাবি করেছেন, আত্মঘাতী বোমারু নিয়ে অনেক বাগ্বিতণ্ডা, তর্কবিতর্কও রয়েছে।
উমরের কণ্ঠে ‘মার্টারডম অপারেশন’-এর কথাও উঠে এসেছে আত্মঘাতী বোমারু সম্পর্কে বিশ্লেষণ করতে গিয়ে। তাঁর কথায়, ‘‘আত্মঘাতী হামলার সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, যখন কোনও ব্যক্তি এটা মেনে নেন যে, তাঁর মৃত্যু একটি নিশ্চিত সময়, নিশ্চিত স্থানে হবে, তখন তাঁকে একটি ভয়ানক মানসিক পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। তখন তিনি এটাই মেনে চলেন যে, মৃত্যুই তাঁর একমাত্র গন্তব্য। একটা বিশেষ লক্ষ্যে, বিশেষ পরিস্থিতির মধ্যে তাঁকে মৃত্যুবরণ করতে হয়। আর তাঁকে শুধু আত্মঘাতী বোমারু বলেই দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হয়। আর এখানেই আত্মঘাতী বোমারু বা হামলা নিয়ে ভুল ধারণা সমাজের।’’ উমরের এই ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসার পরই হুলস্থুল পড়ে গিয়েছে।
তদন্তকারীদের সন্দেহ, বিস্ফোরণের আগে এই ভিডিয়ো করেছিলেন উমর। আর এই ভিডিয়োর মাধ্যমে মগজধোলাইয়ের চেষ্টা করা হয়েছিল। প্রসঙ্গত, গত ১০ নভেম্বর লালকেল্লার সামনে গাড়িবোমা বিস্ফোরণ হয়। সেই বিস্ফোরণে এখনও পর্যন্ত ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে অভিযুক্ত চিকিৎসক উমরেরও। জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামার কোলি গ্রামের বাসিন্দা উমর। তাঁর আত্মীয়-পরিচিতদের দাবি, খুব শান্ত স্বভাবের এবং স্বল্পভাষী ছিলেন তিনি। পড়াশোনা নিয়েই বেশি সময় কাটাতেন। কিন্তু তদন্তকারীদের একটি সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক উমরের আচরণে অনেক বদল এসেছিল। ৩০ অক্টোবর থেকে আল ফালাহ্ বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ফরিদাবাদ থেকে দিল্লি মাঝেমধ্যেই যাতায়াত করতেন। বিভিন্ন মসজিদে গিয়েছিলেন। রামলীলা ময়দান, সুনহড়ী মসজিদেও যান। কিন্তু ৯ নভেম্বর থেকে বেপাত্তা হয়ে যান। ঘটনাচক্রে, ওই দিনই ফরিদাবাদ থেকে ২৯০০ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার হয়।