E-Paper

অপারেটরকে নিয়ে ঘটনাস্থলে এনআইএ

পহেলগামের বৈসরনে নাশকতার এক সপ্তাহ পরে জোরদার তল্লাশি চলছে গোটা উপত্যকা জুড়ে। সাধারণ মানুষ এবং পর্যটকদের স্বার্থে রাজ্যে ৪৮টি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

সাবির ইবন ইউসুফ

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৪৭

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

পহেলগামে গত ২২ এপ্রিল সন্ত্রাসবাদী হামলার সময়ে জ়িপলাইন থেকে গোটা এলাকার ভিডিয়ো করছিলেন গুজরাতের পর্যটক ঋষি ভাট। সেই ভিডিয়োয় নাশকতার ঘটনা যেমন ধরা পড়েছে, তেমনই জ়িপলাইন অপারেটরকে ধর্মীয় ধ্বনি দিতে শোনা গিয়েছে। আজ সেই জ়িপলাইন অপারেটরকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র আধিকারিকেরা। পহেলগামের বৈসরনে নাশকতার এক সপ্তাহ পরে জোরদার তল্লাশি চলছে গোটা উপত্যকা জুড়ে। সাধারণ মানুষ এবং পর্যটকদের স্বার্থে রাজ্যে ৪৮টি পর্যটনকেন্দ্র বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। বৈসরনের স্থানীয় লোকেরা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, গত কয়েকমাস ধরে বৈসরন কার্যত অরক্ষিতই ছিল। দেখা যায়নি নিরাপত্তা বাহিনী এবং পুলিশকে।

সপরিবারে বৈসরনে গিয়েছিলে ঋষি। জঙ্গিহামলার ঘটনার কথা বলতে গিয়ে তিনি জানিয়েছেন, তিনি জ়িপলাইনে ওঠার আগে তাঁর স্ত্রী-পুত্র এবং কিছু পর্যটক সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন। তিনি যখন জ়িপলাইনের মাঝপথে, তখন অপারেটর মুজ়ামিলকে ধর্মীয় ধ্বনি দিতে শোনেন এবং সঙ্গে সঙ্গে গুলির শব্দ শুনতে পান। বিপদের আঁচ করে ঋষি জ়িপলাইন থামান এবং প্রায় ১৫ ফুট উপর থেকে লাফ দ়েন। এবং পরিবারের বাকি সদস্যদের নিয়ে কোনও মতে এলাকা ছেড়ে পালান। অপারেটর মুজ়ামিল বর্তমানে পুলিশি হেফাজতে। এনআইএ-র তদন্তকারীরা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। মুজ়ামিলের বাবা আব্দুল আজ়িজ আজ বলেন, ‘‘ওই সময় আমার ছেলে এতটাই ভয় পেয়েছিল যে কেঁদে ফেলেছিল। বলেছিল, ‘এখানে কিছু একটা হচ্ছে’।’’ ধর্মীয় ধ্বনি মুজামিল কেন দিয়েছিলেন, তা জিজ্ঞাসা করা হলে আজ়িজ় বলেন, ‘‘ঝড় এলেও তো আমরা ওই ধ্বনিই দিই। এতে দোষের কী!’’ মুজ়ামিলকে নিয়ে আজ ঘটনাস্থলে যান এনআইএ-র তদন্তকারীরা। সূত্রের খবর, ওই জ়িপলাইন অপারেটরকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে তদন্তকারীরা জানতে চেয়েছেন, হামলার সময় তিনি কোথায় ছিলেন? কী কী দেখেছেন? জঙ্গিরা কোন পথে পালিয়ে গিয়েছে?

মুজ়ামিলকে জিজ্ঞাসাবাদ করা ছাড়াও স্থানীয় এক ব্যক্তির সঙ্গেও কথা বলেছেন তদন্তকারীরা। ওই ব্যক্তি নিজেকে স্থানীয় ফোটোগ্রাফার বলে পরিচয় দিয়েছেন। হামলার সময় ঘণ্টাখানেক গাছে উঠে ছিলেন তিনি। ঘটনার দিন কী হয়েছিল তা পুনর্নির্মাণের জন্য ওই ব্যক্তিকে আজ বৈসরনে নিয়ে যায় এনআইএ। তাঁর মোবাইল ফোনটি তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন। প্রাথমিক তদন্তে এখনও পর্যন্ত জানা গিয়েছে, ওই দিন বৈসরনে এক হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছিল। যদিও কর্তৃপক্ষ সংখ্যাটি খতিয়ে দেখছেন। জঙ্গি হামলার সময় ওই মাঠে কমপক্ষে ৫০০ পর্যটক ছিল বলে অনুমান। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ‘‘হামলার পরে স্থানীয় বাসিন্দারা যে ভাবে সাহায্য করেছেন, তা তারিফযোগ্য। না হলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ত।’’ জানা গিয়েছে, জঙ্গিরা বেড়া টপকে মাঠে ঢুকে ছিল, হত্যালীলা চালিয়ে ওই পথেই তারা জঙ্গলে ঢুকে যায়।

বৈসরনে হামলার পরে পর্যটকদের উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করা স্থানীয়েরা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, গত কয়েকমাসে বৈসরনে নিরাপত্তার কোনও ব্যবস্থা ছিল না। তারা বলেছেন, '‘‘বেতাব ভ্যালি, আরু ও চন্দনওয়ারির মতো জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রে নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন থাকে, সেখানে পহেলগাম বাজার থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এবং মূলত পায়ে হেঁটে বা টাট্টু ঘোড়ায় পৌঁছনো যায় বৈসারন এলাকাটি কার্যত অরক্ষিতই ছিল।’’

পহেলগাম হামলার পরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জম্মু-কাশ্মীরের ৮৭টি পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে ৪৮টি বন্ধ রাখা হয়েছে। পর্যটন বিভাগ জানিয়েছে, মূল পর্যটনস্থলগুলি স্বাভাবিক রয়েছে এবং সেখানে পর্যটকেরা যাচ্ছেন। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘পহেলগাম, গুলমার্গ, সোনমার্গ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য খোলা ও নিরাপদ রয়েছে। পর্যটকরা অবাধে চলাফেরা করছেন এবং তাঁদের নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ সূত্রের খবর, পহেলগামে হামলার পরে পর্যটকের সংখ্যা অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। ২৩ এপ্রিল, বিমানবন্দরে মোট ১১২টি ফ্লাইটে ১৭,৬৫৩ জন যাত্রী ছিলেন। ২৪ এপ্রিল তা কমে দাঁড়ায় ১৫,৮৩৬ জনে এবং ২৫ এপ্রিল আরও কমে ১৪,০৪১ জনে পৌঁছায়। যদিও ২৬ এপ্রিল সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছিল। ওই দিন ১০৬টি নির্ধারিত ফ্লাইটে ১৪,৭৮৩ জন যাত্রী ছিলেন।

তবে কয়েকটি অতিরিক্ত ফ্লাইটে যাত্রী সংখ্যা ছিল খুবই কম। গত এক সপ্তাহে উপত্যকায় এক হাজারের বেশি বাড়িতে হানা দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

National Investigation Agency Pahalgam Terror Attack

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy