Advertisement
০৬ মে ২০২৪

চমক নেই, পুজোয় ভরসা ভক্তিই

ডিমা হাসাও জেলার সদর হাফলঙে বেশ ক’টি বড় পুজো হয়। কয়েক মাস ধরে আলোচনা চলে আয়োজকদের, কী চমক দেওয়া যায় এ বার। কমিটি গঠন, চাঁদা আদায়, মণ্ডপ-প্রতিমা তৈরি সবেতেই হৈহৈরৈরৈ। ব্যতিক্রম রামকৃষ্ণ সেবা সমিতি।

বিপ্লব দেব
হাফলং শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:২৫
Share: Save:

ডিমা হাসাও জেলার সদর হাফলঙে বেশ ক’টি বড় পুজো হয়। কয়েক মাস ধরে আলোচনা চলে আয়োজকদের, কী চমক দেওয়া যায় এ বার। কমিটি গঠন, চাঁদা আদায়, মণ্ডপ-প্রতিমা তৈরি সবেতেই হৈহৈরৈরৈ। ব্যতিক্রম রামকৃষ্ণ সেবা সমিতি। চমকের ভাবনা নেই। তবু দর্শক টানে সবচেয়ে বেশি। সকাল-দুপুর-সন্ধ্যা ভক্তবৃন্দের আনাগোনা লেগেই থাকে। এত বড় আয়োজন, কিন্তু প্রস্তুতিতে হাঁকডাক নেই। সব কিছু এগিয়ে চলে নিজস্ব ছন্দে।

আকর্ষণের বিশেষ চেষ্টা না করলেও এ বার আকর্ষণীয়ই হয়ে উঠছে রামকৃষ্ণ সেবা সমিতির পুজো। কথায় কথায় আসছে কলকাতার এটা, কলকাতার ওটা। পুরোহিত আসবেন পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী-শহর থেকে। ঢাকির দলও সেখানকার। এমনকী, পুজোর যাবতীয় উপকরণ এই বছর কলকাতা থেকে আনা হচ্ছে। সব চেয়ে বড় কথা, পুজোর ক’দিন এখানেই থাকবেন বেলুড় মঠের স্বামী দেবাত্মানন্দ মহারাজ। তাঁরই তত্ত্বাবধানে শারদোৎসব হচ্ছে পাহাড় ঘেরা হাফলঙের সেবা সমিতিতে। আর সে সুবাদেই বারবার আসছে সুদূর কলকাতার কথা। আসলে বেলুড় মঠ থেকেই পুরোহিতের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ঢাকির সন্ধান মিলেছে ওই একই সূত্রে।

এর আগে কলকাতার ঢাকির দল হাফলঙে বাজায়নি কখনও। হাফলং রামকৃষ্ণ সেবা সমিতির সচিব বিক্রমজিত চৌধুরী জানান, হাফলঙে সমিতি স্থাপিত হয় ১৯৪৫ সালে। শুরুতে ঘট পুজো হতো। নিজস্ব জায়গা-জমি না থাকায় জগন্নাথ মন্দিরের প্রতিমার পাশেই তাঁদের ঘট বসানো হতো। পাহাড়ি টিলার ওপর ২২ বিঘা জমিতে নিজস্ব নাটমন্দির তৈরির পর মূর্তি পূজা শুরু হয়। সেটা ১৯৫৬ সাল। শুরু থেকেই এক চালার দেবী দুর্গা, সঙ্গে পুত্র-কন্যারা। আজও সেই ধারা অব্যাহত।

তাঁর কথায়, আমাদের পুজোর বিশেষত্ব হল, পুরো শাস্ত্রীয় মতে সাত্ত্বিকতা, নিষ্ঠা ও সময়সূচি মেনে দেবীর আরাধনা করা। পুজোর তিনদিন দুপুরে মহাপ্রসাদের ব্যবস্থা করা হয়।

দুর্গোৎসব উপলক্ষে কমিটি গঠন, চাঁদা আদায় সবই রয়েছে সেবা সমিতির। কিন্তু পদ পেতে হুড়োহুড়ি বা চাঁদা দিয়ে দরাদরি, কোনওটাই নেই এখানে। এ বার পুজো কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন যথাক্রমে প্রভাস রঞ্জন দে ও নির্মলেন্দু দে।

প্রভাসবাবু জানান, ‘‘কোনও কালেই আমরা আড়ম্বরে গুরুত্ব দিইনি। নিয়ম-নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো হওয়া চাই, এটাই আমাদের প্রথম ভাবনা। এ ছাড়া বেলুড় মঠ থেকে মহারাজ আসছেন, এও এ বারের পুজোয় আমাদের কাছে বিশেষ পাওনা। এখানে স্থায়ী মহারাজ না থাকলেও বেলুড় মঠ থেকে প্রায়ই মহারাজরা আসেন। তবে দুর্গোৎসবে মহারাজকে কাছে পাওয়া, কমই ঘটে।

মনোরম পরিবেশে সেবা সমিতি এমনিতেই আকর্ষণীয় স্থল। রয়েছে ছাত্রাবাস, গ্রন্থাগার। নিজস্ব পার্কও রয়েছে তাদের। সরকারি অর্থে পরিকাঠামো গড়ে ওঠার পর দেখভালের দায়িত্ব পালন করে সেবা সমিতিই। রয়েছে অত্যাধুনিক সুবিধা-সহ একটি অতিথিশালাও।

প্রভাসবাবু অবশ্য পুজোর শুরুর দিনগুলি থেকে এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন। বলেন, এত পুরনো পুজোয় পরিবর্তনের আঁচ একেবারে লাগেনি বলা যায় না। আগে সমস্ত কাজ ভক্তমণ্ডলী করতেন। বাইরের লোক লাগানোর ব্যাপার ছিল না। এখন অবশ্য অন্যদের দিয়েই বহু কাজ করানো হয়। মুখপত্র প্রকাশের ব্যাপারটিও খুব বেশিদিন হয়নি। এ বারও ষষ্ঠীর দিন সন্ধ্যায় উন্মোচন করা হবে সেবা সমিতির মুখপত্র ‘সমর্পণ’। এ ছাড়া, ছাত্রাবাসের শতাধিক ছাত্রের সবাইকে নতুন জামা-কাপড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে পুজোর বাজেট
সাড়ে পাঁচ লাখ টাকা, জানিয়েছেন পুজোর কর্মকর্তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Durga puja Pandel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE