Advertisement
E-Paper

বসুন্ধরা আর কত দিন মসনদে, উঠছে প্রশ্ন

ললিত মোদী বিতর্কে পিচ নড়বড়েই ছিল তাঁর জন্য। এত দিন সকলকে ঠেকিয়ে রাখছিলেন একটাই যুক্তি দিয়ে— তাঁর সই করা নথি তো মেলেনি! বুধ সন্ধ্যায় সেই ‘গোপন হলফনামা’টি প্রকাশ করল কংগ্রেস। তার পর থেকে বিরোধীদের এখন একটাই প্রশ্ন: এর পরেও বসুন্ধরা রাজে রাজস্থানের মসনদে থাকেন কী করে?

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৫ ০৩:৪৭

ললিত মোদী বিতর্কে পিচ নড়বড়েই ছিল তাঁর জন্য। এত দিন সকলকে ঠেকিয়ে রাখছিলেন একটাই যুক্তি দিয়ে— তাঁর সই করা নথি তো মেলেনি! বুধ সন্ধ্যায় সেই ‘গোপন হলফনামা’টি প্রকাশ করল কংগ্রেস। তার পর থেকে বিরোধীদের এখন একটাই প্রশ্ন: এর পরেও বসুন্ধরা রাজে রাজস্থানের মসনদে থাকেন কী করে?

কংগ্রেসের নতুন স্পিনে বিজেপিও চূড়ান্ত অস্বস্তিতে। সদ্য আজ দুপুরে ঘটা করে সাংবাদিক বৈঠকে বিজেপি নেতৃত্ব বলেছেন, ‘‘এই সরকার ইউপিএ-র মতো কুকীর্তি করে না।’’ তার পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এমন গোলায় ক্ষতবিক্ষত শাসক দল এখন এক গলা জলে। তাঁদের সামনে সব থেকে বড় প্রশ্ন, বসুন্ধরাকে নিয়ে কী করা হবে এখন? তবে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করলেও যে বিরোধীরা শান্ত হবে, এমনটা নয়। ফলে সিদ্ধান্ত যা-ই হোক না কেন, আসন্ন সংসদ অধিবেশনে ঝড় উঠবেই— এটা ভাল করেই বুঝতে পারছেন তাঁরা।

কী ফাঁস হল বসুন্ধরার? ললিত মোদী পর্ব শুরু হয় সুষমা স্বরাজকে দিয়ে। অভিযোগ, মোদী যাতে তাঁর অসুস্থ স্ত্রীর সঙ্গে পর্তুগালে চিকিৎসার জন্য যেতে পারেন, সে জন্য তাঁকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট দিতে ব্রিটিশ কর্তপক্ষকে অনুরোধ করেন সুষমা। তার পরপরই জানা যায়, চার বছর আগে একই ভাবে ললিত মোদীর যাবতীয় অভিবাসন সংক্রান্ত ছাড়পত্রকেই সমর্থন জানিয়েছিলেন বসুন্ধরা রাজে। এখানেই শেষ নয়। তিনি শর্ত দেন, এই সব কথা যেন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানতে না পারেন।

অভিযোগ ওঠার পরে বসুন্ধরা বলেছেন, এই নথিতে কোথাও তাঁর সই নেই। নথিটি সম্পর্কে তিনি কিছুই জানতেন না বলেও দাবি করেন। দলের প্রশ্নের জবাবেও তিনি বলেছিলেন, তাঁর সই করা গোপন হলফনামাটি এখনও পাওয়া যায়নি। বস্তুত, এই যুক্তিতেই তাঁর প্রতি যাবতীয় চাপ ঠেকিয়ে রেখেছিলেন বসুন্ধরা। ঠেকিয়ে রেখেছিলেন নিজের অপসারণও।

আজ বসুন্ধরার সেই যুক্তির দেওয়াল ধসিয়ে দিল কংগ্রেস। সন্ধ্যায় এআইসিসি দফতরে তড়িঘড়ি সাংবাদিক বৈঠক করে জয়রাম রমেশ প্রকাশ করেন ২০১১ সালের ১৮ অগস্টের সেই নথি। সাত পাতার সেই হলফনামায় একাধিক বিস্ফোরক কথা বলেছেন বসুন্ধরা। বলেছেন, আমার কোনও সন্দেহ নেই, ললিতের বিরুদ্ধে যে আক্রমণ চলছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বলেছেন, আমার সঙ্গে ললিতের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্যই ও কংগ্রেসের কাছে শত্রু। বলেছেন, ওর (ললিতের) প্রতি ভারতে যে আক্রমণ চলছে, তা ওর সুনাম ধ্বংস করতেই। একই সঙ্গে বলেছেন, এই হলফনামার কথা যেন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানতে না পারেন।

বিজেপির দুর্গে এই গোলা যে কতটা জোরে আঘাত করেছে, সেটা তাদের মুখে কুলুপ এঁটে ফেলা থেকেই স্পষ্ট। সন্ধ্যার পরে কেন্দ্রীয় কোনও নেতাকেই মুখ খুলতে দেখা যায়নি। তবে দলীয় স্তরে বসুন্ধরার কাছে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছে। বসুন্ধরাও যে কতটা বেকায়দায়, সেটা বোঝা গিয়েছে, লন্ডন সফর বাতিলের ঘোষণায়। তিন দিন পরে তাঁর লন্ডন যাওয়ার কথা ছিল। শিল্পমহলের সঙ্গে বৈঠক করতে। কিন্তু আজ রাতে সেই সফর বাতিল করা হয়েছে। বলা হচ্ছে, ওই সময় নীতি আয়োগের জরুরি বৈঠক রয়েছে। কিন্তু বিজেপির আনাচেকানাচেই শোনা যাচ্ছে অন্য কথা। অনেকে বলছেন, এই নথি প্রকাশের পরে তাঁর মসনদ থাকবে কি না, তাই এখন ঘোর সংশয়ে। তাই নীতি আয়োগের বৈঠকের নামে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাইছেন। কারও কারও কটাক্ষ, ললিত মোদীও তো লন্ডনেই থাকেন। এর পরে আর সেখানে যেতে পারেন বসুন্ধরা!

এখন প্রশ্ন, বিজেপি কি বসুন্ধরাকে সরানোর ব্যাপারে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেবে? বিজেপি শীর্ষ সূত্রের মতে, তিনটি কারণে তারা আপাতত অপেক্ষা করতে চায়। প্রথমত, এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ফলাও করে বলেছিলেন, তাঁর সরকার দুর্নীতি-অনিয়মের মতো বিষয়গুলি অভিধান থেকে মুছে দিয়েছে। এমনকী, আজও রাজনাথ সিংহ ও রবিশঙ্কর প্রসাদ মিলে জোর গলায় বোঝাতে চান, তাঁরা ইউপিএ সরকারের মতো দুর্নীতি করেন না। তাঁদের মন্ত্রীরা কথায় কথায় ইস্তফাও দেন না। এর পরে এখনই বসুন্ধরাকে সরালে নিজেদের কথাকেই অস্বীকার করতে হয়। দ্বিতীয়ত, বসুন্ধরাকে এখনই সরিয়ে দেওয়া হলেও বিরোধীরা শান্ত হয়ে বসে থাকবে না। সংসদে যে ধুন্ধুমার হবে, তার ইঙ্গিত এর মধ্যেই মিলতে শুরু করেছে। বরং এর পরে তারা একে একে সুষমা স্বরাজ, স্মৃতি ইরানির ইস্তফা দাবি করবে। তৃতীয়ত, জোর করে বসুন্ধরাকে সরাতে গেলে তিনি বিদ্রোহী হয়ে যাবেন, এই আশঙ্কাও আছে। রাজস্থানে বিজেপি ভেঙে গেলে তার খেসারত দিতে হবে দলকেও।

আজ এই ঘটনা সামনে আসার পরেই বসুন্ধরার দুই ঘনিষ্ঠ নেতা রাজেন্দ্র রাঠৌর ও অশোক পারমানি জয়পুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, ‘‘এই নথি এখনও খতিয়ে দেখতে হবে। কোন প্রেক্ষিতে ওই নথি দেওয়া হয়েছিল, সেটিও বুঝতে হবে। বসুন্ধরার পাশে দল রয়েছে, সব বিধায়কও আছেন।’’ এই সাংবাদিক বৈঠকের পরেই বিজেপি কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব বুঝতে পারেন, এখনই বসুন্ধরাকে সরালে রাজস্থানে দলে বিদ্রোহ হয়ে যাওয়ার সমূহ আশঙ্কা।

সে জন্য তাঁরা এখন বল ঠেলে দিয়েছেন বসুন্ধরারই কোর্টেই। দলের বর্তমান অবস্থান জানিয়ে মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, ‘‘এই নথি সঠিক কি না, তা একমাত্র বসুন্ধরা রাজেই বলতে পারবেন।’’ অর্থাৎ, দল চাইছে যে বসুন্ধরা এত দিন নথি নেই বলে নিজের অপসারণ ঠেকিয়ে রেখেছিলেন, সেই বসুন্ধরাই আত্মপক্ষ সমর্থনে এগিয়ে আসুন। তিনিই দলকে জানান, এই নথি ভুয়ো কি না?

বিজেপি সূত্রের মতে, আপাতত এই নথি ‘ভুয়ো’ বা এর প্রেক্ষিত ‘ভিন্ন’ বলে যুক্তি তৈরির চেষ্টা করছেন বসুন্ধরা। আর দল তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করছে, এই যুক্তি যদি ঠিক না হয়, তবে চলে যাওয়া ছাড়া গতি নেই তাঁর।

বিরোধীরাও বুঝিয়ে দিয়েছেন, বসুন্ধরা-সুষমা-স্মৃতি নিয়ে তাঁরা কোনও ভাবেই চাপ কমাবেন না। রক্তের স্বাদ পেয়ে যাওয়া কংগ্রেস আসন্ন বাদল অধিবেশনে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্যও তৈরি হচ্ছে। তার ইঙ্গিত দিয়ে জয়রাম এ দিন বলেন, ‘‘তিন জনের ইস্তফার দাবি নিয়ে কংগ্রেস কোনও রকম আপস করবে না। এক এক করে সব ইস্তফা দিতে হবে। একেবারে টিভি সিরিয়ালের মতো।’’ তাঁর কথায়, আজকের পর বসুন্ধরার ইস্তফার দাবি রইল পয়লা নম্বরে। দু’নম্বরে থাকলেন বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। আর তিন নম্বরে স্মৃতি ইরানি!

Vasundhara Raje Lalit Modi Released BJP Narendra Modi
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy