যুদ্ধ যুদ্ধ হাওয়ায় শান্তির ডাক দিচ্ছে দিল্লির পুজো

সীমান্তে রোজই যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাব। দিল্লির পুজোয় কিন্তু শান্তির আবহ।

উরির ঘটনা না হয় হালের। কিন্তু বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসের আবহ তো আর নতুন নয়। তাই অনেক মাস আগে থাকতেই দিল্লির পুজো কর্তাদের অনেকেই ভেবে রেখেছিলেন, এ বারের থিম হোক শান্তিরই। থিম-পুজোর ছোঁয়াচ কলকাতার গন্ডি পেরিয়ে প্রবাসে দিল্লিতেও পড়েছে অনেক বছর আগে। কলকাতাকে টেক্কা দেওয়ার তাগিদ সব সময়ই কাজ করে দিল্লির বাঙালির মনে। আর এখন এই শান্তির থিম তো সন্ত্রাস হামলা আর যুদ্ধ-যুদ্ধ ভাবে আরও মানানসইও হয়ে উঠেছে।

সফদরজঙ্গ এনক্লেভের মাতৃমন্দিরের পুজো। সদ্য কাল রাতেই বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ঢাক বাজিয়ে পুজোর উদ্বোধন করে এসেছেন। সঙ্গে ছিলেন বাংলার মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়। ভিড়ের অনুরোধে ‘না’ ‘না’ করেও শেষপর্যন্ত ‘বস’ অমিত শাহের সামনে দু’কলি গেয়ে শোনাতেও হয়েছে। এই পুজোরও এ বারের থিম ‘বিশ্ব শান্তি’। পুজো উদ্বোধনে চলে এসেছেন আধাসামরিক বাহিনী সিআরপিএফ-এর অতিরিক্ত ডিজি দীপক মিশ্রও। কিন্তু কেন? পুজো সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেবাশিস সাহা জানালেন, “যখন সমস্ত বিশ্ব জুড়ে সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিচ্ছে, মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে, তখন আমরা আমাদের পুজোর সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষে থিম হিসাবে বিশ্ব শান্তিকে বেছে নিয়েছি। মা দুর্গা মহিষাসুর বধের মধ্যে দিয়ে বিশ্বে শান্তি ফিরিয়ে আনুন, এটাই আমাদের মনোকামনা।’’

অন্য দিকে করোলবাগের পুজো সমিতির থিমও বিশ্ব শান্তি। শান্তির বার্তা দিতে তারা আবার আশ্রয় নিয়েছে মা টেরিজায়। সদ্য মা টেরিজা সন্ত হয়ে উঠেছেন। মহা আড়ম্বরে তাঁর সন্ত হয়ে ওঠা চাক্ষুষ করেছে গোটা দুনিয়া। মণ্ডপে সেটিই ফুটিয়ে তুলেছে করোলবাগ। পুজো সমিতির কর্ণধার দীপক ভৌমিকের কথায়, ‘‘মা টেরিজার সন্ত হয়ে ওঠার সময়ই আমরা ভেবেছি, এটাই সেরা থিম হতে পারে। তখন থেকেই মাথায় ঘুরছিল বিশ্ব শান্তির থিম। তার উপর আমাদের পুজো এ বারে ৭৫ বছরে পা দিল। ফলে সব দিক থেকেই এ বারের পুজোর গুরুত্ব আমাদের কাছে অনেক বেশি।’’

করোলবাগের পুজোয় সাদা ছাতা দিয়ে মণ্ডপ।

পুজোর মধ্যে সন্ত্রাস হামলা হতে পারে, এমন সতর্কতা আগেই জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সব মণ্ডপেই তাই বাড়তি নিরাপত্তা। মণ্ডপের আসা-যাওয়ার পথেও লাগানো হয়েছে পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর বেষ্টনী। সীমান্তে যুদ্ধ না হোক, রাজনীতিকদের মুখে মুখে যুদ্ধের জিগির থামার নাম নেই। কিন্তু মণ্ডপে ঢুকলেই শান্তির বার্তা। মাতৃমন্দিরের মণ্ডপ তৈরি হয়েছে প্যারিসের জাতীয় অপেরা হাউসের অনুকরণে। মণ্ডপের রঙ লাল আর সোনালি। মণ্ডপের দুটি মেন গেট প্যারিসের বিখ্যাত মনুমেন্ট ‘আর্চ দ্য থরমিফ’ এর অনুকরণে তৈরি হয়েছে। গত বছরের প্যারিস অ্যাটাকের কথা মাথায় রেখেই এই মণ্ডপ সজ্জা। সন্ত্রাসবাদের কাছে আহত হয়েও প্যারিসের ঘুরে দাড়ানোর লড়াইকে সম্মান জানানোর জন্য এভাবে তাদের পাশে থাকছে রাজধানীর এক পুরনো পুজো। অন্যদিকে করোলবাগের পুজোয় বিশ্ব শান্তির কথা মাথায় রেখে সাদা ছাতা দিয়ে মণ্ডপ সজানো হয়েছে, এর সঙ্গে মণ্ডপের বাইরে সাদা পায়রা হাতে মাদার টেরিসার মূর্তিও দেখা যাচ্ছে। পাটের উপর রঙিন ছবির কাজও রয়েছে এই মণ্ডপে। এখানকার মণ্ডপ তৈরি করতে বাঁকুড়া থেকে শিল্পী এসছেন। মাতৃমন্দিরের দুর্গা প্রতিমা প্রাথমিক ভাবে কলকাতায় তৈরি হলেও ‘ফিনিসিং টাচ’ পড়েছে রাজধানীতেই। অন্যদিকে করোলবাগের পুজোর প্রতিমা তৈরি হয়েছে পুজোমন্ডপেই।