অজিত ডোভাল। ফাইল চিত্র।
সকাল সাড়ে দশটা। দিল্লির আকবর রোডে অমিত শাহের বাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের গাড়ি। ১১টার কিছু পরেই বেরিয়ে গেলেন ডোভাল। তখন অবধি জানা ছিল, বেলা ১২টায় জম্মু-কাশ্মীরের বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করবেন বিজেপি সভাপতি। কিন্তু জানা ছিল না যে, ওই বৈঠকের দু’ঘণ্টার মধ্যে জম্মু-কাশ্মীরে জোট সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেবে বিজেপি। যে সিদ্ধান্তের পরে বিরোধীরা সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন, কাশ্মীরে ডোভালের নীতি পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।
বেলা সওয়া দু’টোয় বিজেপি নেতা রাম মাধব জানালেন, কাশ্মীরে পরিস্থিতি অসহনীয় হয়ে পড়ায়, সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেওয়া ছাড়া রাস্তা নেই। তিনি যেটা বলেননি সেটা হল, এর পর রাজ্যপালের শাসনের মাধ্যমে খোলা হাতে পরিস্থিতি সামলাবে কেন্দ্র। জঙ্গি দমনে নেওয়া হবে সর্বাত্মক পদক্ষেপ। সব ধরনের ছাড় দেওয়া সেনাকে। কড়া হাতে দমন করা হবে ভারত বিরোধিতাকে। জম্মু-কাশ্মীরের রাজ্য বিজেপি সভাপতি রবীন্দ্র রাইনা বুক বাজিয়ে বলেন, ‘‘এখন অল আউট অভিযানের সময়। আর কোনও প্রশয় নয় জঙ্গি বা তাদের সমর্থকদের।’’
বিজেপির সিদ্ধান্তের পরে কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ প্রশ্ন তোলেন ‘‘কাশ্মীর প্রশ্নে ডোভালের দমননীতি সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তা সত্ত্বেও কেন সেই ডোভাল মতবাদে ভরসা রাখছেন মোদী-শাহেরা?’’ পি চিদম্বরমের মতে, ‘‘সামরিক পেশিশক্তি প্রদর্শনে কোনও কাজ হবে না।’’ কংগ্রেসের দাবি, দমননীতির কারণে কাশ্মীরের বহু যুবক আজ অন্ধ। উপত্যকায় সন্ত্রাস বেড়ে থাকলে ডোভাল দায় এড়াতে পারেন না। সেনাকে অভিযানে সব ধরনের ছাড় দিলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি নিয়ে হইচই হতে পারে বলে আশঙ্কায় বিজেপি। তাই জম্মুর বিজেপি নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ জোর দেন অভিযানে ভারসাম্য রাখার উপরে।
জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভা
আসন ৮৯ (৮৭, মনোনীত ২)
• পিডিপি ২৮
• বিজেপি ২৫
• ন্যাশনাল কনফারেন্স ১৫
• কংগ্রেস ১২
• অন্যান্য ৭
আপাতত কেন্দ্রের পাখির চোখ হল ২৮ জুন থেকে শুরু হওয়া অমরনাথ যাত্রা নির্বিঘ্নে উতরে দেওয়া। তা করতে গেলে সেনার হাতে সব দায়িত্ব তুলে দেওয়া ছাড়া রাস্তা ছিল না। জম্মু-কাশ্মীরের সংযুক্ত কম্যাণ্ডের দায়িত্ব আজ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবার হাতে থাকলেও, এ বার তা চলে এল রাজ্যপাল এম এন ভোরার কাছে। বকলমে কেন্দ্রের হাতে। তাই ভোরার অবসর চলতি মাসে হলেও, তাঁকে যাত্রা পর্যন্ত রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। আজ বিকেলে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহের সঙ্গেও বৈঠকে বসেন ডোভাল। উপস্থিত ছিলেন আধাসেনা প্রধানরাও। পরে রাজনাথ বলেন, ‘‘রোজা রেখেছেন এমন ব্যক্তির উপরে গুলি চালানো মানবতাবিরোধী।’’ অনেকের মতে, রমজানের পরে অভিযান শুরুর সিদ্ধান্তের পক্ষেই যুক্তি দেন তিনি।
আরও পড়ুন: মেহবুবার হাত ছাড়ল বিজেপি, উপত্যকায় চলবে রাজ্যপালের শাসন
সেনা জানিয়েছে, গত এক মাসে অভিযান বন্ধ থাকায় ফের উপত্যকায় জঙ্গিদের সক্রিয়তা বেড়ে গিয়েছে। তাই এলাকা দখলে ফের গোটা কাশ্মীর জুড়ে শুরু হয়েছে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি। যার সুফল মিলেছে আজ ত্রালে। নিহত হয়েছে তিন জঙ্গি। অতিরিক্ত নজরদারি থাকছে অমরনাথ যাত্রার পথে। যাত্রাপথ নিশ্ছিদ্র করতে ত্রিস্তরীয় সুরক্ষা বলয় তৈরি করা হচ্ছে। সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে সীমান্তেও। প্রয়োজনে ভাবা হচ্ছে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের বিষয়টিও।
এ যাবৎ বিজেপি জোট সরকারে থাকায় যে কোনও ব্যর্থতার দায়ভার ছিল অর্ধেক। কিন্তু এখন থেকে উপত্যকায় সন্ত্রাস দমনে ব্যর্থতার দায় কেবল কেন্দ্রের। তাই মেপে পা ফেলতে চাইছে সতর্ক কেন্দ্র।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy