পাকিস্তানের জঙ্গি শিবিরে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালানোর পরে আজ রাজধানীতে সব রাজনৈতিক দলের সংসদীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। সূত্রের খবর, বৈঠকে রাজনাথ রাজনৈতিক দলের নেতাদের জানিয়েছেন, সামরিক বাহিনীর অভিযানে একশোরও বেশি জঙ্গি নিহত হয়েছে। তবে যে হেতু এখনও অভিযান চলছে,তাই নির্দিষ্ট সংখ্যা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি রাজনাথ এ কথাও স্পষ্ট করে দেন যে, ভারতসংঘাতে উস্কানি দিতে চায় না। কিন্তু পাকিস্তান আঘাত করলে প্রত্যাঘাতের অধিকার রয়েছে ভারতের। সর্বদলীয় বৈঠকে রাজনাথ বলেন, পাকিস্তান সেনা বিনা প্ররোচনায় গুলি চালাচ্ছে। ভারতীয় জওয়ানেরা উপযুক্তজবাব দিচ্ছেন।
বৈঠকের পরে সংসদীয় মন্ত্রী কিরেন রিজিজু সাংবাদিকদের বলেন, “প্রতিরক্ষামন্ত্রী সমস্ত নেতাকে অপারেশন সিঁদুর সম্পর্কে বিশদে জানিয়েছেন। প্রত্যেক নেতা দায়িত্ববান এবং পরিণত মতামত জানিয়েছেন। দেশ এই মুহূর্তে যে বড় চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে, সে কথা প্রত্যেকেই স্বীকার করেছেন। দলমত নির্বিশেষে জানানো হয়েছে, দেশের এই সঙ্কটের সময়ে রাজনীতির কোনও অবকাশ নেই। প্রত্যেক নেতা একসঙ্গে অপারেশন সিঁদুরের সাফল্যের জন্য সেনাবাহিনীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। কোনও বিরুদ্ধমত ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ কিছু পরামর্শও বৈঠকে উঠে এসেছে।”
আজকের সভায় রাজনাথ সুদীপকে জানিয়েছেন, তিনি তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংবাদিক সম্মেলন দেখেছেন। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মমতা যে কেন্দ্রের পাশে রয়েছেন, তাতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন রাজনাথ। বৈঠকে সুদীপ বলেছেন, “পাকিস্তানে তৈরি হওয়া ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সবাই ঐক্যবদ্ধ। এই সময়ে সবার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করা প্রয়োজন। পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনার অভিযানে সকলের সমর্থন রয়েছে। নবজাগরণ থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত দেশের জন্য বাংলা সর্বদাই প্রাণ দিয়েছে।”
এ দিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন-ও। লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী ও কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে, তৃণমূলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়রাও বৈঠকে মতামত দেন। পরে খড়্গে জানান, “এই সময়টা সঙ্কটের। কেন্দ্র দেশের মঙ্গলের জন্য যে কাজ করছে আমরা সবাই তার সঙ্গে রয়েছি। প্রতিরক্ষামন্ত্রী যা বলেছেন আমরা শুনেছি।আমরা চেয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রী আসুন, কিন্তু আমরা আজ এই নিয়ে কোনও সমালোচনা করতে চাই না।” রাহুল গান্ধী বলেছেন, “আমরা সরকারকে আমাদের পূর্ণ সমর্থন দিয়েছি।” বৈঠকের মধ্যে রাহুল জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি নিয়ে সংসদের একটি স্বল্পমেয়াদি অধিবেশন হলে ভাল হয়। তবে রিজিজুর বক্তব্য, “এই বিষয়টি নিয়ে কোনও আলোচনাবৈঠকে হয়নি।”
সিপিএমের রাজ্যসভার নেতা জন ব্রিটাসও জানিয়েছেন, এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী থাকলে ভাল হত। প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় বৈঠক ডাকুক এই দাবি করেছেন তিনি। সংসদীয় অধিবেশনের দাবি জানিয়েছে সিপিএম-ও। ব্রিটেসের কথায়, “নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘাত যেন না বাড়ে, বরং কমে আমরা তারই পক্ষে।” সীমান্তে সাধারণ মানুষের প্রাণ যাওয়া নিয়ে সিপিএম-সহ আরও অনেক দলই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আজকের বৈঠকে। আপ সাংসদ সঞ্জয় সিংহ বলেছেন, “গোটা দেশই সামরিক বাহিনীর এই অভিযানে গর্বিত।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)