E-Paper

‘অতিসক্রিয়’ ইডি, সিবিআই নিয়ে প্রশ্ন বিরোধীদের

বাজেট অধিবেশনের প্রথম পর্বে বিরোধীরা আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টকে হাতিয়ার করে সংসদে ঝড় তুলেছিল। আদানি নিয়ে প্রশ্নের মুখে প্রধানমন্ত্রী মোদী নীরব থাকারই কৌশল নিয়েছিলেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১২ মার্চ ২০২৩ ০৭:৫৬
Mallikarjun Kharge.

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে। ফাইল চিত্র।

প্রথমে দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়াকে গ্রেফতার। তার পরে রাবড়ি দেবী, লালুপ্রসাদ যাদবকে জিজ্ঞাসাবাদ। লালু-পুত্র তেজস্বী যাদবকে সমন পাঠানো। লালুর বাড়িতে তল্লাশি। তার পরে কে কবিতাকে সমন। গত ১৫ দিন ধরে কার্যত ঝড় তুলে দিয়েছে সিবিআই-ইডি।

কংগ্রেস-সহ গোটা বিরোধী শিবির মনে করছে, নরেন্দ্র মোদীর ঘনিষ্ঠ শিল্পপতি গৌতম আদানির বিরুদ্ধে প্রতারণা, শেয়ার দরে কারচুপির অভিযোগ, আদানি গোষ্ঠীকে মোদী সরকারের বিভিন্ন রকম সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ থেকে নজর সরাতেই সিবিআই-ইডি-কে মাঠে নামানো হয়েছে। কোনও দিন সিসৌদিয়ার গ্রেফতারি, কোনও দিন লালুপ্রসাদের বাড়িতে হানা, কোনও দিন কে কবিতার জিজ্ঞাসাবাদের খবর উঠে আসার ফলে আদানি-কাণ্ড থেকে প্রচারমাধ্যমের নজর সরে যাচ্ছে। মোদী সরকার ঠিক সেটাই চাইছিল। কংগ্রেসের একটা বড় অংশের নেতার তরফে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এর পরে ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় ইডি নতুন করে কংগ্রেস শীর্ষনেতাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সমন পাঠাতে পারে।

সোমবার থেকে সংসদের বাজেট অধিবেশনের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হতে চলেছে। চলতি পরিস্থিতিতে কংগ্রেস ও তার সহযোগী দলগুলি মনে করছে, সংসদে আদানি-কাণ্ডে জেপিসি তদন্তের দাবি তুলে ফের ‘নরেন্দ্র মোদী ও গৌতম আদানির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক’-র দিকে নজর ফিরিয়ে আনতে হবে। সেটাই আসল চ্যালেঞ্জ।

পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, সোমবার আদানি-কাণ্ড নিয়ে কংগ্রেস সমস্ত রাজ্যে রাজভবন ঘেরাও করবে। কংগ্রেসের সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত নেতা কে সি বেণুগোপালের বক্তব্য, গত পাঁচ দিনে গোটা দেশে ব্লক স্তরে এলআইসি, রাষ্ট্রায়্ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। কারণ আদানি-কেলেঙ্কারির জেরে এলআইসি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে গচ্ছিত মানুষের অর্থ সুরক্ষিত কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এর পর জেলা সদরগুলিতে মোদী-আদানি সম্পর্ক নিয়ে ‘পর্দাফাঁস’ জনসভা হবে। এপ্রিল মাসে প্রতিটি রাজ্যের রাজধানীতে বড় করে জনসভা হবে। রাহুল গান্ধীর ঘনিষ্ঠ শিবির থেকে কংগ্রেস নেতাদের বার্তা দেওয়া হয়েছে, বিজেপি যদি গান্ধী পরিবারের বিরুদ্ধে সিবিআই-ইডিকে মাঠে নামায়, রাহুলের বিরুদ্ধে নিয়মভঙ্গের অভিযোগে তাঁর সাংসদ পদ খারিজ করার চেষ্টা করে, তা হলেও পরোয়া করলে চলবে না।

বাজেট অধিবেশনের প্রথম পর্বে বিরোধীরা আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে হিন্ডেনবার্গ রিপোর্টকে হাতিয়ার করে সংসদে ঝড় তুলেছিল। আদানি নিয়ে প্রশ্নের মুখে প্রধানমন্ত্রী মোদী নীরব থাকারই কৌশল নিয়েছিলেন। বিরোধীদের যুক্তি, সংসদের অধিবেশন শেষ হতেই সিবিআই-ইডি মাঠে নেমেছে। ২৬ ফেব্রুয়ারি সিসৌদিয়াকে গ্রেফতার করেছে সিবিআই। ৬ ও ৭ মার্চ সিবিআই রাবড়ি, লালুকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ৯ মার্চ ইডি সিসৌদিয়াকে গ্রেফতার করেছে। ১০ মার্চ ইডি লালুপ্রসাদের পরিবারের বাড়িতে হানা দিয়েছে। শনিবার, ১১ মার্চ ইডি-র সদর দফতরে একদিকে তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের কন্যা কে কবিতাকে ইডি-র সদর দফতরে ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলেছে। একই দফতরে ইডি-র হেফাজতে সিসৌদিয়াকেও জেরা করা হয়েছে।

কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে বলেন, ‘‘মোদী সরকার বিরোধী নেতাদের উপরে ইডি-সিবিআইয়ের অপব্যবহার করে গণতন্ত্রকে হত্যার চেষ্টা করছে। বিহারের উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের বাড়িতে তল্লাশি হয়েছে। ওঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, বোনদের হেনস্থা করা হচ্ছে। লালুপ্রসাদের বয়স হয়েছে। উনি অসুস্থ। তা-ও মোদী সরকারের মানবিকতা বলে কিছু নেই। এ বার জল মাথার উপরে বইছে। যখন পরম বন্ধুর সম্পত্তি আকাশ ছুঁয়ে ফেলে, তখন কেন কোনও তদন্ত হয় না?”

আম আদমি পার্টির সাংসদ রাঘব চাড্ডাও অভিযোগ করেছেন, বিরোধী-মুক্ত ভারত চাইছে বিজেপি। যেখানে শুধু একটিই দল, একজনই নেতা থাকবেন। গণতন্ত্রের বদলে স্বৈরতন্ত্র চাইছে বিজেপি। কর্নাটকে বিজেপি বিধায়কের বাড়ি থেকে ঘুষের টাকা উদ্ধার হলেও তিনি জামিন পেয়ে যাচ্ছেন। অথচ মণীশ সিসৌদিয়ার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে এক নয়া পয়সা না পেলেও তাঁকে একই মামলায় একবার সিবিআই, একবার ইডি গ্রেফতার করছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

ED CBI Oppositions

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy