Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
migrant workers

পরিযায়ীদের ‘আপন’ হননি বিরোধীরা

শেষ বেলায় বিহারে প্রচার সভায় এসে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুঃখ বোঝার দাবি তাই তেমন গ্রহণযোগ্য ঠেকেনি।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ নভেম্বর ২০২০ ০৫:২৯
Share: Save:

শুধু ঠান্ডা ঘরে বসে টুইট কিংবা শেষ বেলার ‘পরিযায়ী-প্রচারে’ যে ক্ষুব্ধ পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছে টানা যায় না, সম্ভবত সে কথা স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়ে গেল বিহারের ব্যালট-যুদ্ধ।
লকডাউনে কাজ খুইয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় বিহারের গ্রামে ফিরতে বাধ্য হয়েছিলেন বহু পরিযায়ী কর্মী। হাজার কিলোমিটার হেঁটে ফেরার পথে অনেকের জুটেছিল পুলিশের লাঠি। রাস্তায় প্রাণও হারিয়েছেন অনেকে। বিহারের সীমানায় এসে অনেকে আবার শুনেছিলেন যে, সংক্রমণ মাথাচাড়া দেওয়ার ভয়ে চট করে তাঁদের ঢুকতে দিতে রাজি নয় নীতীশ কুমারের সরকার। ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশ স্পষ্ট বলছিলেন, লকডাউনে চরম হেনস্থার ক্ষোভ ব্যালট বাক্সে উগরে দেবেন তাঁরা এবং তাঁদের পরিবার। তাই মঙ্গলবার বিজেপির যথেষ্ট ভাল ফল এবং এনডিএ-র ‘ম্যাজিক ফিগার’ ছুঁইছুঁই আসন সংখ্যা দেখে অনেকের জিজ্ঞাসা, তবে কি ভোটে তেমন প্রভাবই ফেলল না ক্ষুব্ধ পরিযায়ী শ্রমিকদের ভোট? অতিমারি সামাল দিতে হঠাৎ ঘোষিত লকডাউনে বিধ্বস্ত অর্থনীতিই বা তেমন আঁচড় কাটল কোথায়?

প্রায় সমস্ত দলের স্থানীয় নেতারাই আড়ালে মানছেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের মধ্যে প্রবল ক্ষোভ যে দানা বেঁধেছিল, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু তা ভোট-বাক্স পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়ার মতো নেতার দেখা তাঁরা পাননি। বাড়ি ফিরতি পরিযায়ী কর্মীদের সঙ্গে কথা বলতে হাতে গোনা বার পথে নেমেছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধী। এ নিয়ে মোদী সরকারের দিকে যাবতীয় অভিযোগের আঙুল তুলেছেন টুইটারে। শেষ বেলায় বিহারে প্রচার সভায় এসে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুঃখ বোঝার দাবি তাই তেমন গ্রহণযোগ্য ঠেকেনি। তেমনই আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের জবাবদিহি চাইলে, জেডিইউ পাল্টা প্রশ্ন ছুড়েছে, লকডাউনের ওই কঠিন সময়ে তেজস্বী ছিলেন কোথায়? কেন পরিযায়ী শ্রমিকদের পাশে না-দাঁড়িয়ে ওই সময়ে দিল্লিতে আরামে সময় কাটিয়েছেন তিনি?

সিপিএমএলের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্য তাঁদের দলের তাক লাগানো ফলের প্রসঙ্গে বলেছেন, কাজ খোয়ানো পরিযায়ী শ্রমিক কিংবা লকডাউনে আতান্তরে পড়া গরিব মানুষ বুঝেছিলেন যে, তাঁদের পাশে কোনও দলের কেউ নেই। তখন সিপিএমএলের কর্মীরা ওই দরিদ্র, অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর কারণেই এই আস্থাজয় সম্ভব হয়েছে। অনেকের মতে, এর ভগ্নাংশ করতে পারলেও, ভোট-বাক্সে তার বিপুল ফয়দা তুলতে পারত কংগ্রেস, আরজেডি।

প্রধানমন্ত্রী গরিব রোজগার যোজনায় আপাতত সংসার চালানোর মতো কাজ জুগিয়ে ওই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার চেষ্টা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বন্দোবস্ত করেছেন আট-ন’মাস ধরে নিখরচায় রেশনের। বলেছেন উজ্জ্বলা প্রকল্পে নিখরচার গ্যাস সিলিন্ডারের সুবিধার কথা। তাতে যে যাবতীয় রাগ গলে জল হয়েছে, এমন একেবারেই নয়। কিন্তু তেমনই তেজস্বীর ১০ লক্ষ সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতিতেও নিজেদের কোনও সুবিধা দেখতে পাননি পরিযায়ী শ্রমিকরা। বরং লালু প্রসাদ -রাবড়ী দেবীর জমানার স্মৃতি হাতড়ে একটি অংশ মনে করেছেন, ‘জঙ্গল রাজ’ ফিরলে, নিজের রাজ্যে কাজ পাওয়া আরও কঠিন হবে তাঁদের পক্ষে।
বিভিন্ন পরিসংখ্যানে স্পষ্ট যে, কাজের খোঁজে ভোটের আগেই ভিন্ রাজ্যে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকদের একাংশ। তাঁদের অনেকে ভোট দিতে আর ফেরেননি। উল্টে, তাঁদের পরিবারের মহিলা সদস্যদের ভোটের একাংশ সম্ভবত গিয়েছে নরেন্দ্র মোদী-নীতীশ কুমারের ঝুলিতে। নীতীশের মদবন্দি কিংবা মোদীর বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের সুবিধায় মন ভেজার পাশাপাশি ‘জঙ্গল রাজে’ নারী নির্যাতন মাথাচাড়া দেওয়ার সম্ভাবনায় ভয় পেয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া, পরিযায়ী শ্রমিক থেকে শুরু করে অনেকেই হয়তো বিধ্বস্ত অর্থনীতির কারণে সরকারের উপরে ক্ষুব্ধ। কিন্তু ‘মোদী ম্যাজিকে’ প্রধানমন্ত্রীর সৎ চেষ্টা এবং দেশের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম সম্পর্কে প্রশ্ন তাঁদের অনেকের মনেই আর জাগেনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

migrant workers Bihar Assembly Election 2020
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE