হস্টেলের ছাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানের ভাঙা অংশ ঝুলে রয়েছে। তার নীচে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রীর ছবি তোলা হয়েছে তাঁর পিছন থেকে ‘লো অ্যাঙ্গল’-এ। বিমানমন্ত্রী রামমোহন নায়ডু বৃহস্পতিবার বিকেলেই দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন। নিজের কাজকর্মের ভিডিয়ো সম্পাদনা করে, তাতে বাজনা জুড়ে ‘রিল’ তৈরি করে বিমানমন্ত্রী তা সোশাল মিডিয়ায় তুলে ধরেছেন।
‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পরে বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছিলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বা বিজেপি সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় সামরিক অভিযানকে রাজনৈতিক প্রচারে কাজে লাগাতে চাইছেন। এ বার প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে বিমান দুর্ঘটনাকেও নিজেদের প্রচারে কাজে লাগানোর অভিযোগ তুললেন তাঁরা। একই সঙ্গে বিরোধীদের প্রশ্ন, তদন্ত হওয়ার আগেই কেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ একে ‘দুর্ঘটনা’ বললেন? কেন ‘দুর্ঘটনা রোখা যায় না’ বলে সরকারের সমস্ত দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করলেন? কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম-সহ বিরোধী শিবির এই ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
শুক্রবার সকালে আমদাবাদের দুর্ঘটনাস্থলে প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন ভাবে ছবি তোলার দিকে আঙুল তুলে কংগ্রেস বলেছে, এটা দেশের দুর্ভাগ্য। কংগ্রেসের মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে বলেন, “দেশের দুর্ভাগ্য যে মৃত্যুর ইমারতেও ফোটো-শুট চলে। ইতিহাসে সব থেকে ভয়ঙ্কর বিমান দুর্ঘটনা হয়েছে। সেখানে বিমানমন্ত্রী বাজনা-সহ রিল বানাচ্ছেন। নির্লজ্জতারও সীমা থাকে।” বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, এর আগে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব রেলের দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে ‘রিল’ বানাতেন। তাই তাঁকে ‘রিলমন্ত্রী’ বলা হত। এ বার বিমানমন্ত্রী নতুন ‘রিলমন্ত্রী’ হয়ে উঠেছেন। তৃণমূলের রাজ্যসভা সাংসদ সাকেত গোখলে বলেছেন, “এই দুর্ঘটনার মধ্যে কে ফোটো-অপ করে? প্রধানমন্ত্রীর মোদীর অন্তত এক বার ভান করে হলেও লজ্জা পাওয়া উচিত।”
কংগ্রেস, তৃণমূল, বাম-সহ বিভিন্ন বিরোধী দল আজ আমদাবাদের বিমান দুর্ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের কর্মরত অথবা অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষের মতে, উচ্চপর্যায়ের নিরপেক্ষ তদন্ত দরকার। পাখির ধাক্কা বলে নজর ঘোরানো চলবে না। নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞদের হাতে দিয়ে তদন্ত করানো হোক। তাঁর যুক্তি, বিজেপি সরকারের আমলে দেশের প্লেন, ট্রেনের অবস্থা খুব খারাপ। যে বিমান প্যারিস থেকে দিল্লি হয়ে আমদাবাদ এল, সেটা আচমকা ভেঙে পড়ল? আমদাবাদে ঠিকঠাক পরীক্ষাও হয়নি?
অমিত শাহ বৃহস্পতিবার আমদাবাদে বলেছিলেন, “এটা দুর্ঘটনা, দুর্ঘটনা আটকানো যায় না।” কংগ্রেস নেতা পবন খেরার প্রশ্ন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উচিত ছিল, এর দায় নির্দিষ্ট করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া। যদি দুর্ঘটনা রোখাই না যায়, বিমান মন্ত্রক রয়েছে কেন? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর যুক্তি মেনে সব ভাগ্যের উপরে ছেড়ে দিতে হবে?”
বিজেপি নেতা তথা মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন, কংগ্রেস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা বিকৃত করে রাজনীতি করছে। কংগ্রেসের এখন বোঝা উচিত, এটা রাজনীতির সময় নয়। কংগ্রেসের পাল্টা, ২০১৬ সালে যখন কলকাতায় উড়ালপুল ভেঙে পড়েছিল, তখন নরেন্দ্র মোদী একে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ঈশ্বরের বার্তা বলে তকমা দিয়েছিলেন। কংগ্রেস নেতাদের কটাক্ষ, ‘শুধু একজন নেতাই রাজনীতি করতে পারবেন! প্রশ্ন করলেই বলা হবে, এটা ঠিক সময় নয়।’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)