Advertisement
E-Paper

ভোটে শিকেয় বিধি, দেশে দু’দিনে করোনা ১ লক্ষেরও বেশি

কার সভায় কত লক্ষের ভিড়, সেই প্রতিযোগিতাই এখন বড় বালাই যে!

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২১ ০৭:২৮
মুম্বইয়ের এক রেল স্টেশনে চলছে যাত্রীদের র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার। ছবি: রয়টার্স

মুম্বইয়ের এক রেল স্টেশনে চলছে যাত্রীদের র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। বৃহস্পতিবার। ছবি: রয়টার্স

নেতার মুখে মাস্ক নেই। তাঁর মঞ্চের নীচে বা গাড়ির চারধারে ঠাসাঠাসি ভিড় করে থাকা জনতার প্রায় পুরোটাই মাস্কবিহীন। ‘দো গজ কি দূরি’? ভোটের আবহে নেতারা সে সব হুঁশিয়ারি দেওয়াও মুলতুবি রেখেছেন। কার সভায় কত লক্ষের ভিড়, সেই প্রতিযোগিতাই এখন বড় বালাই যে!

স্রেফ গত দু’দিনে সারা দেশে এক লক্ষের বেশি মানুষের করোনা ধরা পড়েছে। আসন্ন উৎসব বা ধর্মীয় অনুষ্ঠানে প্রকাশ্য জনসমাগম নিষিদ্ধ করে রাজ্যগুলিকে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু চিকিৎসকদের একটা বড় অংশের প্রশ্ন, রাজনৈতিক জমায়েতের ফলে সংক্রমণ যে আরও ভয়াবহ ভাবে ছড়াতে পারে, দিল্লির নেতা ও কর্তারা তা কি ভেবে দেখছেন? চার রাজ্য ও এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভা ভোটের প্রচার ঘিরে প্রত্যেক দিনই লাগামছাড়া ভিড়ের ছবি দেখা যাচ্ছে কোথাও না কোথাও। কে বলবে, দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গিয়েছে।

পরিসংখ্যান বলছে, গত বছরের চেয়েও দ্রুত গতিতে এখন বাড়ছে সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫৩,৪৭৬, যা গত বছরের ২৩ অক্টোবরের পরে সর্বোচ্চ। মাত্র দেড় মাসের মধ্যে দৈনিক সংক্রমণ ৯ হাজার থেকে ৫৩ হাজারে পৌঁছেছে! গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গিয়েছেন ২৫১ জন। শুধু মুম্বইয়ে গত কাল থেকে রেকর্ড সংখ্যক ৫৫০৪ জন সংক্রমিত হয়েছেন। মহারাষ্ট্রের নান্দের এবং বিড় শহরে স্থানীয় ভাবে লকডাউন করতে হয়েছে।

এই পরিসংখ্যানেও যাঁদের টনক নড়ছে না, তাঁদের চিকিৎসকেরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, বহু হাসপাতালই এখন আর কোভিড হাসপাতাল নয়। গত বছর সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কোনও হাসপাতালকে সম্পূর্ণ ভাবে, কোনওটির আলাদা বিল্ডিং বা ব্লককে শুধুমাত্র কোভিড রোগীদের চিকিৎসার জন্য আলাদা রাখা হয়েছিল। কোভিড রোগীদের জন্য সংরক্ষিত শয্যাও ছিল প্রচুর। কিন্তু সংক্রমণ কমতে শুরু করার পরে আলাদা কোভিড হাসপাতাল বা কোভিড শয্যার সংখ্যা কমেছে। এই পরিস্থিতিতে করোনা রোগীর সংখ্যায় বিস্ফোরণ হলে কার্যত মাথায় হাত পড়বে প্রশাসনের। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে খোদ প্রধানমন্ত্রী শহর থেকে গ্রামাঞ্চলে করোনা ছড়ানো নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু বাস্তব বলছে, সে সব নিয়ে না নেতারা সচেতন, না জনতা। কলকাতার এক ভাইরোলজিস্ট বললেন, ‘‘নির্বাচন কমিশন বরং করোনা-বিধি পালনের ব্যাপারে বিশেষ দায়িত্ব দিক নেতাদেরই। তা হলে তাঁদের অনুগামীরাও বিধি মানতে বাধ্য হবেন।’’

স্টেট ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার একটি রিপোর্ট বলছে, ভারতে করোনার এই দ্বিতীয় ঢেউ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে এপ্রিলের দ্বিতীয়ার্ধে। দ্বিতীয় ঢেউয়ে করোনা সংক্রমিত হবেন প্রায় ২৫ লক্ষ ভারতবাসী। প্রায় ১০০ দিন চলবে এই পরিস্থিতি। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, শুধুমাত্র স্থানীয় ভাবে লকডাউন করে সংক্রমণে লাগাম পরানো যাবে না। এর জন্য দরকার ব্যাপক ভাবে টিকাকরণ। ভারতে টিকাকরণ প্রথমে সে ভাবে গতি পায়নি। তবে গত কয়েক দিনে ছবিটা সামান্য বদলেছে।

সরকার দাবি করে আসছিল, টিকার কোনও ঘাটতি নেই। কিন্তু বিশেষ সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, দেশে সংক্রমণ বৃদ্ধির আবহে গত কাল থেকে বিদেশে টিকা রফতানি বন্ধ রেখেছে ভারত। এ ক্ষেত্রে সিরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার টিকা বা কোভিশিল্ডের কথাই বলা হয়েছে। ভারতের এই পদক্ষেপে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং গাভি ফাউন্ডেশনের টিকা-জোট ‘কোভ্যাক্স’ ঘিরে কিছুটা উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। ইউনিসেফ জানিয়েছে, এই বিষয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। সিরামের তরফে কেউ এই প্রসঙ্গে মুখ খোলেননি। তবে সরকারের একটি সূত্রের দাবি, ভারত টিকা রফতানিতে কোনও নিষেধাজ্ঞা চাপায়নি। ঘরোয়া চাহিদার দিকে নজর রেখেই সহযোগী দেশগুলিকে ধাপে ধাপে টিকা পাঠানো হবে। এ বিষয়ে ভারতের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয়নি।

India COVID-19
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy