পদ্ম পুরস্কারের তালিকায় এ বার কার্যত ব্রাত্য পশ্চিমবঙ্গ। ১১২ জন পদ্মসম্মান প্রাপকের তালিকায় এ রাজ্য থেকে রয়েছেন এক জনই। পদ্মবিভূষণ পাচ্ছেন সঙ্গীতশিল্পী গিরিজা দেবী। বাকি যে ক’জন বাঙালির নাম পদ্ম-তালিকায় রয়েছে, তাঁরা কেউই পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দা নন।
যেমন সঙ্গীতশিল্পী সোমা ঘোষ, চিকিৎসক সব্যসাচী সরকার এবং চিকিৎসক টি কে লাহিড়ী প্রত্যেকেই উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। বিজ্ঞানী দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায় কর্নাটকের। কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া পুরস্কার তালিকা দেখে সোমবার ফের কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। ধারাবাহিক কেন্দ্রীয় বঞ্চনারই সামিল।’’
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের বক্তব্য অবশ্য আলাদা। মন্ত্রকের এক কর্তা জানান, গত চার বছর ধরে রাজ্য থেকে পদ্ম পুরস্কারের কোনও সুপারিশই আসেনি। প্রতি বছরই কেন্দ্র থেকে রাজ্যের কাছে পদ্ম-পুরস্কারের জন্য সম্ভাব্য প্রাপকের নাম চেয়ে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু রাজ্য নাম পাঠায়নি।
কেন রাজ্য সরকার কোনও নাম সুপারিশ করেনি?
রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই কেন্দ্রীয় কোনও পুরস্কারের জন্য নাম সুপারিশ করা বন্ধ করে দিয়েছে রাজ্য। ওই কর্তার কথায়, ‘‘এখন তো রাজ্য সরকারই বঙ্গবিভূষণ, বঙ্গভূষণ পুরস্কার দিয়ে থাকে। ফলে কেন্দ্রের পুরস্কার পেতে বাড়তি উৎসাহ রাজ্য সরকারের তরফ থেকে দেখানো হয় না।’’
প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য যদি পদ্ম-পুরস্কার নিয়ে উৎসাহিত না-ই হবে, তা হলে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ উঠছে কেন? কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়র কথায়, ‘‘পদ্ম-পুরস্কার দেওয়া হয় মেধার ভিত্তিতে। সেখানে আঞ্চলিকতার কোনও স্থান নেই। মুখ্যমন্ত্রী যদি এর মধ্যেও বঞ্চনা খোঁজেন, সেটা বঙ্গ রাজনীতির একটা হাস্যকর রীতির পরিচয় মাত্র।’’
রাজ্য প্রশাসনের কর্তারা পাল্টা বলছেন, রাজ্য যদি নাম না-ও পাঠায়, কেন্দ্রীয় সরকারের মনোনীত কমিটি সারা দেশ থেকে পুরস্কার প্রাপকদের নির্বাচন করবেন, এটাই দস্তুর। গত চার বছর সেটাই হয়ে এসেছে। সরকারি তথ্য বলছে, ২০১২ সালে রাজ্য থেকে পদ্মবিভূষণ পান কে জি সুব্রহ্মণ্যম। পদ্মভূষণ পান খালেদ চৌধুরী, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত এবং রণেন সেন। ২০১৩ সালে বাংলা থেকে পদ্মবিভূষণ পেয়েছিলেন আব্দুল রশিদ খান। পদ্মশ্রী পান পূর্ণদাস বাউল, শঙ্করকুমার পাল এবং সালেক লখনউভি। ২০১৪ সালে রাজ্য থেকে সাত জন বাঙালি পদ্মশ্রী পান। এঁরা হলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, সুনীল দাস, রানি কর্ণ, সুশান্ত দত্তগুপ্ত, জয়ন্তকুমার ঘোষ, ইন্দ্র চক্রবর্তী এবং সুপ্রিয়া দেবী। ২০১৫ সালে বিমল রায় পদ্মশ্রী পেয়েছিলেন।
রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা জানাচ্ছেন, সরকার সুপারিশ না করলেও এ রাজ্যের কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা বিভিন্ন সময়ে পদ্ম-তালিকার জন্য নাম পাঠান। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যখন বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন তখন তিনি বহু ফুটবলার, সাঁতারু, খেলোয়াড়কে পদ্ম-পুরস্কারের জন্য মনোনীত করেছিলেন। তাঁরা পুরস্কার পেয়েওছিলেন। এ বার কেন তা হল না? বিজেপি নেতা সিদ্ধার্থনাথ সিংহ উত্তরে বলেন, ‘‘গত চার বছরের তালিকা দেখলেই বোঝা যাবে কেন্দ্রীয় সরকার বাঙালি প্রতিভার যথাযথ সম্মান করে আসছে। কোনও বঞ্চনা হয়নি। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জাল নোটের কারবারি, দেশদ্রোহীদের মদত দিয়ে কি বাংলার সম্মান বাড়াচ্ছেন? দিদি বরং সে দিকে নজর দিন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy