কিছু দিন আগে আমেরিকার মাটিতে দাঁড়িয়ে ভারতকে একের পর এক হুমকি দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির। পরমাণু যুদ্ধ থেকে সিন্ধু নদের উপরে বাঁধ দেওয়া হলে তা ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকি— কিছুই বলতে বাকি রাখেননি। কূটনীতিকদের বড় অংশের মতে, ভারতের পূর্ব প্রান্তে আরও বেশি করে সক্রিয় হতে চাইছে পাকিস্তান। সে জন্য নীরবে ঘুঁটি সাজাচ্ছেন পাক সেনাপ্রধান। সূত্রের খবর, সেই কাজ অতি সন্তর্পণে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন ঢাকায় নিযুক্ত পাক হাই কমিশনার ইমরান হায়দার। আর একটি সূত্রের দাবি, বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে মুসলিম রাষ্ট্রগুলির কনফেডারেশন গঠনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে।
২০২৪ সালের ৫ অগস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সে দেশে মৌলবাদীদের বাড়বাড়ন্ত। এই পরিস্থিতির সুযোগ পূর্ণমাত্রা নিতে চাইছে পাকিস্তান। জম্মু-কাশ্মীরে পাকিস্তান যে ছায়াযুদ্ধ চালায় এ বার তা ভারতের পূর্ব সীমান্তেও ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে তারা। সূত্রের খবর, বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে পাকিস্তান এমন একটি কনফেডারেশন প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থাকবে। এই পরিকল্পনায় রাজনৈতিক, সামরিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এই লক্ষ্যে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে পারমাণবিক তৎপরতাও পাকিস্তান বাড়াতে চায় বলে ওই সূত্রটির দাবি। ওই কনফেডারেশনে তুরস্ক ও মালয়েশিয়াকে যুক্ত করে একটি বৃহত্তর মুসলিম রাষ্ট্রসমূহের কনফেডারেশন গঠনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ওই সূত্রটি আরও জানাচ্ছে, এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পাকিস্তানের আইএসআই, মালয়েশিয়ার জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এমইআইও এবং তুরস্কের গোয়েন্দা সংস্থা মিল্লি ইস্তিবারাত তেশকিলাতি (এমআইটি) একযোগে কাজ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেছেন, ‘‘এই পরিকল্পনা সফল হলে, ভবিষ্যতে একটি পারমাণবিক শক্তিধর মুসলিম কনফেডারেশন আত্মপ্রকাশ করতে পারে। ওই কনফেডারেশন শুধু দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ভারসাম্যই পাল্টে দেবে তাই নয়, বরং ভারত-পাকিস্তান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নতুন মাত্রা যোগ করবে। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপরে পাকিস্তানের ক্রমবর্ধমান প্রভাব এখন ক্রমশ স্পষ্ট হয়ে উঠছে।’’
আর একটি সূত্রের দাবি, পাকিস্তানের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে জড়িত ঢাকায় নিযুক্ত পাক হাই কমিশনার ইমরান হায়দার। আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে তিনি কাশ্মীর নিয়ে কট্টর অবস্থানের জন্য পরিচিত, এবং পাকিস্তানের ‘ফ্রি কাশ্মীর’ বয়ানের সরব প্রবক্তা। ইসলামাবাদ তাঁকে বাংলাদেশ পাঠানোর আগে তিনি মায়ানমারে ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার পার্থের কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবাধিকারের ছাত্র হায়দার পাকিস্তানে খুব অল্প সময়ের জন্য (১৯৯৫-১৯৯৬) সহকারী কর কমিশনার হিসেবে কাজ করেছিলেন, এর পরে ১৯৯৬ সালে বিদেশ মন্ত্রকে যোগ দেন এবং তার পর থেকে রাষ্ট্রপুঞ্জ, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, ইরান, ভারত, স্পেন-সহ নানা দেশে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। এক প্রবীণ কূটনীতিকের কথায়, ‘‘ঢাকায় ইমরান হায়দার শুধু কূটনৈতিক ব্রিফকেসই বহন করেন না, ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তান ত্রিভুজ সম্পর্কেও বোঝেন। বিদেশ মন্ত্রকে বহু বছরের কাজ এবং নয়াদিল্লিতে কৌশলগত দায়িত্বপালনের মধ্যে দিয়ে তিনি অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন।”
বাংলাদেশের একটি সূত্র জানিয়েছে, আজ়ম স্কোয়াড, রাওজান স্কোয়াড, আল হাজ়রত অ্যাকাডেমি এবং জামায়েতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারিকিয়া নামে চারটি সংগঠন তৈরি হরেছে। এর মধ্যে শেষ জঙ্গি সংগঠনটি রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিশেষ ভাবে তৎপর। সেখান থেকে সংগঠনে সদস্য নিয়োগ হয় বলেও সূত্রের দাবি। এই সংগঠনগুলি তৈরি হয়েছে জামায়াত এবং আইএসআইয়ের পরিকল্পনায়। ভারতীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, এরা বাংলাদেশে এবং পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন জায়গাকে নিশানা করতে পারে। পাঠানকোট বা উরিতে যেমন জঙ্গি হামলা হয়েছিল, ওই সংগঠনগুলি তেমন ভাবেই সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানতে পারে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)