ভারত হামলা থামালে আমরাও ভেবে দেখব, বলছেন পাকিস্তানি বিদেশমন্ত্রী! সংঘাতের আবহে ভিন্ন সুর ইসলামাবাদের তরফে

ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের আবহে এই প্রথম বার ভিন্ন সুর শোনা গেল পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী ইশাক দারের গলায়। তিনি দাবি করলেন, ভারত ‘হামলা’ থামালে, থামবে পাকিস্তানও। পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে এ কথা জানিয়েছে সংবাদসংস্থা রয়টার্স। দারের আরও দাবি, ভারত যদি আবার ‘হামলা’ চালায়, তা হলে তার জবাব দেবে পাকিস্তান। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজকে দার জানিয়েছেন, এই বিষয়টি আমেরিকার বিদেশ সচিব মার্কো রুবিওকেও জানিয়েছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের ধৈর্যের সীমা শেষ হয়েছে। সে কারণেই জবাব দিয়েছি। ওরা থামলে আমরাও থামার বিষয়ে বিবেচনা করব।’’

২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলায় ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছে ভারত। যদিও পাকিস্তান তা অস্বীকার করেছে। তার পর থেকে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে চাপানউতর শুরু হয়েছে, যা এখন আরও তীব্র হয়েছে। ৭ মে পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটি ধ্বংস করেছে ভারত। সেই অভিযানের নাম ছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। পাকিস্তান যদিও দাবি করেছেন, ভারতের ওই অভিযানে তাদের সাধারণ মানুষ নিহত হয়েছে। এই দাবি অস্বীকার করেছে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক। বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রী স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, বেছে বেছে পাকিস্তানের জঙ্গিঘাঁটিই ধ্বংস করেছে ভারতীয় সেনা। আর এর সূত্রপাত পাকিস্তানই করেছে গত ২২ এপ্রিল। মিস্রী এ-ও জানান যে, গোটা দুনিয়ার কাছেই পাকিস্তানের জঙ্গি-যোগের প্রমাণ রয়েছে। তিনি মনে করিয়ে দেন যে, এই পাকিস্তানের অ্যাবটাবাদেই লুকিয়ে ছিলেন আল-কায়দার প্রাক্তন প্রধান ওসামা বিন-লাদেন। সেখানেই তাকে নিকেশ করেছিল মার্কিন সেনা। মিস্রী জানান, ভারতীয় সেনা অভিযানে নিহত জঙ্গিদের কফিনে পাকিস্তান জাতীয় পতাকা জড়িয়েছে। পাকিস্তানে এ ভাবেই জঙ্গিদের শেষকৃত্য হয় বলে কটাক্ষ করেছেন তিনি। সাংবাদিক বৈঠকে বিদেশ সচিব মিস্রী এবং কর্নেল সোফিয়া কুরেশি, বায়ুসেনার উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিংহ বার বার জানিয়েছেন, এই টানাপড়েনের সূত্রপাত করেছিল পাকিস্তানই। গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে হামলা চালিয়ে সেই সূত্রপাত করেছে তারা। তার পরে বার বার ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকা লক্ষ্য করে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে পাকিস্তান, যা ব্যর্থ করেছে সেনাবাহিনী।

যদিও পাকিস্তান তা মানতে চায়নি। তারা বার বার যুক্তি দিয়েছে যে, ভারতের অভিযানে মৃত্যু হয়েছে পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের। ভারতীয় বিদেশ সচিব মিস্রী জানিয়েছেন, পহেলগাঁও হামলার কথা জঙ্গি গোষ্ঠী টিআরএফ (দ্য রেজ়িস্টান্স ফ্রন্ট) দু’বার স্বীকার করার পরেও পাকিস্তান তা মানতে চায়নি। ওই জঙ্গি গোষ্ঠীকে মদত দেওয়ার অভিযোগও অস্বীকার করেছে। এ বার পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী দার ভারতের কোর্টে বল ঠেলতে চেয়ে দাবি করলেন, ভারত ‘হামলা’ থামালে তারাও হামলা বন্ধ করবে। এ কথা তিনি মার্কিন বিদেশ সচিব রুবিয়োকে জানিয়েছেন বলেও দাবি করেছেন। শনিবার সকালে পাক সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে কথা হয়েছে রুবিয়োর। তিনি ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনের জন্য আলোচনায় বসার ডাক দেন। তখনই পাকিস্তানি বিদেশমন্ত্রী ভারতের কোর্টে বল ঠেলার চেষ্টা করেন। সে কথা তিনি নিজেই জানান পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমকে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারের পরে শুক্রবার রাতে আবার সীমান্ত সংলগ্ন এলাকার ২৬টি জায়গায় ড্রোন হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে গুজরাতের ভুজ পর্যন্ত এলাকায় এই হামলা চালানোর চেষ্টা করেছে তারা, যা ব্যর্থ করেছে ভারত।