জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরের কাছে গত সোমবার সফল হয়েছে ভারতীয় সেনার অভিযান ‘অপারেশন মহাদেব’। তাতে তিন জঙ্গি নিহত হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে জানিয়েছেন, ওই তিন জঙ্গি পহেলগাঁওয়ের হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল। ফরেন্সিক পরীক্ষার মাধ্যমে, বিজ্ঞানীদের সাহায্য নিয়ে এ বিষয়ে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হয়েছে সরকার। কিন্তু কী ভাবে এত দিন জঙ্গিদের কাশ্মীরেই আটকে রাখা হয়েছিল? কেন তিন মাসেও তারা কাশ্মীর ছেড়ে পালাতে পারেনি? সরকারি সূত্র উল্লেখ করে এনডিটিভি জানিয়েছেন, ফাঁদ পাতা হয়েছিল জঙ্গিদের জন্য। কোনও ভাবেই তারা যাতে পালাতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে গোপন সুড়ঙ্গ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। তা থেকেই এসেছে সাফল্য।
সোমবার বাহিনীর সঙ্গে গুলির লড়াইয়ে নিহত হয়েছে তিন জঙ্গি— সুলেমান, আফগানি এবং জিব্রান। তিন জনেই পাকিস্তানি নাগরিক। তাদের কাছ থেকে এম৯ এবং একাধিক একে৪৭ রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে। গত ২২ এপ্রিল পহেলগাঁওয়ে হামলার পর থেকে তারা গা-ঢাকা দিয়েছিল। সূত্রের দাবি, পহেলগাঁওয়ের ঘটনার পর আট কিলোমিটার দীর্ঘ একটি পথ চিহ্নিত করেছিল সেনাবাহিনী। সেই পথ দিয়ে পহেলগাঁওয়ের অভিযুক্তদের পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর পেয়েছিলেন বাহিনীর আধিকারিকেরা। ফলে ওই পথে নজরদারি কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সেখান দিয়ে ফেরার ঝুঁকি আর নেয়নি জঙ্গিরা। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি গোপন সুড়ঙ্গ চিহ্নিত করা হয়েছিল। সেগুলি কৌশলে আটকে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন:
কী কৌশল? সূত্রের খবর, গোপন সুড়ঙ্গগুলি চিহ্নিত করে সেগুলি খুঁড়ে ফেলেছিল নিরাপত্তাবাহিনী। ফলে সুড়ঙ্গগুলির মুখ জলে ভেসে যায়। সেগুলি আর ব্যবহার করতে পারেনি জঙ্গিরা। সেই কারণেই দীর্ঘ দিন তারা আটকে ছিল কাশ্মীরে। বেরোনোর সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে যায়।
জঙ্গিদের অবস্থান চিহ্নিত করতে গোয়েন্দাদের সাহায্য নিচ্ছিল সেনাবাহিনী। মূলত জঙ্গিদের কথোপকথনে আড়ি পাতা হচ্ছিল দীর্ঘ দিন ধরে। অবশেষে শ্রীনগরের কাছে তাদের অবস্থান সম্পর্কে গোয়েন্দারা নিশ্চিত হন। গোপন ডেরায় যৌথ অভিযান চালায় সেনা, সিআরপিএফ এবং জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ। সোমবার যে সময়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ সংসদে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নিয়ে আলোচনা শুরু করেন, সেই সময়েই শ্রীনগরের অদূরে চলছিল বাহিনীর অভিযান। জঙ্গিদের সঙ্গে গুলির লড়াই চলে বেশ কিছু ক্ষণ। তিন জনকেই হত্যা করা হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় রাইফেল, গ্রেনেডের মতো অস্ত্র।
অভিযোগ, কাশ্মীরের স্থানীয় কেউ কেউ এই জঙ্গিদের সাহায্য করছিল। বাহিনী তাঁদের চিহ্নিত করে। এই তিন জঙ্গির মৃতদেহ ওই স্থানীয়দের সামনে নিয়ে আসা হয়েছিল শনাক্তকরণের জন্য। স্থানীয়েরা নিশ্চিত ভাবেই জানান, এরা পহেলগাঁওয়ের হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিল। তবে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত হতে চেয়েছিলেন শাহ। তিনি সারা রাত জেগে ফরেন্সিক আধিকারিক এবং বিজ্ঞানীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন।
জঙ্গিদের কাছ থেকে যে আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, সেগুলি বিশেষ বিমানে চণ্ডীগড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বিশেষ যন্ত্র আনা হয়েছিল অহমদাবাদ থেকেও। ওই সমস্ত অস্ত্র থেকে পরীক্ষামূলক গুলি চালানো হয়। সেই গুলির খোলের সঙ্গে পহেলগাঁওয়ের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা খোল মিলিয়ে দেখা হয়। বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত করেন, দু’টি খোলের মধ্যে ৯৯ শতাংশ মিল রয়েছে। এর পরেই পহেলগাঁওয়ের জঙ্গিদের মৃত্যুর খবর ঘোষণা করা হয়।