দাচিগামে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছে তিন জঙ্গি। কেন্দ্রের তরফে মঙ্গলবার সংসদে জানানো হয়েছে, ওই তিন জঙ্গি পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। কী ভাবে সেই যোগের প্রমাণ মিলেছে, তা সংসদে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তিনি জানিয়েছেন, ফরেন্সিক পরীক্ষার রিপোর্ট দেখেই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে, নিহত তিন জঙ্গি পহেলগাঁও হামলার সঙ্গে জড়িত ছিল। পহেলগাঁওয়ে ঘটনাস্থল থেকে বুলেটের যে খোল মিলেছিল, তা ওই নিহত জঙ্গিদের থেকে মেলা বন্দুক, রাইফেল থেকেই ছোড়া হয়েছিল। চণ্ডীগড়ের ফরেন্সিক ল্যাবে সেই প্রমাণ মিলেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মঙ্গলবার জানান, সোমবার ‘অপারেশন মহাদেব’-এ তিন জঙ্গি নিহত হওয়ার পরে ঘটনাস্থল থেকে একটি এম-৯ আমেরিকান রাইফেল এবং দু’টি একে-৪৭ উদ্ধার করা হয়েছে। ওই অস্ত্র থেকে যে গুলি ছোড়া হয়েছে, তার সঙ্গে মিল রয়েছে পহেলগাঁওয়ের ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার কার্তুজ এবং গুলির খোলের। শাহ বলেন, ‘‘সন্দেহের কোনও অবকাশ নেই। আমার কাছে ব্যালিস্টিক রিপোর্ট রয়েছে। তা খতিয়ে দেখে সই করেছেন অন্যতম সেরা বিজ্ঞানীরা। মঙ্গলবার ভোর ৪টে ৪৬ মিনিটে আমাকে ভিডিয়ো কল করা হয়। তাতেই নিশ্চিত করে জানানো হয় যে, পহেলগাঁওয়ের ঘটনাস্থলে ছোড়া গুলি এবং ‘অপারেশন মহাদেব’-এর সময় উদ্ধার রাইফেলের মধ্যে ১০০ শতাংশ মিল রয়েছে।’’
আরও পড়ুন:
-
জঙ্গিদের দেহের সঙ্গে মিলেছে পাক ভোটার কার্ড, পহেলগাঁওয়ে পর্যটক-হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রও! লোকসভায় জানালেন শাহ
-
প্রাক্তন পাক কমান্ডোই জঙ্গি, ৩ নিহত পহেলগাঁও কাণ্ডে জড়িত ছিল! শাহের দাবি, ‘সিঁদুর’ থেকে ‘মহাদেব’, সব অপারেশন সফল
-
‘না বিশ্ববন্ধু হতে পারলেন, না দেশবন্ধু হতে পারলেন’! সংসদে প্রধানমন্ত্রীকে খোঁচা তৃণমূলের সায়নীর
কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, পহেলগাঁওয়ে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া কার্তুজ আগেই চণ্ডীগড়ের গবেষণাগারে পাঠানো হয়েছিল। সোমবার ‘অপারেশন মহাদেব’-এ জঙ্গিরা নিহত হলে তাদের অস্ত্রশস্ত্র রাতেই ওই গবেষণাগারেই পাঠানো হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে গুলির মিল পাওয়া গিয়েছে। তার পরেই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে, ২২ এপ্রিল পহেলগাঁও হামলায় ওই অস্ত্রই ব্যবহার করা হয়েছিল।
শাহ সংসদে আরও জানান যে, পহেলগাঁও হামলার পর পরই ‘মহাদেব’ অভিযানের প্রস্তুতি শুরু হয়েছিল। তাঁর কথায়, ‘‘পহেলগাঁও কাণ্ডের পরের দিন ভোর সাড়ে ৫টায় আমি শ্রীনগরে যাই। উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয়। ২৩ এপ্রিল সেনা, সিআরপিএফ, বিএসএফ, জম্মু- কাশ্মীর পুলিশ এলাকা পর্যবেক্ষণ করে জানায়, জঙ্গিদের পালানোর কোনও পথ রাখা হয়নি।’’
শাহ জানান, ২২ মে গোয়েন্দারা জানতে পারেন দাচিগামে জঙ্গিরা লুকিয়ে রয়েছে। দু’মাসের বেশি সময় ধরে আধুনিক সেন্সর-সহ বিভিন্ন সূত্রের মাধ্যমে তাদের উপর নজর রাখেন গোয়েন্দারা। ২২ জুলাই জঙ্গিদের অবস্থানের বিষয়ে নিশ্চিত হন গোয়েন্দারা। তার পরেই ২৮ জুলাই, সোমবার অভিযান শুরু করে সেনা, সিআরপিএফ, জম্মু-কাশ্মীর পুলিশ। সোমবার জঙ্গিদের দেহ শ্রীনগরে আনা হয়। যাঁরা তাদের খাবার, আশ্রয় রসদ জোগাতেন, তাঁরা শনাক্ত করেন দেহগুলি। তার পরেই দাচিগামের সংঘর্ষস্থল থেকে উদ্ধার অস্ত্র এবং কার্তুজের সঙ্গে পহেলগাঁও হামলার স্থল থেকে বাজেয়াপ্ত করা গুলি মিলিয়ে দেখা হয়। তাতেই নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে যে, সোমবার নিহত জঙ্গিরা পহেলগাঁও হামলায় জড়িত ছিল। সংসদে শাহ আরও বলেন, ‘‘তিন জনের মধ্যে দু’জনের দেহের কাছ থেকে পাকিস্তানের ভোটার নম্বর পাওয়া গিয়েছে। পাকিস্তানে তৈরি চকোলেটও মিলেছে।’’