সেনাবাহিনীতে তাঁদের মেয়াদ মাত্র চার বছর। তার পর শিকে ছেঁড়ে ২৫ শতাংশের ভাগ্যে। বাকিদের বিদায় নিতে হয়। কিন্তু ভারতীয় সেনায় এ বার সেই অগ্নিবীরদের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে পারে। সৌজন্যে ‘অপারেশন সিঁদুর’।
গত মে মাসে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারত যে সেনা অভিযান চালিয়েছিল, তাতে অগ্নিবীরেরাও যোগ দিয়েছিলেন। তার পর থেকে তাঁদের নিয়ে আলোচনা বেড়ে গিয়েছে। সূত্রের খবর, সিঁদুর অভিযানে অগ্নিবীরদের লড়াই ছিল চোখে পড়ার মতো। দেশের জন্য প্রাণ দিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ে গিয়েছেন তাঁরা। যা আলাদা করে নজর কেড়েছে। তাই অভিজ্ঞতা, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা যাচাই করে সেনাবাহিনীতে অগ্নিবীরদের মেয়াদ আরও বৃদ্ধি করা হতে পারে। তা নিয়ে আলোচনা চলছে বাহিনীর শীর্ষ মহলে।
যে কোনও সামরিক বাহিনীতে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জওয়ানদের মধ্যে ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। সার্বিক ভাবে সেনাবাহিনীতে গড় বয়স কমানোও দরকার। এই দিকগুলি মাথায় রেখে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের পুনর্মূল্যায়নের কথা ভাবছে ভারতীয় সেনা। ২০২২ সালে ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের সূচনা হয়েছিল। এর মাধ্যমে ১৭ থেকে ২১ বছর বয়সি তরুণ-তরুণীদের চার বছরের জন্য সেনাবাহিনীতে নিয়োগ করা হয়। চার বছর পর ২৫ শতাংশকে রেখে বাকিদের বসিয়ে দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী, থেকে যাওয়া ২৫ শতাংশ সেনা আরও ১১ বছর চাকরি করতে পারবেন। এঁরা ‘অগ্নিবীর’। গত তিন বছরে এই প্রকল্পের সম্ভাব্য একাধিক পরিবর্তন নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনও পরিবর্তন হয়নি।
আরও পড়ুন:
অগ্নিবীরদের প্রথম ব্যাচ বাহিনীতে চার বছর পূর্ণ করবে ২০২৬ সালের শেষ ভাগে। অর্থাৎ, হাতে এখনও এক বছরের কিছু বেশি সময় আছে। তার মধ্যে তাঁদের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। সূত্রের খবর, কত জন অগ্নিবীর স্থায়ী ভাবে বাহিনীতে থেকে যাবেন, সেই সংখ্যা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়ানো হতে পারে। সেনার অন্দরে বিভিন্ন বিভাগে প্রয়োজন অনুযায়ী তাঁদের নিয়োগ করা হবে। পদাতিক সৈন্যের বিভাগে ৭০-৭৫ শতাংশ, বিমান প্রতিরক্ষা এবং অন্যান্য বিশেষ প্রশিক্ষণ বিভাগে ৮০ শতাংশ, বিশেষ বাহিনীতে (স্পেশ্যাল ফোর্স) ১০০ শতাংশ অগ্নিবীরকেই রেখে দেওয়া হতে পারে। এই সমস্ত সৈন্যের গড় বয়স খুব বেশি বেড়ে যাওয়ার আগেই যাতে পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করা যায়, সেই বিষয়টিও দেখা হচ্ছে।
কত শতাংশ অগ্নিবীরকে রেখে দেওয়া হবে, এখনও তা আলোচনাধীন। পরবর্তী আর্মি কমান্ডার্স কনফারেন্সে এ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। তার পর তা প্রস্তাব আকারে সরকারের অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। স্থলবাহিনীতে অগ্নিবীরদের মেয়াদবৃদ্ধি এবং সংখ্যাবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা চললেও নৌসেনা বা বায়ুসেনায় একই পদক্ষেপ করা হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে গত বছর বায়ুসেনা প্রধান (এয়ার চিফ মার্শাল) এপি সিংহ জানিয়েছিলেন, অগ্নিবীরদের বাহিনীর অবস্থান ইতিবাচক। ২৫ শতাংশের বেশি অগ্নিবীরকে বায়ুসেনায় জায়গা দেওয়া যাবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। ফলে বায়ুসেনায় অগ্নিবীরদের মূল্যায়ন এখনও পর্যন্ত ইতিবাচক বলে মনে করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তার দিকে নজর রয়েছে।