E-Paper

আমেরিকার ক্ষমতা বলয়ের কাছাকাছি পৌঁছতে ভারতের তিন গুণ বরাদ্দ পাকিস্তানের

দেখা যাচ্ছে, আমেরিকার কৌশলগত জনসংযোগ সংস্থাগুলিকে অনেক বেশি কাজে লাগাচ্ছে পাকিস্তান, যাতে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছাকাছি যাওয়া যায়। সূত্রের খবর, কমবেশি ৬ লাখ ডলার প্রতি মাসে এই কাজে ব্যয় করছে ইসলামাবাদ।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০২৫ ০৯:০৭

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

ওয়াশিংটন ডিসি-র ক্ষমতার করিডরে পৌঁছনোর জন্য ভারতের তুলনায় তিন গুণ বেশি খরচ করছে পাকিস্তান। আর তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে আমেরিকার মাটি থেকে ইসলামাবাদের ভারত-বিরোধী ধারাবাহিক হুমকিতে। ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস-এর সূত্রে এই খবর প্রকাশ্যে এসেছে।

দেখা যাচ্ছে, আমেরিকার কৌশলগত জনসংযোগ সংস্থাগুলিকে অনেক বেশি কাজে লাগাচ্ছে পাকিস্তান, যাতে ট্রাম্প প্রশাসনের কাছাকাছি যাওয়া যায়। সূত্রের খবর, কমবেশি ৬ লাখ ডলার প্রতি মাসে এই কাজে ব্যয় করছে ইসলামাবাদ। আর পাকিস্তানের থেকে দশগুণ বড় অর্থনীতির দেশ ভারতের এই খাতে খরচ মাস প্রতি ২ লাখ ডলার। হোয়াইট হাউস, আমেরিকার কংগ্রেস এবং ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে সংযোগ বাড়াতে পাকিস্তান ছ'টি লবি ও আইনি সংস্থাকে ভাড়া করেছে। তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, আর্থিক ভাবে পাকিস্তানের নিজেরই নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর দশা। কিন্তু আমেরিকার সঙ্গে সংযোগে তাদের কোনও কার্পণ্য তো নেই-ই, বরং তা ভারতের তিনগুণ বেশি।

এই বিষয়টি ভারতের কাছে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত যখন দেখা যাচ্ছে ট্রাম্পের দ্বিতীয় দফার সরকারের ভিতরে তরতর করে ঢুকে যাচ্ছে ইসলামাবাদ। তাদের সেনাপ্রধানের সঙ্গে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের মধ্যাহ্নভোজ হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসন তেল উত্তোলন এবং দুর্লভ খনিজ প্রশ্নে পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা ও বিনিয়োগ নিয়ে সরব হয়েছে। এ ছাড়াও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানকে প্রধান অংশীদার হিসেবে বর্ণনা করেছে ওয়াশিংটন। পাক দাবি মেনে বালুচিস্তানের বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে জঙ্গি তকমাও দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

কূটনৈতিক শিবিরের মতে, আমেরিকার প্রধান রাজনৈতিক সংস্থা বা সরকারি সংগঠনগুলির সঙ্গে সংযোগ তৈরি করতে এই লবি সংস্থাগুলি মোটা ডলারের বিনিময়ে বিদেশ সরকারগুলিকে সহায়তা করে। পেন্টাগন, হোয়াইট হাউস, বিদেশ দফতরে তারা বাইরের সরকারি কর্তাদের যোগাযোগ করিয়ে দেয়। পাশাপাশি বিদেশি সরকার যেমন ভাষ্য দিতে চাইছে, তাকে আমেরিকার সংবাদমাধ্যমের কাছে তুলে ধরতেও সাহায্য করে এই লবিগুলি।

সূত্রে জানা গিয়েছে, পাকিস্তান যাদের টাকা দিচ্ছে, তাদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে অর্কিড অ্যাডভাইসার্স এসএসসি। তাদের মাসে আড়াই লাখ ডলার দেওয়া হচ্ছে, যাতে ট্রাম্প প্রশাসনের পাশাপাশি বিশ্ব ব্যাঙ্ক এবং আন্তর্জাতিক অর্থ ভান্ডারে (আইএমএফ) প্রভাব বাড়ানো যায়। এর পর রয়েছে সেইডেন ল’ নামের সংস্থা। মাসে দু’লাখ ডলার দিয়ে আমেরিকা এবং পাকিস্তানের বেসরকারি সংস্থাগুলির অংশীদারি তৈরিতে সহায়তা করে এরা। জুলাইয়ে ইসলামাবাদ এবং ওয়াশিংটনের যে বাণিজ্য চুক্তি হযেছে, তার সুবাদে পাকিস্তানের পণ্যে শুল্ক নেমে গিয়েছে ১৯ শতাংশে। দুর্লভ খনিজ ক্ষেত্রে পাকিস্তানের সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে উৎসাহ দেখাচ্ছে আমেরিকা। সেইডন অন্যদেরও বরাত দিচ্ছে পাকিস্তানকে সাহায্য করার জন্য। এমনই একটি সংস্থা জ্যাভেলিন অ্যাডভাইসার। এই সংস্থাটি ট্রাম্পের প্রাক্তন দেহরক্ষী কিথ শিলারের তৈরি। সেইডন ল’ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা রবার্ট সেইডনকে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের সময় ব্যক্তিগত তদন্তকারী হিসেবে ভাড়া করা হয়েছিল।

ভারত চুক্তিবদ্ধ বিজিআর অ্যাসোসিয়েটস-এর সঙ্গে। এটিও ওয়াশিংটনে যথেষ্ট প্রভাবশালী লবি সংস্থা। আমেরিকার লবি বাজারে তারা দক্ষিণ কোরিয়া, সার্বিয়া, পানামা, সাইপ্রাসের মতো বেশ কিছু দেশের প্রতিনিধিত্ব করে। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ভারত যা খরচ করছে, তা কম নয়। কিন্তু পাকিস্তান খরচ এতটা বাড়িয়ে দেওয়ায় আমেরিকার যাঁরা রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেন, তাঁদের কাছে সুবিধাজনক জায়গায় ইসলামাবাদ। ভারত-আমেরিকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Pakistan USA India

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy