হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছে শ্রেহান
ছেলেকে যখনই খাওয়াতে যেতাম ছেলে প্রশ্ন করতো, "বাবা তুমি খেয়েছ?" আমি উত্তর দিতাম, "তুমি আগে খাও, তার পরে আমি খাব।"
আমি খিদে পেলেও আমি অনেক সময়ই না খেয়ে কাটিয়ে দিতাম। আমার কাছে যা টাকা পয়সা অবশিষ্ট ছিল, তা শ্রেহানের ওষুধের পিছনেই খরচা হয়ে যেত। আর সেই কারণেই একবেলা খেয়েই আমরা কাটিয়ে দিতাম।
আমি নিজে না খেয়ে কয়েক দিন বেঁচে থাকতে পারব। কিন্তু আমাদের অসহায়তার কারণে শ্রেহানকে না খাইয়ে রাখতে পারব না।
শ্রেহানের যন্ত্রনায় ওকে সাহায্য় করতে না পারা আমার ব্যর্থতাই বটে! আমি চাই না, ও না খেয়ে, চিকিৎসা না পেয়ে আর কষ্ট পাক।
২০১৯ ফেব্রুয়ারি। হঠাৎ শ্রেয়ান রক্তবমি করতে শুরু করে। ওর পেট ফুলে যেতে থাকে। স্ত্রীর চিৎকার শুনে আমি ছুটে আসি। শ্রেহানকে ওই অবস্থায় দেখে আমি বুঝতে পারছিলাম না কী করব।
ছেলেকে ওই অবস্থায় দেখা আমার জীবনের সব চেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন। শ্রেয়ানকে আমি সেই মুহূর্তে হাসপাতালে নিয়ে যাই। চিকিৎসকরা তাকে দেখেই বেশ কিছু টেস্ট ও স্ক্রিনিং করাতে বলে। অবশেষে, চিকিৎসকেরা আমাকে অফিসে ডাকে।
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, "মিস্টার ঘোষ, আপনার ছেলে ফ্যানকোনি অ্যামেনিয়ায় ভুগছে। এটি অত্যন্ত বিরল একটি রোগ। দেড় লাখে মাত্র একজনের এই রোগ হয়। আপনার ছেলের ক্ষেত্রে এই রোগ আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।"
"খুব তাড়াতাড়ি ওর রক্ত পরিশ্রুত করতে হবে। এবং সেই সঙ্গে বোন ম্যারো প্রতিস্থাপন করতে হবে", অত্যন্ত বিমর্ষ মুখে জানালেন চিকিৎসক।
সবটা শুনে আমি স্তম্ভিত হয়ে যাই। চিকিৎসকেরা আমার হাতে এক গ্লাস জল দিয়ে জিজ্ঞাসা করেন আমি ঠিক আছি কিনা। আমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ি।
আমার ছেলে যে কিনা কালই আমার সঙ্গে খেলছিল, কথা বলছিল, এখন সে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। কী ভাবে হল এটা?
ভাবতে ভাবতেই চিকিৎসকেরা আমায় জানালেন, সম্পূর্ণ চিকিৎসার খরচ প্রায় ২৭ লক্ষ টাকা।
এর পরে প্রায় ৩ বছর কেটে গিয়েছে। শ্রেহান এখনও লড়াই করে চলেছে তার জীবনের জন্য। প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকের কাছ থেকে প্রতিস্থাপনের খরচা জানার পরে আমি ভেঙ্গে পড়়েছিলাম।
আমি সামান্য একজন চাষী। হাতে গোনা কিছু টাকা রোজগার করি। শ্রেহানের বোন ম্যারো প্রতিস্থাপনের খরচা যোগাড়ের ক্ষমতা আমার নেই। আমি ভেবেছিলাম কিছু মাস অপেক্ষা করে যাব এবং এর মাঝেই শ্রেহানকে নিয়ে অন্য হাসপাতালগুলিতে ঘুরে দেখব কে কি বলছে।
কিন্তু প্রত্যেক হাসপাতালই একই কথা বলেছে যে খুব দ্রুত শ্রেহানের এই প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন। নইলে ও বাঁচবে না।
আমি জানি না আমি কী করব। আমি শ্রেহানকে হারাতে পারব না। ডোনর হিসেবে আমার সঙ্গে ওর বোন ম্যারো ম্যাচ করে গিয়েছে। কিন্তু ওই পরিমাণ টাকার যোগাড় না হলে প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়। আমি আমার সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু কিছুতেই এই পরিমাণ টাকা যোগাড়় করতে পারিনি। এখন আপনাদের সাহায্যই আমার শ্রেহানকে বাঁচিয়ে তুলতে পারে। দয়া করে এগিয়ে আসুন। শ্রেহানকে বাঁচান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy