আলাপচারিতা। অনুষ্ঠানমঞ্চে পূর্তমন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যের সঙ্গে কথা বলছেন সাংসদ সুস্মিতা দেব। রবিবার শিলচরে। ছবি: স্বপন রায়
প্রণাম করে বিজেপি নেতা কবীন্দ্র পুরকায়স্থকে শিষ্টাচারের প্রমাণ দিতে চেয়েছিলেন শিলচরের কংগ্রেস সাংসদ সুস্মিতা দেব। মঞ্চ ব্যবহারের সুযোগ ছাড়েননি বিজেপি নেতা, পূর্ত মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্যও। কাছাড়ের জেলাশাসকের কার্যালয়ের ১৫০ বছর উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নানা মন্তব্যে বিদ্ধ করেন শিলচরের দেব পরিবারকে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে মন্তব্যের জন্য কিছুদিন আগে সুস্মিতা দেবের শিষ্টাচার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন প্রবীণ বিজেপি নেতা, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ। আজ জেলা প্রশাসনের অনুষ্ঠানে দু’জনই উপস্থিত হন। মঞ্চে ওঠার আগে কবীন্দ্রবাবুকে দেখেই পা ছুঁয়ে প্রণাম করেন সুস্মিতা দেব। শিষ্টাচারের ‘প্রমাণ’ দেন বিজেপি নেতাকে। পরে বক্তৃতা দিতে গিয়েও কবীন্দ্রবাবুকে ‘ভদ্র রাজনীতির প্রতীক’ বলে খোঁচা মারেন সুস্মিতাদেবী।
প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আগে বক্তৃতা করায় জবাবের সুযোগ ছিল না। সেই কাজ করলেন রাজ্যের পূর্ত, আবগারি ও মৎস্য মন্ত্রী পরিমল শুক্লবৈদ্য। অত্যন্ত মার্জিত ভাষায় তিনি সাংসদকে মঞ্চে বসিয়ে তাঁর পরিবার ও দলকে নাগাড়ে কটাক্ষ করেন। পরিমলবাবু বলেন, ১৯৪৭ সালের আগে শাসনের নামে শোষণ চলছিল। ৪৭-এর পরও শোষণ থেকে রেহাই পাননি এই অঞ্চলের মানুষ। স্বাধীনতা-পরবর্তী অর্ধেক সময় কাছাড় কার্যত দেব পরিবারেরই শাসনে ছিল। কিন্তু আজও রাস্তাঘাট নিয়ে মানুষকে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখাতে হয়। আগামী পাঁচ বছরে রাস্তার দুঃখ ঘোচানোর অঙ্গীকার করেন তিনি।
পরিমলবাবু জানান, বর্ষার মরসুম শেষ হতেই বরাক জুড়ে রাস্তার কাজ শুরু হয়েছে। জাতীয় সড়ক কী গ্রামীণ পথ— সব জায়গায় কাজ চলছে। শিলচরে মিনি সচিবালয় তৈরির নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নেরও অঙ্গীকার করেন পূর্তমন্ত্রী।
সুস্মিতাদেবী-সহ কংগ্রেসের নেতা-মন্ত্রীরা যে বিমানেই চলাচল করেছেন, এ নিয়েও তির্যক মন্তব্য করেন পরিমলবাবু। জানান, তিনি মন্ত্রী হলেও সড়কপথেই যাতায়াত করেন। তাঁর কথায়, ‘‘রাস্তার কষ্ট যাঁরা সহ্য করতে পারেন না, তাঁরাই বিমানে চড়েন। শিলচর-গুয়াহাটি টিকিট না পেয়ে অনেকে কলকাতা হয়ে আকাশপথে গুয়াহাটি গিয়েছেন।’’
এ দিন ভোরে শহরে সাফাই অভিযানের মাধ্যমে জেলাশাসকের কার্যালয়ের সার্ধ-শতবর্ষ উদযাপন শুরু হয়। হয় শোভাযাত্রাও। পরিমলবাবুই পতাকা নাড়িয়ে শোভাযাত্রার সূচনা করেন। সঙ্গে ছিলেন সোনাইয়ের বিজেপি বিধায়ক আমিনূল হক লস্কর ও জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন। পরে বঙ্গভবনে হয় মূল অনুষ্ঠান। সেখানে কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, সুস্মিতা দেব, পরিমল শুক্লবৈদ্য ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শিলচরের পুরপ্রধান নীহারেন্দ্র নারায়ণ ঠাকুর ও চার বিধায়ক কিশোর নাথ, মিহিরকান্তি সোম, অমরচাঁদ জৈন ও আমিনুল হক লস্কর।
শিলচরে উপস্থিত থেকেও এই সরকারি সভা এড়িয়ে গেলেন বিধানসভার ডেপুটি স্পিকার দিলীপকুমার পাল। এ নিয়ে সভাস্থলে নানা গুঞ্জন চলে। দিলীপবাবু অবশ্য জানিয়েছেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় জনজাতি পরিষদের পূর্বনির্ধারিত একটি সভার জন্য ১৫০ বছরের কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারেননি।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পর কাছাড়ের জেলাশাসকের কার্যালয়ের ১৫০ বছরের ইতিহাস তুলে বক্তৃতা করেন কাছাড় কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জ্যোতিলাল চৌধুরী ও বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের শিলচর আঞ্চলিক সমিতির সভাপতি সঞ্জীব দেবলস্কর। অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত জেলাশাসক মানস ভট্টাচার্য এবং জেলা প্রশাসন কর্মচারী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বিক্রমজিৎ চক্রবর্তীও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন। পৌরোহিত্য করেন জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন।
তিনি জানিয়েছেন, এ উপলক্ষে দুই মাসের বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। মার্চের মাঝামাঝি সমাপ্তি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল উপস্থিত থাকবেন বলে কথা দিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy