Advertisement
০৭ নভেম্বর ২০২৪
পাঠানকোট

আমি নির্দোষ, দাবি এসপি সালবিন্দরের

চোখে পট্টি, মুখে কাপড় গোঁজা। পিছন থেকে শক্ত করে বাঁধা হাত দু’টো। হাঁটু গেড়ে বসে ওঁরা তিন জন। জনা পাঁচেক জঙ্গি চক্কর খাচ্ছে আর শাসানি দিচ্ছে বারবার। এ ভাবেই ৩১ ডিসেম্বর রাতের বিবরণ দিচ্ছিলেন গুরদাসপুরের এসপি সালবিন্দর সিংহ।

সংবাদ সংস্থা
চণ্ডীগড় শেষ আপডেট: ০৬ জানুয়ারি ২০১৬ ০৩:০৩
Share: Save:

চোখে পট্টি, মুখে কাপড় গোঁজা। পিছন থেকে শক্ত করে বাঁধা হাত দু’টো। হাঁটু গেড়ে বসে ওঁরা তিন জন। জনা পাঁচেক জঙ্গি চক্কর খাচ্ছে আর শাসানি দিচ্ছে বারবার।

এ ভাবেই ৩১ ডিসেম্বর রাতের বিবরণ দিচ্ছিলেন গুরদাসপুরের এসপি সালবিন্দর সিংহ। সালবিন্দরকে অপহরণ করে তাঁর এসইউভি গাড়িটি নিয়েই জঙ্গিরা পাঠানকোটে হামলার জন্য এগিয়েছিল বলে অভিযোগ। এই তিন দিন যাবতীয় আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন তিনি। গত কাল টানা ছ’ঘণ্টা তাঁকে জেরা করেছে এনআইএ। অপহরণের পরেও কেন জীবিত ছেড়ে দেওয়া হল সালবিন্দরকে, সে প্রশ্নই উঠে এসেছে বার বার। এসপি-র জবানবন্দিতে অসঙ্গতির অভিযোগও উঠেছে। আজ সে সব কিছুর জবাব দিয়েছেন সালবিন্দর। মুখ খুলেছেন সাংবাদিকদের সামনে। বলেছেন, ‘‘আমি নির্দোষ। যা বলেছি তাতে কোনও ভুল নেই। আমি বেঁচে আছি, সেটাই কি আমার দোষ। আমি যদি ভুল হই, ফাঁসি দেওয়া হোক আমায়। ঈশ্বরে আমিও ভয় পাই।’’ সালবিন্দরের দাবি, তিনি যে পুলিশকর্তা প্রাথমিক ভাবে সেটা টেরই পায়নি জঙ্গিরা। পরিচয় জানার পর ফিরে এসেছিল। কিন্তু তত ক্ষণে পালিয়ে গিয়েছেন তিনি।

সালবিন্দর জানান, সে দিন রাতে রাঁধুনি মদন গোপাল এবং পেশায় গয়না ব্যবসায়ী, বন্ধু রাজেশ বর্মার সঙ্গে পাঠানকোটের একটি গুরুদ্বার থেকে ফিরছিলেন তাঁরা। সালবিন্দর পুলিশের পোশাকে ছিলেন না। প্রার্থনায় গিয়েছিলেন। তাই সঙ্গে ছিল না বন্দুকধারী কোনও রক্ষীও। সরকারি গাড়ি ব্যবহার করছিলেন ঠিকই। তবে নীল বাতিটা জ্বলছিল না। পিঠে ব্যাগ, সামরিক পোশাকে সশস্ত্র চার-পাঁচ জন মাঝ রাস্তায় হঠাৎ গাড়িটি থামায়। রাস্তার পাশে কোনও আখের খেতে হয়তো গা ঢাকা দিয়েছিল ওরা। হাতে ছিল একে-৪৭ রাইফেল। রাতের অন্ধকারে সালবিন্দররা ঠাহরই করতে পারেননি ঠিক কত জন ছিল দলটায়। সেনা ভেবে গাড়ি দাঁড় করিয়েছিলেন। মুহূর্তে ভুল বুঝতে পারেন।

গাড়িটি ছিনতাই করে নেয় জঙ্গিরা। বেঁধে ফেলা হয় সালবিন্দরদের। নিজেদের মধ্যে পঞ্জাবি, হিন্দি আর উর্দুতে কথা বলছিল জঙ্গিরা। ফোনে ‘কম্যান্ডার সাহিব’-কে অপহরণের খবরও জানিয়েছিল। বলছিল, ‘‘এলাকা আপাত শান্ত। লক্ষ্যে পৌঁছতে কোনও অসুবিধে হবে না।’’ সালবিন্দর জানিয়েছেন, দশ মিনিট অন্তর অন্তর ‘কম্যান্ডার’-এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল জঙ্গিরা। চালকের আসনের পাশেই ছিল ‘মেজর সাহিব’। ‘কম্যান্ডার’কে মূলত সেই ফোনগুলি করছিল। সালবিন্দর জানিয়েছেন, প্রথমে পথ ভুল করেছিল জঙ্গিরা। দিক ঠিক করতে তারা ‘জিপিএস’ ব্যবহার করছিল বলেও দাবি তাঁর।

এরই মধ্যে সালবিন্দরের মোবাইল বেজে ওঠে এক বার। ফোনের ওধারে ছিলেন তাঁর রক্ষী। ফোনটি ধরে জঙ্গিরাই। ‘সালাম আলাইকমম’ বলে সম্বোধনও করে। খটকা লাগে জঙ্গিদের। পাঠানকোটের বায়ুসেনা ঘাঁটি থেকে প্রায় ৫০০ মিটার দূরত্বে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় সালবিন্দরদের। হাঁটু গেড়ে বসার নির্দেশ দেয় এক জঙ্গি। নড়চড় করলে গুলি করে হত্যার হুমকিও দেয়। বন্দুকের বাঁট দিয়ে মারধরের পর মোবাইল, টাকাকড়ি ছিনিয়ে নিয়ে চম্পট দেয় জঙ্গিরা।

পুলিশের এসইউভিতে ছিল বলেই পাঠানকোটের পথে আর বাধার সম্মুখীন হতে হয়নি জঙ্গিদের। সালবিন্দরের দাবি, তাতেই তাঁর পরিচয় মালুম হয়ে গিয়েছিল। ফিরে এসেছিল আগের জায়গায়। তত ক্ষণে পালিয়েছেন সালবিন্দর-গোপাল। খুব বেশি দূর যেতে পারেননি রাজেশ। জঙ্গিরা তাঁকে ধরে ফেলে। সালবিন্দরের পরিচয় গোপন রাখার জন্য রাজেশের গলায় ছুরি চালানো হয়। রাজেশ এখন চিকিৎসাধীন। সালবিন্দর জানান, তাঁর কাছে তিনটি মোবাইল ছিল। দু’টি কব্জা করেছিল জঙ্গিরা। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে শুক্রবার ভোররাতে কাছের একটি গ্রামে পৌঁছন তিনি। সেখান থেকেই ফোন করেন সিনিয়রদের। সালবিন্দরের আক্ষেপ, কর্তৃপক্ষ তখনই পদক্ষেপ করলে হয়তো এড়ানো যেত পাঠানকোট-হামলা।

অন্য বিষয়গুলি:

national news pathankot terrorist
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE