অপরাধের পর পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিতে অনেক সময় চুল-দাড়ি রেখে কিংবা ছেঁটে মুখের আদল অন্য রকম করে ফেলার চেষ্টা করেন অপরাধীরা। অনেকে কামিয়ে ফেলেন মাথা ও ভ্রু। কখনও তাঁরা ‘সফল’ হন, কখনও ধরা পড়ে যান। বিহারের পটনার পারস হাসপাতালের আইসিইউয়ে ঢুকে চিকিৎসাধীন গ্যাংস্টার চন্দন মিশ্রকে খুনের পরে তৌসিফ খান ওরফে বাদশাও সেই পুরনো ছক কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছিলেন। পুলিশ সূত্রে খবর, চার সঙ্গীকে নিয়ে হাসপাতালে গুলিবর্ষণের পরে অনলাইনে নাপিত ডেকেছিলেন বাদশা। ভাড়াটে খুনি জানতেন, পুলিশের কাছে তাঁর ছবিছাবা আছে। তাই মুখের আদল বদলে ফেলতে নতুন চুলের ছাঁট করান তিনি।
গুলিকাণ্ডের এক দিন পরে কলকাতার আনন্দপুর এলাকার একট গেস্ট হাউস থেকে যখন সঙ্গী-সহ বাদশাকে পাকড়াও করে বিহার পুলিশ। কিন্তু এটাই বাদশা তো? বার বার ধৃতের মুখ দেখে নিশ্চিত হতে হয়েছে পুলিশকে যে আসল খুনিকে ধরেছে তারা।
বিহার পুলিশের একটি সূত্রে খবর, চন্দন খুনে ধৃত বাদশাকে যখন তারা ধরে, তাঁর চুল ছোট করে ছাঁটা ছিল। তাতে একেবারে অন্য রকম লাগছিল অভিযুক্তকে। এক তদন্তকারীর কথায়, ‘‘চট করে কেউ বলতে পারবে না যে এটাই বাদশা। খুব পরিচিত কেউ ছাড়া ওকে ঝট করে চেনা মুশকিল ছিল। আগে বাদশার একমাথা চুল ছিল। যখন ওকে ধরা হল, তখন একেবারে ছোট করে ছাঁটা ছিল।’’ তিনি জানান, বাদশাই যে তাঁদের হাতে, সেটা নিশ্চিত করতে অনেক সময় লেগেছে।
আরও পড়ুন:
গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার পটনার হাসপাতালে গুলি চলে। চিকিৎসার জন্য প্যারোলে ছাড়া পাওয়া বিহারের কুখ্যাত গ্যাংস্টার চন্দন আইসিইউয়ে খুন হন। তদন্তে নেমে হাসপাতালের সিসিটিভি খুলে বসে পুলিশ। তাতে দেখা যায়, তৌসিফ এবং সঙ্গীরা হাতে বন্দুক নিয়ে আইসিইউয়ে ঢুকছেন। ‘অপারেশন’ করে কয়েক মিনিটের মধ্যে হাসপাতাল ছাড়েন ‘স্থানীয় বাসিন্দা’ বাদশা।
সিসিটিভিতে বাদশাকে যেমন দেখা গিয়েছিল, ধরা পড়ার পর তেমনটা ছিলেন না ভাড়াটে খুনি। তিন সঙ্গীকে নিয়ে গাড়ি করে পটনা থেকে কলকাতা এসেছিলেন বাদশা। এক মহিলাকে পাকড়াও করে ওই তথ্য জানতে পারে পুলিশ। সেই অনুযায়ী কলকাতা পুলিশকেও খবর দেওয়া হয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে। গত ১৭ জুলাই ঘটনার রাতে (সাড়ে ১০টা নাগাদ) ডানকুনিতে বাদশাদের গাড়ি ঢোকার পর থেকে তক্কে তক্কে ছিল পুলিশ। অবশেষে আনন্দপুর থেকে বাদশাদের ধরা হয়।
জানা যায়, খুনের পরে একটি অনলাইন অ্যাপ ব্যবহার করে নাপিত ডেকেছিলেন চন্দন খুনে মূল অভিযুক্ত। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা সফল হয়নি। গত সোমবার বাদশাদের তোলা হয়েছিল কলকাতার আলিপুর আদালতে। তার পর তাঁদের দু’দিনের ট্রানজ়িট রিমান্ডে বিহার নিয়ে গিয়েছে নীতীশ কুমারের পুলিশ।