Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
অরুণাচলে বিজেপি-ছায়া

সাফ কংগ্রেস, দলবদল মুখ্যমন্ত্রীরও

শেষপর্যন্ত কংগ্রেসের হাত থেকে ফস্কেই গেল অরুণাচল। সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যে সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার দু’মাসের মাথায়। খোদ মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু আজ সকালে নাটকীয় ভাবে কংগ্রেসের ৪২ জন বিধায়ককে নিয়ে বিজেপির শরিক দল ‘পিপল্স পার্টি অফ অরুণাচল’-এ যোগ দিয়েছেন।

পেমা খান্ডু

পেমা খান্ডু

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৫৫
Share: Save:

শেষপর্যন্ত কংগ্রেসের হাত থেকে ফস্কেই গেল অরুণাচল। সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যে সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার দু’মাসের মাথায়। খোদ মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু আজ সকালে নাটকীয় ভাবে কংগ্রেসের ৪২ জন বিধায়ককে নিয়ে বিজেপির শরিক দল ‘পিপল্স পার্টি অফ অরুণাচল’-এ যোগ দিয়েছেন। কংগ্রেসে থেকে গিয়েছেন মাত্র এক জন বিধায়ক। তিনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নাবাম টুকি। এই মুহূর্তে অরুণাচল বিধানসভায় তিনিই রইলেন বিরোধী দলের এক মাত্র প্রতিনিধি।

ফলে পরিস্থিতি এমন দাঁড়াল যে কংগ্রেসের পক্ষে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ারও কোনও উপায় রইল না। এত বড় আকস্মিক পালাবদল ঘুণাক্ষরেও টের পাননি দিল্লির এআইসিসির নেতারা। সে কথা কবুল করে এখন তাঁরা দোষ চাপাচ্ছেন নরেন্দ্র মোদী আর অমিত শাহের উপরে। তাঁদের অভিযোগ, যে নরেন্দ্র মোদী মুখে সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর বড় বড় কথা বলেন, তিনিই গণতন্ত্রের টুঁটি চিপে অর্থ বলে চাপ দিয়ে কংগ্রেস বিধায়কদের শিবির বদল করালেন। অরুণাচলের পর মেঘালয়, মণিপুরেও নজর রয়েছে বিজেপির। তবে তাদের পাল্টা প্রশ্ন, কংগ্রেস নিজের বিধায়কদের সামলাতে না পারলে দায় কার?

গত বেশ কয়েক দশক ধরেই দেখা গিয়েছে, দিল্লিতে যার সরকার, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলি সেই দলের দিকেই ঝোঁকে। তাদের ধারণা, কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় রেখে এগোলে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ পাওয়া সহজ হয়। দলবদলের যুক্তি হিসেবে আজ সে কথাকেই সামনে এনেছেন পেমা। তাঁর বক্তব্য, রাজ্যের ঘাড়ে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার দেনা রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বাধ্য হয়েই তাঁরা কেন্দ্রের কাছাকাছি থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর অরুণাচলের দলত্যাগী বিধায়করা জানাচ্ছেন, পেমারা কংগ্রেসে যাওয়ার পরে কেন্দ্র থেকে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি করা হচ্ছিল। উন্নয়নে টাকা পেতে সমস্যা হচ্ছিল। ছিল অন্য বিভিন্ন চাপ ও মন্ত্রীদের নিজের স্বার্থের প্রশ্নও। তার পরই নতুন রাজনৈতিক সমীকরণে পৌঁছনোর কথা ভাবা হয়।

ঠিক দু’মাস আগে এ ভাবেই দুপুর থেকে রাতের মধ্যে ভোল বদলে ফেলেছিলেন অরুণাচল প্রদেশের ২১ জন বিধায়ক। মুখ্যমন্ত্রী কালিখো পুলকে গুয়াহাটিতে একা ফেলে ইটানগরে ফিরে গিয়েছিলেন তাঁরা। ফের যোগ দিয়েছিলেন কংগ্রেসে। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন পেমা খান্ডু। অপমানে, অভিমানে আত্মঘাতী হন পুল। ওই ঘটনার ৬০ দিনের মাথায় পুলের দলেই যোগ দিলেন কংগ্রেস বিধায়করা। তবে এই অন্ধকারেও কংগ্রেস নেতৃত্বের সান্তনা একটাই, এরা অন্তত সরাসরি বিজেপিতে যোগ দেননি!

বিধানসভায় ১১ জন বিজেপি বিধায়ক পেমার আজকের পদক্ষেপকে সমর্থন জানিয়েছেন। ৪৩ জন দলত্যাগী ছাড়াও ২ জন নির্দল বিধায়কও পিপিএতে যোগ দেবেন বলে জানিয়েছেন। কংগ্রেসে থেকে গিয়েছেন নাবাম টুকি। এ ছাড়া, কংগ্রেসের বাকি ২ বিধায়কের পদত্যাগ সংক্রান্ত মামলা অবশ্য এখন বিচারাধীন রয়েছে। ফলে এখন ৫৭ জনের বিধানসভায় পেমা ৫৬ জনেরই সমর্থন পাচ্ছেন।

অসম জয়ের পরেই বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ উত্তর-পূর্বকে ‘কংগ্রেস-মুক্ত’ করার জন্য নর্থ ইস্ট ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়্যান্স বা নেডা গড়েন। তার আহ্বায়ক হন হিমন্তবিশ্ব শর্মা। পিপিএ ছিল নেডার শরিক। কিন্তু পুলকে অনেক চাপ দিয়েও সরাসরি বিজেপিতে যোগ দেওয়াতে পারেননি হিমন্ত। জুলাইয়ে অমিত শাহর উপস্থিতিতে গুয়াহাটিতে নেডার বৈঠক চলার সময়ই সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় অরুণাচলে ডিসেম্বরের বিধানসভা অধিবেশনের আগের স্থিতাবস্থা ফেরাতে হবে। তার পরেই নাটকীয় পালাবদল হয়। প্রাক্তন কংগ্রেসি বিধায়করা ফের কংগ্রেসে ফেরেন। পুলকে ব্রাত্য করে ১৭ জুলাই পেমা খান্ডু মুখ্যমন্ত্রী হন। অরুণাচলে রাজনৈতিক জটিলতার জন্য দায়ী করা হয় তদনীন্তন রাজ্যপাল জ্যোতিপ্রসাদ রাজখোয়াকে। তাঁকে সম্প্রতি ইস্তফার জন্য চাপ দেওয়া হয়। ইস্তফা না দেওয়ায় সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁকে।

হিমন্ত অবশ্য কিছুই না জানার ভান করে বিকেলে বলেন, “আমি বা বিজেপির কেউই এ সবের কিছুই জানতাম না। সরকার বদলের সম্ভাবনার পরে পেমা ফোনে আমায় জানান। তখনও ভাবিনি ৪৩ জন কংগ্রেস সদস্য দল ছাড়বেন!” কিন্তু প্রদেশ বিজেপি সভাপতি তাপির

গাও খুশি চেপে রাখতে পারেননি। তিনি বলেন, ‘‘অরুণাচলকে পাকাপাকি কংগ্রেসমুক্ত করার সূচনা হল আজ। যে হেতু পিপিএ নেডার শরিক, তাই এনডিএর হাতে আরও একটি রাজ্য বাড়ল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Pema Khandu Arunachal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE