লাল কেল্লা মেট্রো স্টেশনের কাছে ভিড় রাস্তায় গাড়ি বিস্ফোরণের ষোলো ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও এলাকা থেকে ঝলসানো মাংসের গন্ধ যাচ্ছে না।
গত কাল বিস্ফোরণের কিছু ক্ষণ পরেই নেতাজি সুভাষ মার্গ সিল করে দিয়েছিল দিল্লি পুলিশ। রীতিমতো লাঠিচার্জের ভয় দেখিয়ে অপেক্ষমাণ জনতাকে তাড়িয়ে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যাতে আহতদের চিকিৎসার দ্রুত ব্যবস্থা করা যায়। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল মেট্রো স্টেশন। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে কোনও অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় মানুষ এবং বিরোধী রাজনীতিকরা। বেসরকারি অ্যাম্বুল্যান্সের দুই চালকের মুখথেকেও এখনও আতঙ্কের ছাপ কাটেনি। একই ভাবে গত কাল রাতে প্রাথমিক ভাবে অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে সরকারি হাসপাতাল এলএনজিপি-র বিরুদ্ধেও।
অ্যাম্বুল্যান্স-চালক মহম্মদ ফায়জান এবং মহম্মদ হাসান তাঁদের পেশাগত জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়টা কাটিয়েছেন গত কাল। পাঁচটি ছিন্নবিচ্ছিন্ন দেহ তাঁরা কার্যত রাস্তা থেকে কুড়িয়েছেন এবং নিয়ে গিয়েছেন নিকটবর্তী এলএনজিপি হাসপাতালে। আজ তাঁরা জানাচ্ছেন, “অফিস থেকে ফোন পেয়েই লাল কেল্লায় দৌড়ই। শুধু বলা হয়েছিল বিস্ফোরণ হয়েছে। সাত মিনিটে ওই জায়গায় পৌঁছই। কিছু লোক তত ক্ষণে রাস্তা থেকে দেহাবশেষ কুড়োচ্ছেন। আমরা হাত লাগাই। রাস্তায় কোথাও হাত পড়ে রয়েছে, কোথাও পা, কোথাও মাথার খুলি। আমাদের অ্যাম্বুল্যান্সে এমনিতে দু’জনের বেশি আঁটে না। কিন্তুকাল তাতেই পাঁচ জনকে নিয়ে হাসপাতালে গিয়েছি।”
আপ-এর বিধায়ক সৌরভ ভরদ্বাজের অভিযোগ, “কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী এসে বাণী দিয়ে গিয়েছেন অনেক। কিন্তু সরকারের তরফ থেকে কোনও অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয়নি। অভিযোগ, হাসপাতালের তরফ থেকেও উদ্যোগী হয়ে কোনও অ্যাম্বুল্যান্স পাঠানো হয়নি বাকি দেহ বা আহতদের নিয়ে আসার জন্য। যাঁরা হাসপাতালে গিয়েছিলেন, তাঁদের বলা হয়েছে, আপনারা ব্যবস্থা করে নিয়ে আসুন।”
আজ সকালে ভোরের আলো ফুটলে দেখা যায়, বিস্ফোরণস্থল থেকে ৭০ মিটার দূরে দিগম্বর জৈন মন্দিরের ছাদে একাধিক মানবশরীরের দেহাবশেষ পড়ে রয়েছে। ফরেন্সিকের দল এসে সে সব উদ্ধার করে নিয়ে যায়। মন্দিরের কর্মীদের বক্তব্য, “বিস্ফোরণের ফলে আমাদের মন্দিরের কাচ ভেঙে গিয়েছে। দেওয়ালও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।” মন্দিরটি প্রায় চারশো বছরের পুরনো।
এলএনজিপি হাসপাতাল আজ পুলিশি নিরাপত্তায় ঘিরে রাখা হয়েছিল। বাইরে আহতদের বাড়ির লোকেদের জটলা, সংবাদমাধ্যমের ভিড়। ছিলেন কিছু সমাজকর্মীও। ভিতরে মাছি গলতে দেওয়া হয়নি। “আমার বন্ধু জয়বীর এসেছিল, উত্তরপ্রদেশ থেকে। রাতে বিস্ফোরণের খবর আসে। অন্য বন্ধুদের কাছে শুনি, জয়বীর পাঁজরে চোট পেয়েছে। শুনেই দৌড়ে আসি। এখন ও ভিতরে, চিকিৎসা চলছে। এক জনের বেশি যেতে দিচ্ছে না বলে বাইরে দাঁড়িয়ে আছি কাল রাত থেকে,” বললেন দিল্লির বাসিন্দা শিবশঙ্কর যাদব। এমনই উদ্বেগ নিয়ে আত্মীয়স্বজন হাসপাতালের বাইরের রাস্তায় আতঙ্কের প্রহর গুনছেন। গুনেই চলেছেন।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)