Advertisement
E-Paper

একুশের আগের রাতেই স্মরণ ভাষা শহিদদের

‘‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলতে পারি?’’এক সঙ্গে গলা মিলিয়ে গাইছিল কয়েক হাজার মানুষের মিছিল। অনেকের হাতে মোমবাতি। একুশের আগের বিকেল থেকেই ভাষা শহিদদের স্মরণ করতে শুরু করল বনগাঁর মানুষ। এই প্রথম বার।

অরুণাক্ষ ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:২৯
ভাষা শহিদদের স্মরণে মোমবাতি মিছিল বনগাঁয়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

ভাষা শহিদদের স্মরণে মোমবাতি মিছিল বনগাঁয়। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

‘‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলতে পারি?’’

এক সঙ্গে গলা মিলিয়ে গাইছিল কয়েক হাজার মানুষের মিছিল। অনেকের হাতে মোমবাতি।

একুশের আগের বিকেল থেকেই ভাষা শহিদদের স্মরণ করতে শুরু করল বনগাঁর মানুষ। এই প্রথম বার।

এত বছর ধরে বাংলাদেশে একুশে ফেব্রুয়ারি, ভাষা দিবসের আগের বিকেল থেকেই অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যেত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা জানাতেন মন্ত্রী, আমলা থেকে সাধারণ মানুষ। অন্য দিকে, একুশের সকালে ভারতের পক্ষ থেকে ভাষা দিবস পালন করা হতো পেট্রাপোল সীমান্তে। বাংলাদেশ একুশের দিনে অনুষ্ঠান করতো বেনাপোল সীমান্তে। অল্প সময়ের জন্য দু’দেশের ‘নো ম্যানস ল্যান্ডস্’ খুলে দেওয়া হতো। সেখানে জড়ো হতেন দু’দেশের মানুষ।

এ বার কিন্তু ছবিটা অন্য।

এই প্রথম, একুশের আগের বিকেল থেকেই ভাষা দিবস উদযাপন শুরু করলেন এ দেশের মানুষ। হল মোমবাতি মিছিল, ভাষা শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। সোমবার দুপুর থেকেই বনগাঁর ত্রিকোণ পার্কের নীলদর্পণ প্রেক্ষাগৃহের সামনে জমায়েত হতে শুরু করেন অগুনতি সাধারণ মানুষ। সেখানে ছিলেন ছাত্রী সৌজন্যা বসু, ছাত্র শ্রমণ দে, সাহিত্যিক শ্যামলেন্দু চৌধুরী, নৃত্যশিল্পী ঝর্না ভট্টাচার্য, সঙ্গীতশিল্পী পুষ্পিতা শীলের মতো বিভিন্ন বয়স এবং ভিন্ন পেশার মানুষ। বিকেলে তাঁদের হাতে হাতে তুলে দেওয়া হয় মোমবাতি। শুরু হয় মিছিল। মুখে ভাষা দিবসের গান। ইছামতীর উপরে রাখালদাস সেতু পেরিয়ে মিছিল পৌঁছে যায় যশোর রোড এবং মিলিটারি রোডের সংযোগস্থলে। তখন সন্ধ্যা নামছে। সেখানে পৌঁছে বনগাঁ পুরসভার পক্ষ তৈরি করা স্থায়ী ভাষা শহিদ বেদিতে মোমবাতি জ্বালিয়ে দেন কেউ কেউ। অনেকে ফুল দেন। শ্রদ্ধাজ্ঞাপন চলে রাত ১২টা পর্যন্ত।

শহিদ বেদির একপাশে তৈরি হয়েছে অনুষ্ঠান মঞ্চ। সেখানে ভাষা শহিদদের স্মরণে অনুষ্ঠান চলে বেশি রাত পর্যন্ত। অন্য বছরের ব্যতিক্রম হয়নি বাংলাদেশেও। শুক্রবার বিকেল থেকেই ঢাকা-সহ বাংলাদেশের নানা প্রান্তে শুরু হয়েছে অনুষ্ঠান। রাত বারোটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে মাতৃভাষা স্মারক শহিদ বেদিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের শীর্ষ কর্তারা।

এ দিন বনগাঁর অনুষ্ঠান মঞ্চে প্রকাশিত হয়, ভারত-বাংলাদেশের সাহিত্যিকদের লেখা পত্রিকা ‘মুখ’। পত্রিকার সম্পাদক পার্থসারথি দে ও দীপঙ্কর দাস জানান, প্রতি বছর তাদের একুশে ফেব্রুয়ারি সংখ্যায় নির্দিষ্ট বিষয় থাকে। এ বারের বিষয়, ‘দুই বাংলার ভূত।’ ওই মঞ্চে ছিলেন বাংলাদেশের নাট্য গবেষক তথা অধ্যাপক বিপ্লব বালা। তিনি বলেন, ‘‘প্রতি বছর আমি একুশের আগের রাতে ঢাকায় থাকি। এই প্রথম ঢাকার ধাঁচে একুশের আগের রাতে ভারতেও অনুষ্ঠান হচ্ছে। তাই আমন্ত্রণ পেয়ে চলে এসেছি। এখানে না এলে বুঝতে পারতাম না, বাংলা ভাষাকে নিয়ে এ পার বাংলারও এত আবেগ রয়েছে।’’
এ ছাড়াও, শুক্রবারের মঞ্চে ছিলেন, সঙ্গীতশিল্পী শুভেন্দু মাইতি। তাঁর কথায়, ‘‘যে ভাষায় কথা বলি, যে ভাষায় গান গাই, সেই ভাষাকে শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠানে আসতে পেরে খুব ভাল লাগছে।’’

একুশের আগের রাতের মতোই জমকালো অনুষ্ঠান রয়েছে আজ, মঙ্গলবার। বনগাঁ পুরসভার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, একুশের সকালে সীমান্তের ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ এই প্রথম দু’দেশের যৌথ উদ্যোগে অনুষ্ঠান হবে।

সেখানে উপস্থিত থাকার কথা দু’দেশের শিল্পী, বুদ্ধিজীবীদের। বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান শঙ্কর আঢ্য জানান, এই প্রথম বাংলাদেশের বেনাপোল এবং ভারতের পেট্রাপোল সীমান্তে ভাষা দিবস উপলক্ষে রক্তদান শিবির হবে।

ভারত থেকে সংগৃহীত রক্ত যাবে বাংলাদেশের ব্ল্যাড ব্যাঙ্কে এবং বাংলাদেশের রক্ত আসবে ভারতে। শঙ্করবাবুর কথায়, ‘‘বনগাঁর মানুষের দীর্ঘ দিনের দাবি ছিল, বাংলাদেশের ধাঁচে একুশের আগের বিকেল থেকে অনুষ্ঠান শুরু করা। সেই দাবিকেই সম্মান জানাতে এই উদ্যোগ।’’

Martyr International Mother Language Day
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy