ফাইল চিত্র
এক মুসলিম বৃদ্ধকে ধরে চড়-থাপ্পড় মেরে ‘বন্দে মাতরম’ ও ‘জয় শ্রীরাম’ বলাল এক দল লোক। জোর করে তাঁর দাড়ি কেটে দেওয়া হল। নির্জন জায়গায় তুলে নিয়ে গিয়ে হাত বেঁধে আটকে রাখা হল। বৃদ্ধ ছুতোর মিস্ত্রি আব্দুল সামাদ সেই ঘটনার কথা বলছেন— এমন একটি ভিডিয়ো টুইটারে পোস্ট ও শেয়ার করায় পুলিশ টুইটার কর্তৃপক্ষ, বেশ কিছু সাংবাদিক এবং কংগ্রেসের কয়েক জন নেতার বিরুদ্ধে ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করা এবং দাঙ্গা লাগানোর চক্রান্ত’-এর অভিযোগ এনে এফআইআর দায়ের করেছে। যোগী আদিত্যনাথের উত্তরপ্রদেশের ঘটনা। পুলিশের অভিযোগ, ৫ জুন সামাদের হেনস্থার ঘটনার তদন্ত করে তারা দুষ্কৃতীদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলিম, দুই ধরনের লোকই পেয়েছে। সুতরাং এ’টি সাম্প্রদায়িক ঘটনা নয়। বরং অভিযুক্তেরাই সাম্প্রদায়িক রং দিয়ে ঘটনাটিকে সামাজিক মাধ্যমে প্রচার করে দাঙ্গা লাগানোর চক্রান্ত করেছিল। হেনস্থার ঘটনাটির একটি ‘কাহিনি’-ও পেশ করেছে পুলিশ, সামাদের পরিবার যাকে মিথ্যা ও বানানো বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
গাজিয়াবাদের লোনি থানায় পুলিশ যাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে, তার মধ্যে টুইটার কর্তৃপক্ষ ছাড়া রয়েছেন অনলাইন সংবাদ মাধ্যম ‘দ্য অয়্যার’-এর কর্তৃপক্ষ, সাংবাদিক রানা আইয়ুব, সাবা নকভি, মহম্মদ জুবায়ের এবং উত্তরপ্রদেশের বেশ কিছু কংগ্রেস নেতা। ঘটনাক্রমে, কেন্দ্রের নতুন আইনে রক্ষাকবচ উঠে যাওয়ার পরে টুইটারের মতো কোনও সামাজিক মাধ্যমের বিরুদ্ধে এই প্রথম এমন এফআইআর করল পুলিশ। গাজিয়াবাদ পুলিশের এক কর্তা ইরাজ রাজার বক্তব্য— সামাদের হেনস্থা, তাঁকে ‘জয় শ্রীরাম’ বা ‘বন্দে মাতরম’ বলানোর সঙ্গে সাম্প্রদায়িক উদ্দেশ্য ছিল না। কারণ দুই সম্প্রদায়ের লোকই সেই দলে ছিল বলে পুলিশ খবর পেয়েছে। ৩ জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে। কিন্তু অনলাইন সংবাদ মাধ্যমটি ঘটনা ‘যাচাই না-করেই’ সামাদের ভিডিয়োটি প্রচার করেছে। হাজার হাজার লোক সেই ভিডিয়ো টুইটারে আদান-প্রদান করেছে। পুলিশের দাবি, টুইটারের উচিত ছিল ঘটনার ‘সত্যতা’ খতিয়ে দেখে ওই ভিডিয়ো সরিয়ে নেওয়া। আর, এক দল সাংবাদিক ও কংগ্রেস নেতা সামাদের ভিডিয়ো টুইট করেছে উত্তরপ্রদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে। তাই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ।
জুনের ৫ তারিখে সন্ধ্যায় সামাদ তাঁর গ্রামের বাড়ি থেকে গাজিয়াবাদে ফেরার সময়ে এক দল লোক তাঁর উদ্দেশ্যে কটূক্তি করতে থাকে। পরে তাঁকে মারধর করে, ‘জয় শ্রীরাম’ বলায়। বৃদ্ধ অভিযোগ করেছেন— এখানেই শেষ নয়, তাঁর দাড়ি কেটে দেওয়া হয়। মারতে মারতে জঙ্গলের ধারে একটি বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বেঁধে রাখা হয়। পর দিন লোনি থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন সামাদ। যোগীর পুলিশ এ ঘটনায় সাম্প্রদায়িক রং খুঁজে পায়নি। তারা এই ঘটনার নতুন একটি বয়ান দিয়েছে। পুলিশ বলেছে, সামাদ তাবিজ-কবচ বেচতেন। কোনও একটি তাবিজ কাজ না-করায় তাঁর পূর্ব পরিচিত এক দল লোক ৫ তারিখে তাঁকে সামনে পেয়ে হেনস্থা করে। লখনউয়ের সাংবাদিকদের একাংশের অভিযোগ—এই ঘটনা থেকে পরিষ্কার, পুলিশ যে শুধু হিন্দুত্ববাদী দুষ্কৃতীদের আড়াল করতে চাইছে তাই নয়, প্রতিবাদীদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা ছড়ানোর অভিযোগ এনে কণ্ঠরোধও করতে চাইছে। তা ছাড়া, স্থানীয়রা জানেন সামাদ কোনও কালেই তাবিজ-কবচের কারবার করেন না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy