বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর কপালেও ভাঁজ ফেলেছে মাস পয়লায় মানুষের সম্ভাব্য বাড়তি ভোগান্তি। উত্তরপ্রদেশের ভোটে যাতে এই ভোগান্তি দাঁত ফোটাতে না পারে, এ জন্য ক্ষোভ দানা বাঁধার আগেই সেখানে প্রচারের অভিমুখকে নোট বাতিলের পক্ষে প্রচারে পরিণত করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। উত্তরপ্রদেশে বিজেপির চারটি প্রচার রথ এখন ঘুরছে। গ্রামেগঞ্জে সব চেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে অসংগঠিত শ্রমিকেরা। সে জন্য গ্রামে প্রচারে বাড়তি জোর দিতেও বলেছেন তিনি। বিজেপি কর্মীরা বোঝাবেন, ধনীদের কালো টাকা উদ্ধারের জন্যই মোদী নোট বাতিলের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এর ফলে গরিবের কিছু অসুবিধে হলেও তা একেবারেই সাময়িক।
মাস পয়লায় মানুষের বাড়তি ভোগান্তির আশঙ্কায় বুধবার সকালে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেলের সঙ্গে কথা বলেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফ থেকে জেটলিকে আশ্বাস দেওয়া হয়, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তার পরেই অর্থ মন্ত্রকের শীর্ষ সূত্র থেকে বলা হয়, বুধবার সন্ধ্যা থেকেই ব্যাঙ্কগুলিতে নগদের জোগান বাড়ানো হচ্ছে। ডিসেম্বরের ১ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত ব্যাঙ্কে বাড়তি নগদ জোগান দেওয়া হবে। এখন দিনে যত নগদ পাঠানো হচ্ছে, তার থেকে অন্তত ২০-৩০ শতাংশ বাড়ানো হবে। ব্যাঙ্কেও টাকা তোলার ভিড় সামলাতে বাড়তি কাউন্টার ও যথেষ্ট কর্মী থাকবেন।
সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ, বাজারে এ বার ২০০০-এর বদলে ৫০০ টাকার নোট বেশি আসবে বলে আজ অর্থ মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে। ২০০০-এর নোট হাতে পেলেও তা ভাঙাতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল। অর্থ মন্ত্রকের বক্তব্য, টাঁকশালগুলি এখন ৫০০-র নোটই মূলত ছাপছে। মাঝে মধ্যে ২০০০ টাকার নোট ছাপা হচ্ছে। যদিও বাজারে তার ছাপ পড়তে কিছুটা সময় লাগবে। কারণ একটি নোট ছাপার পরও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যাবতীয় নিয়মকানুন মেনে তা বাজারে আসতে ২১ দিন সময় লেগে যায়। ফলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে শোধরাবে।
এই আশ্বাসে বাস্তবে কতখানি কাজ হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ সোম ও মঙ্গলবার, এই দু’দিনই দেশের প্রায় সমস্ত ব্যাঙ্কে নগদের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। সপ্তাহে ২৪ হাজার টাকার উর্ধ্বসীমা থাকলেও এমনিতেই কম টাকা মিলছিল। আরও কম মিলেছে। অর্থ মন্ত্রক সূত্রের অবশ্য দাবি, বুধবার সন্ধ্যার পর থেকে নগদের জোগান বাড়ানো হবে বলেই গত দু’দিন নোটের জোগান কিছুটা কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। নোট বাতিলের প্রস্তুতি হিসেবে ৮ নভেম্বরের আগে থেকেই রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বাড়তি নোট ছাপতে শুরু করেছিল। তার পরেও নিয়মিত নতুন নোট ছাপা হচ্ছে। নতুন ৫০০ ও ২০০০ টাকার নোটের পাশাপাশি নতুন ১০০ টাকার নোটও বাজারে ছাড়া হয়েছে। অর্থ মন্ত্রকের হিসেবে, ৮ নভেম্বর বাজারে যত ১০০ টাকার নোট ছিল, এখন তার দেড় গুণ নোট রয়েছে। কিন্তু অনেকেই ১০০ টাকার নোট ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। ওই নোটের চাহিদা তুঙ্গে বলে তার কালোবাজারিও চলছে। ফলে সাধারণ মানুষ এর ফল চোখে দেখতে পারছে না।
সরকারের তরফে এই যুক্তি দেওয়া হলেও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তথ্য হল, পুরনো ৫০০-১০০০ টাকার নোটে বাজারে ১৪ লক্ষ কোটি টাকা ছিল। তা অচল হয়ে যাওয়ায় নগদের পরিমাণে বিরাট শূন্যস্থান তৈরি হয়েছে। দু’দিন আগে পর্যন্ত ব্যাঙ্ক বা এটিএম থেকে তোলা হয়েছে ২.১৬ লক্ষ কোটি টাকা। যদি ধরে নেওয়া হয়, এর সবটাই নতুন নোটে দেওয়া হয়েছে, তা হলেও মাত্র ১৫ শতাংশ শূন্যস্থান পূরণ হয়েছে।
আজ থেকে ‘জন ধন’ অ্যাকাউন্ট থেকে মাসে ১০ হাজার টাকা তোলার ঊর্ধ্বসীমা বলবৎ হয়েছে। কেওয়াইসি না থাকলে মিলবে ৫ হাজার টাকা। সরকারের দাবি, যারা গরিবের ‘জন ধন’ অ্যাকাউন্টগুলি নিজেদের কালো টাকা জমা করেছেন, তাদের কথা ভেবেই এই ব্যবস্থা। কিন্তু এর ফলে গরিব মানুষ নিজের প্রয়োজনেও টাকা তুলতে পারবেন না। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের যুক্তি, এর থেকে বেশি টাকা প্রয়োজন বলে ব্যাঙ্কের ম্যানেজারের কাছে নথিপত্র দিয়ে আবেদন করতে হবে।
কংগ্রেসের নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি আজ বলেন, কোনও কারখানার শ্রমিক ন্যূনতম ৯ হাজার টাকা বেতন বা ভাতা পান। যদি কোনও কারখানায় অন্তত ১০০ জন শ্রমিক কাজ করেন, তা হলে কাল কারখানার মালিককে ৯ লক্ষ টাকা তুলতে হবে। অথচ কারখানায় মাসে ২ লক্ষ টাকার বেশি তোলা যাবে না। সপ্তাহে ৫০ হাজার টাকার বেশি তোলারও নিয়ম নেই। এ তো আর কর্পোরেট সংস্থা নয়, যে চেকে বেতন যাবে। ফলে টাকার অভাবে খাওয়া বন্ধ হবে শ্রমিকদের। ইতিমধ্যেই খবর এসেছে, দশ লক্ষ মানুষ রোজগার হারিয়েছেন। পরিস্থিতি আরও কত ভয়াবহ হবে, তার কোনও সীমা নেই।
থাকছে আশ্বাস
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নগদ জোগান বাড়াবে
• নগদ জোগান বাড়ানো হবে বলেই দু’দিন কম নোট ছাড়া হয়েছে।
• ১ থেকে ৭ ডিসেম্বর ব্যাঙ্কে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ বেশি নগদ জোগান
• ভিড় সামলাতে বাড়তি কাউন্টার, অতিরিক্ত কর্মী
• দ্রুত ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিতে বিশেষ শিবির
• বাড়তি ৫০০ টাকার নোট ছাপানো