Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

শিনার কী হয়েছে: রাহুল, ওকে ভুলে যাও: পিটার

সব সম্পর্ক শেষ করে দিতে চেয়ে ‘শিনা’র ফোন থেকে রাহুল মুখোপাধ্যায় যে মেসেজ পেয়েছিলেন তা তিনি সত্যি বলে কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। তাই বাবা পিটার এবং সৎ মা ইন্দ্রাণীকে বারবার ই-মেল পাঠিয়ে শিনার সম্পর্কে জানতে চান তিনি। খুনের এক মাস পরে, ২০১২ সালের ২৭ মে রাহুল তাঁর বাবাকে কয়েকটি ই-মেল করেছিলেন। প্রত্যেকটিতে একই কথা, ‘শিনাকে নিয়ে আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। শিনা ভাল আছে, সেটা ও আমার সামনে দাঁড়িয়ে বললেই আমি বিশ্বাস করব।’ ছেলেকে সে দিনই একাধিক মেল পাঠিয়ে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করেন প্রাক্তন মিডিয়া ব্যারন পিটার মুখোপাধ্যায়। গত বৃহস্পতিবার পেশ হওয়া সিবিআই চার্জশিটে তুলে দেওয়া হয়েছে রাহুল-পিটারের সেই ই-মেল কথোপকথনসব সম্পর্ক শেষ করে দিতে চেয়ে ‘শিনা’র ফোন থেকে রাহুল মুখোপাধ্যায় যে মেসেজ পেয়েছিলেন তা তিনি সত্যি বলে কিছুতেই মেনে নিতে পারেননি। তাই বাবা পিটার এবং সৎ মা ইন্দ্রাণীকে বারবার ই-মেল পাঠিয়ে শিনার সম্পর্কে জানতে চান তিনি। খুনের এক মাস পরে, ২০১২ সালের ২৭ মে রাহুল তাঁর বাবাকে কয়েকটি ই-মেল করেছিলেন। প্রত্যেকটিতে একই কথা, ‘শিনাকে নিয়ে আমার খুব চিন্তা হচ্ছে। শিনা ভাল আছে, সেটা ও আমার সামনে দাঁড়িয়ে বললেই আমি বিশ্বাস করব।’ ছেলেকে সে দিনই একাধিক মেল পাঠিয়ে সাফাই দেওয়ার চেষ্টা করেন প্রাক্তন মিডিয়া ব্যারন পিটার মুখোপাধ্যায়। গত বৃহস্পতিবার পেশ হওয়া সিবিআই চার্জশিটে তুলে দেওয়া হয়েছে রাহুল-পিটারের সেই ই-মেল কথোপকথন

শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৫০
Share: Save:

রাহুলের মেল

২৭ মে ২০১২, সন্ধে ৬টা ৩৮

হ্যালো বাবা। কেমন আছো? মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছ নাকি?!

আচ্ছা, শিনার সঙ্গে এর মধ্যে তোমার কোনও কথা হয়েছে?

ও তো কারও সঙ্গে কোনও যোগাযোগই করছে না। ওর সহকর্মীরা আমাকে জিজ্ঞাসা করছে, ও কোথায়? আমার বা ওর বন্ধুদের বা ওর বাবা, ও কারও ফোনই ধরছে না।

এমনকী ফেসবুকেও আসছে না। সেই ২১ এপ্রিল ওকে শেষ বার অনলাইন দেখা গিয়েছিল। অথচ আগে তো বেশির ভাগ সময় ফেসবুকেই থাকত। সমানে কত কিছু পোস্ট করত। বন্ধুদের পোস্টে বা ছবিতে কমেন্টও করত। ২৫ এপ্রিলে ওর কিছু মেসেজ পেয়েছি। কিন্তু সেগুলো বেশ অসঙ্গত। তার পর থেকে আর কোনও যোগাযোগ হয়নি।

এক দিন আবার তোমার অন্য একটা নম্বর থেকে আমার কাছে সমানে মেসেজ আসছিল। আমি কিন্তু তখন তোমার সঙ্গেই কথা বলছিলাম!

ইন্দ্রাণী বারবারই বলছে, শিনা ভাল আছে। কিন্তু কারও সঙ্গে নাকি যোগাযোগ রাখতে চায় না।

আমার আর শিনার সম্পর্কটা যে ভেঙে গিয়েছে, সেটা হয়তো আমি মেনে নিতে পারব। কিন্তু আমার খালি মনে হচ্ছে, মানুষটা কোথায় গেল? সমানে মনে হচ্ছে, ওর ভয়ঙ্কর কোনও বিপদে হয়নি তো!

পিটারের জবাব

সন্ধে ৭টা ৩৯

হাই লভ।

আমি তো আগেই তোমায় বলেছি, শিনা ভাল আছে। এখনও তা-ই বলছি। অন্য কেউ যদি তোমার কাছে ওর ব্যাপারে জানতে চায়, তা হলে তাদের বলো, ইন্দ্রাণীকে যেন ফোন করে। ইন্দ্রাণীর কাছেই উত্তর পাবে।

বোঝাই যাচ্ছে, শিনা চাইছে না যে, ওর সঙ্গে কেউ সম্পর্ক রাখুক। অথবা, যাদের সঙ্গে ও সম্পর্ক রাখতে চায়, তাদের সঙ্গেই খালি যোগাযোগ রাখছে। আমি লক্ষ্য করেছি, ও কোথায় আছে, তা নিয়ে মিখাইল বা ওর গুয়াহাটির বন্ধুরা কিন্তু উদ্বিগ্ন নয়।

২৫ এপ্রিল শিনা তোমাকে, ইন্দ্রাণীকে আর আমাকে শেষ বারের মতো মেসেজ করেছিল। তার পর ও আর ফেসবুকেও আসেনি। আমার মনে হয়, হয়তো ফেসবুক পেজ, স্কাইপের আইডি, এমনকী ফোন নম্বরও বদলে ফেলেছে ও।

আমার মনে হচ্ছে, ওর কথা ভেবে তুমি শুধু শুধু কষ্ট পাচ্ছ। আর সময় নষ্ট করছ। যদি ও তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইত, নিশ্চয় করত। তা হলে ধরে নাও, ও তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করতেই চায়নি।

তুমি বলছ, ওর ওই ‘সো কলড’ বাবা বা গুয়াহাটির বন্ধুরা ওকে নিয়ে উদ্বিগ্ন। তা হলে তারা ইন্দ্রাণীর সঙ্গে যোগাযোগ করছে না কেন?

ও তোমাকে নিয়ে খেলা করেছে। আর তার পর ও অন্য কারও সঙ্গে চলে গিয়েছে। আমি তোমাকে আগেই বলেছি, ব্যাপারটা ছেড়ে দাও। নিজের দিকে নজর দাও। ও যদি তোমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেই চায়, তা হলে এক দিন ও ঠিক ফিরে আসবে। এ ভাবে নিজের জীবনটা নষ্ট করছ কেন?

এর পর শিনার ব্যাপারে কেউ তোমার কাছে কিছু জানতে চাইলেই তুমি তাদের বলবে, ইন্দ্রাণীকে ফোন বা ই-মেল করতে। ও-ই একমাত্র ওদের প্রশ্নের জবাব দিতে পারবে।

আশা করি, তুমি ঠিক করে খাওয়াদাওয়া করছ। এ বার শিনাকে নিয়ে না ভেবে নিজের কাজকর্ম নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করো। ও সব ছাড়ো।

ভালবাসা নিও। বাবা।

রাহুলের জবাব

রাত ৮টা ৩২

দেখো, আমি সব মেনে নেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে আমি কিছু জবাব চাই। কারণ, শিনার জন্য আমার সত্যিই চিন্তা হচ্ছে।

তুমি হয়তো আবার বলবে, ‘‘রাহুল তুমি সব কিছু ভুলে এগিয়ে যাও।’’ কিন্তু আমি জানি না, এ সব কী হচ্ছে। আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছি না, ওর কথা ভুলতেও পারছি না। ও যেখানেই থাক, ভাল রয়েছে, অন্তত এটাও যদি জানতে পারতাম!

কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, উত্তর পাওয়ার যেন কোনও রাস্তা নেই।

তোমার কী মনে হয়?

রাহুলের মেল

রাত ৯টা ২

শিনা নিজে কেন সামনে আসছে না? ...আর ‘সো কলড বাবা’ বলতে তুমি কী বোঝাতে চাইছ? ওঁর নাম সিদ্ধার্থ দাস। উনিই শিনার জন্মদাতা বাবা। তাই ওঁকে অন্তত ‘সো কলড বাবা’ বোলো না। ঠিক যেমন ইন্দ্রাণী শিনার মা। দিদি নয়। তোমাকে যা বোঝানো হচ্ছে, তুমি তা-ই বিশ্বাস করছ। কেন নিজের যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করছ না?

...তুমি তো ‘সো কলড’ জামাইবাবু! তাই না, বাবা?

এক দিন আমি সিদ্ধার্থ দাসকে ব্রিস্টলে নিয়ে আসব। তোমার সঙ্গে দেখাও করাব। বেশ একটা পারিবারিক আড্ডা হবে, কী বলো!

রাহুলের মেল

রাত ৯টা ৩

এত কিছুর পরে তুমি কী করে সব কিছু ভুলে যেতে বলছ? আমি তো তোমারই ছেলে। তুমিও পাগল হয়ে গেছ? মনে হয়, তুমি ভয় পেয়েছ।

রাহুলের আরও একটা মেল

রাত ৯টা ৯

‘‘ভালবাসা নিও?’’ তোমাদের ভালবাসায় হে** দিই!

পিটারের জবাব

রাত ১০টা ৪৮

আচ্ছা, ধরে নিচ্ছি সিদ্ধার্থ দাসই শিনার বাবা। তা হলে তো তোমাকে ফোন না করে উনি ইন্দ্রাণীকেই ফোন করে নিতে পারেন।

আর তুমি আমার ছেলে বলেই আমি তোমাকে বিষয়টা একেবারে ভুলে যেতে বলছি। আমি চাই না, তোমার জীবনটা এই ভাবে চলুক।

আর শিনার সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে আমি নিশ্চয়ই তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলতাম। কিন্তু ওর সঙ্গে তো আমারই যোগাযোগ নেই। তাই ওকে কী করে বলব?

তুমি আমাকে পাগল বলো আর যা-ই বলো, আমি তোমাকে নিয়েই ভাবি। তুমি সুখে থাকো, আমি সেটাই চাই। তুমি যে এমন হতাশায় ভুগছ, তাতে তো ওর কিছু
যায়-আসে না।

তুমি ওর গুয়াহাটির বন্ধুদের থেকে একটা মেসেজ পেয়েছিলে, তাই না? তাতে তো লেখা ছিল, ও কোনও এক বড়লোকের ছেলের সঙ্গে পালিয়েছে। এর পরেও কি তুমি কিছু বুঝতে পারছ না? না হলে তুমি কী করে ভাবছ যে, ইন্দ্রাণীই অন্য কারও ফোন থেকে এই কাজটা করছে।?

রাহুল, আমি তো তোমাকে আগেও বলেছি, শিনা একমাত্র ইন্দ্রাণীর সঙ্গেই যোগাযোগ রেখেছিল। আর কারও সঙ্গেই সম্পর্ক রাখেনি। এক দিন ও ইন্দ্রাণীকে দেখা করতে বলে। ইন্দ্রাণীর কাছ থেকে ও ৩০ হাজার টাকাও চেয়েছিল। পরে অবশ্য আবার টাকার অঙ্কটা বাড়িয়ে ৪০ হাজার করে। ইন্দ্রাণীকে শিনা বলেছিল, ওর জীবনে এক জন এসেছে। যার পরিবার নাগপুরে থাকে। ওই সময় ইন্দ্রাণী আর ও একটা শাড়ির দোকানে গিয়েছিল। ইন্দ্রাণী ওকে একটা শাড়িও কিনে দিয়েছিল। এখনও সেই বিলটা ইন্দ্রাণীর কাছে রয়েছে। এর পরেই শিনা আমাকে মেসেজ ক’রে তোমার সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ার কথা বলে। তখন তোমাকেও ও একই মেসেজ পাঠিয়েছিল। তার পর থেকে ওকে আর দেখা যায়নি।

ও নিশ্চয়ই খুব ভাল আছে। আর তুমি ওকে নিয়ে ভেবে যাচ্ছ। আমি তোমাকে আবারও বলছি, ওকে ভুলে যাও। নিজেকে নিয়ে ভাবো। ও কেন, কী করেছে, তা নিয়ে ভেবে সময় নষ্ট কোরো না। ও যে তোমায় ছেড়ে চলে গিয়েছে, সেটাই সত্যি!

আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, একমাস হয়ে গেলেও তুমি ওই একই জিনিস নিয়ে পড়ে আছ। ইন্দ্রাণী যদি বিয়ের দশ বছর পরেও এ রকম করত, তা হলে আমি ও সব নিয়ে ভাবতামই না। আমি সব ভুলে এগিয়ে যেতাম।

তোমারও এটাই করা উচিত।

আবার পিটারের মেল

২৭ মে ২০১২, রাত ১১টা ১১

রাহুল, ভয় পেয়েছিল শিনা। তাই হয়তো তোমার সামনে এসে সম্পর্ক ভাঙার কথাটা বলতে পারেনি। আমি শিনার জায়গায় থাকলে এ রকম করতাম না। কারও পক্ষ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। শুধু বলছি, সাহস থাকলে ও তোমায় চিঠি লিখতে পারত। তাতে তোমায় কেন ছেড়ে দিল, তার ব্যাখ্যাও নিশ্চয় থাকত। কিন্তু চিঠি লেখার চল তো উঠেই গিয়েছে। আর হবে না-ই বা কেন? এটা তো আধুনিক যুগ।। তাই ফেসবুক আর মেসেজই কথা বলার রাস্তা।

তোমার সময়টা খারাপ যাচ্ছে। তুমি বরং ওর সব জিনিস একটা বাক্সে ভরে ফেলো। আর সেটা ইন্দ্রাণীর অফিসে পাঠিয়ে দাও। আশা করি, এ ভাবে তুমি ওকে ভুলতে পারবে। মনে হয়, এটাই একমাত্র রাস্তা।

তুমি কী করে নিজেকে এ ভাবে শেষ করে দিতে পারো? তোমাকে তো বুঝতেই হবে যে, এটা শিনারই সিদ্ধান্ত। এটা করার জন্য কেউ ওকে চাপ দেয়নি। তাই বলছি, এটা নিয়ে আর ভেবো না।

কয়েক ঘণ্টা পরে রাহুলের উত্তর

২৮ মে ২০১২, রাত ১২টা ১৫

তোমাদের সকলের **** মারি!

পিটারের জবাব

রাত ১২টা ১৫

এমন ভাষায় বাবার সঙ্গে কেউ কথা বলে, রাহুল?

যে লোকটা সেই ১৮ বছর বয়স থেকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য পরিশ্রম করে চলেছে। তোমার ভবিষ্যতের জন্য উদয়াস্ত পরিশ্রম করেছে। তার পরে তুমি বড় হয়েছ। আমার স্ত্রীর এক আত্মীয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়েছ। আমি কোনও দিন কিছু বলিনি। এর পরেও তুমি যদি এই ভাষায় কথা বলো, তা হলে আর আমার কিছু বলার নেই।

এখন এটাই মনে হচ্ছে, আমি তোমায় শিক্ষা দিতে পারিনি। হয়তো এটাই আমার ব্যর্থতা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE