Advertisement
E-Paper

রাহুলরাই নেতা বাছুন, ভোটভয়ে আর্জি প্রবীণদের

লোকসভা ভোট ও একের পর এক রাজ্যের নির্বাচনে গোহারা হচ্ছে কংগ্রেস। আর এরই মধ্যে সাংগঠনিক নির্বাচন নিয়ে গোঁ ধরে রয়েছেন রাহুল গাঁধী। তিনি চান সংগঠনের সব স্তরে নির্বাচন। আর প্রবীণরা বলছেন, ও সব হোক দলের নিচুতলায়। দলের উপর তলায় নেতা-নেত্রী বেছে দিন ‘ম্যাডাম’ কিংবা ‘রাহুলজি’-ই। যে পরিবারতন্ত্র নিয়ে কংগ্রেসকে সব থেকে বেশি বিদ্ধ করে বিরোধীরা, দলের প্রবীণ নেতারা কার্যত সেটাকেই আঁকড়ে থাকতে চাইছেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ নভেম্বর ২০১৪ ০২:১৪

লোকসভা ভোট ও একের পর এক রাজ্যের নির্বাচনে গোহারা হচ্ছে কংগ্রেস। আর এরই মধ্যে সাংগঠনিক নির্বাচন নিয়ে গোঁ ধরে রয়েছেন রাহুল গাঁধী। তিনি চান সংগঠনের সব স্তরে নির্বাচন। আর প্রবীণরা বলছেন, ও সব হোক দলের নিচুতলায়। দলের উপর তলায় নেতা-নেত্রী বেছে দিন ‘ম্যাডাম’ কিংবা ‘রাহুলজি’-ই। যে পরিবারতন্ত্র নিয়ে কংগ্রেসকে সব থেকে বেশি বিদ্ধ করে বিরোধীরা, দলের প্রবীণ নেতারা কার্যত সেটাকেই আঁকড়ে থাকতে চাইছেন। দলের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, নিজেদের গদি বাঁচাতেই গাঁধী পরিবারকে ঢাল করছেন প্রবীণরা। ফলে নির্বাচন, সাংগঠনিক নির্বাচন ও পরিবারতন্ত্রের প্রশ্নে কংগ্রেসে এখন এক অদ্ভুত টানাপড়েন।

আজ নিয়ে গত তিন ধরে কংগ্রেসের বর্ষীয়ান ও নবীন নেতাদের নিয়ে এক একটি গ্রুপ তৈরি করে লাগাতার বৈঠক করে চলেছেন রাহুল। প্রধান লক্ষ্য হল, কংগ্রেসের সাংগঠনিক রদবদল করার আগে সবার মতামত নেওয়া ও ভুলত্রুটি শুধরে নেওয়া। গাঁধী পরিবারের তরুণ প্রজন্মের প্রতিনিধিই চাইছেন, দলে একেবারে নিচুতলা থেকে সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটির নেতারাও উঠে আসুক সাংগঠনিক নির্বাচন বেয়ে। যাতে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জিতে এসে যোগ্যতমরা হাল ধরতে পারেন সংগঠনের। কিন্তু ওয়ার্কিং কমিটিতে নির্বাচনের প্রশ্নে রাহুলের সামনেই আপত্তি তুলেছেন ওই কমিটির বর্তমান সদস্যরা। সমস্বরে তাঁদের বক্তব্য, দোহাই প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি এবং ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য বাছতে নির্বাচন করবেন না। সেখানে যোগ্যতমকে মনোনীত করুন।

মতের মিল না হলেও রাহুলের সঙ্গে বৈঠকে জনার্দন দ্বিবেদী, অম্বিকা সোনি, সুশীল শিন্দের মতো বর্ষীয়ান নেতাদের ডাক পাওয়াটাকেই অনেকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন। তবে কি কংগ্রেসে নবীন-প্রবীণে লড়াই সাঙ্গ করারই বার্তা দিচ্ছেন রাহুল!

মাস চারেক পর রাহুলের সঙ্গে এমন বৈঠকের সুযোগ পেয়ে প্রথমেই অবশ্য তাঁর নীতি নিয়েই আপত্তি তোলেন কিছু বর্ষীয়ান নেতা। কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বর্ষীয়ান সদস্য জনার্দন দ্বিবেদী রাহুলকে বলেন, ভোটাভুটির মাধ্যমে প্রদেশ সভাপতি বা ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য বাছাইয়ের মতো ‘আদর্শ সাংগঠনিক নির্বাচন’ করানোটা বোকামি হবে। একই মত জানান, মতিলাল ভোরা, গিরিজা ব্যাসরা।

কিন্তু কেন? রাহুল চান, ধামাধরা বা গোষ্ঠীবাজি করে দলের শীর্ষ পদগুলি আঁকড়ে থাকা নেতারা বিদেয় হোন। দলের ওই প্রবীণ নেতানেত্রীরা পাল্টা যুক্তি সাজাচ্ছেন, ভোটাভুটি দলে গোষ্ঠী রাজনীতি বাড়াবে। এমন সব লোক ওয়ার্কিং কমিটিতে জিতে আসবেন, যাঁদের দিয়ে দলের প্রকৃত উপকার হবে না। তবে নির্বাচন হোক ব্লক ও জেলা স্তরে। তাতে তৃণমূল স্তরে কর্মীদের মধ্যে সাড়া পড়বে। জড়তা কাটবে। জনার্দন দ্বিবেদী এমনও বলেন, প্রয়োজনে ওয়ার্কিং কমিটির সব বর্ষীয়ান সদস্যকে সরিয়ে দিক সনিয়া-রাহুল। কিন্তু নির্বাচন করালে ভুল হবে।

নিজেদের যুক্তি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে দলের এক প্রবীণ নেতা পরে বলেন, অনেক রাজ্যেই প্রদেশ সভাপতিকে সরাতে দলের মুষ্টিমেয় কিছু নেতা এককাট্টা। অথচ কাজের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে ওই প্রদেশ সভাপতিই যোগ্যতম। ভোটাভুটি হলে গোষ্ঠী রাজনীতির কোপে পড়ে তিনি হেরে যেতে পারেন। এমন ভোটাভুটিতে কী লাভ হবে দলের? বরং সনিয়া ও রাহুল গাঁধীই প্রদেশ সভাপতি ও ওয়ার্কিং কমিটির সদস্যদের মনোনীত করুন।

যে সাংগঠনিক নির্বাচন নিয়ে রাহুল ইদানীং এত সক্রিয় তা আগামী জুলাই মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। কারণ, জুলাইয়ে কংগ্রেস সভানেত্রী পদে সনিয়ার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। দলে জল্পনা, তার পর রাহুলই সভাপতি নির্বাচিত হবেন। আর দলের গঠনতন্ত্র সংশোধন করে কোনও আলঙ্কারিক পদ দিয়ে শীর্ষে রাখা হবে সনিয়াকে ।

তবে রাহুলের সঙ্গে বৈঠকে গত কাল শশী তারুর ও আজ দিগ্বিজয় সিংহ ফের বলেন, রাহুলের উচিত এখনই সভাপতির দায়িত্ব নিয়ে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া। দলের মুখপাত্র আনন্দ শর্মা, মাখনলাল ফোতেদাররা অবশ্য একে দিগ্বিজয়দের ব্যক্তিগত মত বলে দাবি করেছেন।

প্রশ্ন উঠছে, তবে কি এঁরা চান না রাহুল আদৌ সভাপতি হোন? জবাবে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার পাল্টা মন্তব্য, “রাহুল কখন দলের সভাপতি হবেন তা কি দিগ্বিজয় ঠিক করে দেবেন?” ওই নেতার বক্তব্য, বকলমে রাহুলই দল চালাচ্ছেন। কিন্তু দলের এই চরম খারাপ সময়ে কেন তিনি সভাপতি পদের দায়িত্ব নিতে যাবেন? জুলাই পর্যন্ত সনিয়াই ওই পদে থাকবেন। তার পর যদি দেখা যায় পরিস্থিতি অনুকূল হচ্ছে, তবেই দলের সভাপতি পদের দায়িত্ব নেবেন রাহুল। তার আগে নয়।

congress sonia rahul new delhi Pick leader opposition party BJP vote national news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy