প্রতিশ্রুতির গুঁতোয় এমনিতেই নাজেহাল অবস্থা। তাতে গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতোই জমছে আরও সব নতুন দাবির পাহাড়।
লোকসভা ভোটের সময় রীতিমতো দড়ি টানাটানি হয়েছিল নরেন্দ্র মোদী আর রাহুল গাঁধীর মধ্যে। দু’জনেই গলা ফাটিয়ে বলেছিলেন, ক্ষমতায় এলে সেনাবাহিনীতে কার্যকর করবেন ‘এক পদ, এক পেনশন’-এর দাবি। ইস্তাহারেও বড় করে লেখা হয়েছিল সেই প্রতিশ্রুতি। রাহুলের দল ক্ষমতায় আসেনি। বল এখন মোদীর কোর্টে। কিন্তু এক পদের এক পেনশন দিতে গেলেই ভাঁড়ারে টান পড়ার আশঙ্কা, তার মধ্যেই নতুন দাবি নিয়ে ঢুকে পড়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, তাঁর অধীনে থাকা আধাসামরিক বাহিনী কী দোষ করল? সেনাবাহিনী যদি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্তে মোতায়েন থাকে, তা হলে সিআরপিএফও তো নিত্যদিন ঘন জঙ্গলে লড়ছে মাওবাদীদের সঙ্গে! প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্তে রয়েছে বিএসএফ, আইটিবিপিও।
যুক্তি ভুল নয়। কিন্তু এত টাকা আসবে কোথা থেকে? চিন্তায় মাথায় হাত প্রধানমন্ত্রীর। কেননা, ‘এক পদ, এক পেনশন’-এর অর্থ হল, একটি নির্দিষ্ট পদ থেকে তিরিশ বছর আগে যিনি অবসর নিয়েছেন, আর এখন যিনি অবসর নিচ্ছেন, তাঁরা দু’জনেই সমান পেনশন পাবেন। অর্থাৎ, তিরিশ বছর আগে অবসর নেওয়া কোনও কর্নেল আজ যে টাকা পেনশন পান, এ বছরে যে কর্নেল অবসর নিলেন, তিনি হয়তো দ্বিগুণ অর্থ পেয়ে থাকেন। এখন নতুন প্রস্তাব কার্যকর হলে সকলের পেনশন এক করতে হবে।
গল্প এখানেই শেষ নয়। সামনের বছর যিনি আরও বেশি টাকা পেনশন নিয়ে অবসর নেবেন, গত একতিরিশ বছর ধরে সকলের পেনশন ওই হারে বদলাতে হবে। ফলে পরিস্থিতি যা দাঁড়াল, তাতে ফি-বছর লাফিয়ে লাফিয়ে পেনশন বাড়বে সকলের। আর হু-হু করে খালি হবে কোষাগার। তার উপর রাজনাথের আবদার জুড়লে তো কথাই নেই।
সরকারের এক আমলার কথায়, “এ বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পেনশনের বিল বেড়ে গিয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা। আর বাজেটে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বরাদ্দ করেছেন মাত্র এক হাজার কোটি টাকা। বাকি টাকা কোথা থেকে আসবে, তার কোনও কুলকিনারা নেই।” বিপত্তির কী এখানেই ইতি? আমলাটির মতে, এর পর আধাসামরিক বাহিনীকে একই সুবিধা দিতে হলে ভবিষ্যতে বাকিরাও ঝাঁপাবেন। সরকারি চাকুরেরাও তখন একই দাবি করতে পারেন!
বিপদঘন্টা বাজার আগেই বিষয়টির হাল খুঁজতে প্রধানমন্ত্রী বলটি তাই ঠেলে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির দিকে। পেনশন দিতেই এখন যাঁর নাভিশ্বাস উঠছে। অর্থ মন্ত্রকের কর্তারাও জানিয়ে দিয়েছেন, প্রতি বছর এ ভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে পেনশন বাড়ানো সম্ভব নয়। এ থেকে বাঁচতে একটিই সমাধান সূত্র হতে পারে। অন্তত দশ বছরের জন্য পেনশন বেঁধে দেওয়া হোক। যাঁরাই অবসর নেবেন, বাঁধা পেনশন পাবেন। তার পর মহার্ঘ ভাতা যেমন যোগ হবে, হোক।
কিন্তু পেনশন কততে বাঁধা হবে? বিড়ালের গলায় সেই ঘন্টাটি বাঁধবেই বা কে? কারণ, পেনশন যতই ধার্য হোক, কারও না কারও গোঁসা হবেই। কংগ্রেস মোদী সরকারের ২৫টি ‘ডিগবাজি’ তুলে ধরেছে। ভোটের আগে বিজেপি যা বলেছিল, আর গত ছ’মাসে সরকারে এসে যে সব বিষয়ে অবস্থান বদলেছে, তার লম্বা তালিকা তুলে দিয়েছে তারা। ফলে ‘এক পদ, এক পেনশন’ নিয়ে পান থেকে চুন খসলে বিরোধীরা ফের ছেঁকে ধরবে।
এই আশঙ্কায় আপাতত ঠিক হয়েছে, পেনশন কত হবে, তা স্থির করবে বেতন কমিশন। যেতে যেতে ইউপিএ সরকার যেটি গঠন করে চলে গিয়েছে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে। সামনের বছর অগস্টের মধ্যে তাদের রিপোর্ট আসবে। সরকারের মধ্যে ঠেলাঠেলির খেলায় এখন বলটি এসে পড়েছে সপ্তম বেতন কমিশনের কোর্টে। এখন দেখার, কী চাল খেলে কমিশন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy