মায়ের কথায় মোদীর চোখের জল। আর রাত ফুরোতেই তা নিয়ে মোক্ষম কটাক্ষ বিরোধীদের। ফেসবুক সদর দফতরে মার্ক জুকেরবার্গের পাশে বসে গত কাল মায়ের প্রসঙ্গ উঠতেই গলা বুজে এসেছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। আর আজ তা নিয়েই কংগ্রেসের খোঁচা, ‘‘নাটক করছেন মোদী। রাজনৈতিক বিপণনে এ বার নিজের মাকেও পণ্যে পরিণত করেছেন প্রধানমন্ত্রী।’’ মার্কিন সফরে গিয়ে উন্নয়নের মিথ্যে ফানুস ওড়ানোর পাশাপাশি ‘রাস্তার রাজনীতি’ করার অভিযোগও উঠল মোদীর বিরুদ্ধে।
মায়ের কথায় মোদীকে বিদ্রূপ করেই রাজ্যসভায় কংগ্রেসের উপ-দলনেতা আনন্দ শর্মা আজ বলেন, ‘‘মাকে নিয়ে ওঁর এত দরদ। কিন্তু জন্মদিনে মায়ের সঙ্গে দেখা করতে আমদাবাদে গেলে বাড়ির ভিতরে ঢোকেন না! উঠোনে দেখা করেন। ঠিক মতো যাতে ছবিটা ওঠে!’’ তাঁর দাবি— মোদীর পরিবারের অবস্থা এতটাও খারাপ ছিল না যে, তাঁর মাকে অন্যের বাড়িতে গিয়ে বাসন মাজতে হতো। এমনকী মোদী নিজেও কোনও দিন চা বেচেননি বলে জানিয়েছেন শর্মা।
তা হলে মোদী কেন এমনটা বলছেন? শর্মার দাবি, ‘‘সবটাই বিপণন। আগে শুধু নিজেকে নিয়ে বলতেন। এ বার মায়ের মর্যাদাহানি করতেও কুণ্ঠা করছেন না প্রধানমন্ত্রী।’’
শুধু মায়ের প্রসঙ্গ নয়। সফরে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঘন ঘন পোশাক পাল্টানো, অর্থনীতির ভুল তথ্য তুলে ধরার অভিযোগও করেছে কংগ্রেস। কূটনীতিকদের একাংশের দাবি, বিদেশ সফরকালে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ঘরোয়া রাজনীতিতে সমালোচনা আগেও হয়েছে। কিন্তু এতটাও নীচে নামেনি কখনও।
এ বার তা হলে কেন! এ ক্ষেত্রেও মোদীকেই দুষছেন বিরোধীরা। ঘরোয়া রাজনীতির অসন্তোষ অন্য মুলুকে জাহির না করাটাই দস্তুর। কিন্তু বিরোধীদের দাবি, সেই সৌজন্যও ভেঙেছেন প্রধানমন্ত্রী। উপরন্তু, ঘরোয়া রাজনীতিতে বার্তা দিতে চাইছেন মার্কিন মুলুক নাকি মোদীতে মোহিত! যা নিয়ে কংগ্রেসের অভিযোগ, ‘‘পুরোটাই সাজানো। আগেভাগে চার হাজার আরএসএস কর্মী পাঠিয়ে সমাবেশের মঞ্চ সাজিয়ে রাস্তার রাজনীতি করছেন প্রধানমন্ত্রী।’’
কিন্তু কংগ্রেসের গলায় হঠাৎ কেন এই চড়া সুর? সান হোসের অনাবাসী ভারতীয়দের এক সমাবেশে গিয়ে মোদী আজ সনিয়া-জামাতা রবার্ট বঢ়রার দুর্নীতি প্রসঙ্গ তোলেন। কূটনীতিকদের একাংশ বলছে, এতেই মেজাজ বিগড়েছে কংগ্রেসের।
ঘনিষ্ঠ মহলে কংগ্রেস নেতারা যদিও বলছেন, বিষয়টা শুধু তা নয়। বিদেশ সফরে গিয়ে ঘরোয়া রাজনীতির সমালোচনা করাটা মোদী অভ্যাসে পরিণত করেছেন। এ নিয়ে বারবার সতর্ক করেও লাভ হয়নি। তাই প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরে থাকাকালীনই বল্গাহীন আক্রমণ শানানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে কংগ্রেস।
আর এই সূত্রেই আজ সাংবাদিক বৈঠকে বিষয় ধরে ধরে মোদীর সমালোচনা করেন কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মা। এ বারের সফরে জি-ফোর গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলির সঙ্গে বৈঠক করেছেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় এটিকে ‘ঐতিহাসিক’ বললেও, শর্মা তা মানতে চাননি। বরং আদৌ তা ফলপ্রসূ হয়েছে কি না, প্রশ্ন তোলেন।
গত কাল তাঁর বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, দেশের অর্থনীতির আয়তন এখন আট ট্রিলিয়ন ডলার। ২০২০-এর মধ্যে তা তিনি ২০ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছে দিতে চান। আজ সেই প্রসঙ্গেও মুখ খোলেন আনন্দ শর্মা। বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী পড়াশোনাও ঠিকমতো করছেন না। আট ট্রিলিয়ন ডলার চিনা অর্থনীতিরও আয়তন নয়।’’ দেশে অপটিক্যাল ফাইবার পাতা নিয়েও প্রধানমন্ত্রী মিথ্যে গর্ব করছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
কংগ্রেসকে পাল্টা জবাব দিতে ময়দানে নেমেছে বিজেপিও। দলীয় মুখপাত্র এম জে আকবর আজ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী বিদেশে থাকাকালীন কংগ্রেস যে ভাবে তাঁর সমালোচনা করছে, তাতে ওঁদের হতাশাই প্রকাশ পাচ্ছে। মায়ের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বরাবরই আবেগপ্রবণ। কিন্তু কংগ্রেস সে সব বুঝবে না। কংগ্রেসের এক মা রয়েছেন, যিনি ছেলের স্নেহে ডুবে রয়েছেন। আর সেই ছেলে নিজে তো ডুবেছেই, দেশকেও ডোবাতে চাইছে।’’