Advertisement
E-Paper

দীনদয়ালে ‘সৌভাগ্য’ যোগে ধন্দ

এই প্রশ্নও উঠছে যে, দীনদয়ালের নামে অ-বিজেপি রাজ্যগুলির আপত্তিতেই কি এই ভোলবদল? বিদ্যুৎ মন্ত্রক এই প্রশ্নে নীরব। রাজনীতির লোকজন যদিও বলছেন, নাম বদল করে প্রকল্পকে সর্বজনগ্রাহ্য করে তোলার আগ্রহ মোদীর থাকতেই পারে।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৭ ০৩:৫৫
বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির সভায় ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।—পিটিআই।

বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির সভায় ভাষণ দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।—পিটিআই।

পুরনো মূর্তিতে নতুন রং! মনমোহন সিংহের জমানায় ছিল ‘রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুতীকরণ যোজনা’। নরেন্দ্র মোদী এসে তার নতুন নাম দেন ‘দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি যোজনা’। দু’বছর পরেই তা ভোল পাল্টে হয়ে গেল ‘সহজ বিজলি হর ঘর যোজনা’ বা ‘সৌভাগ্য’। লক্ষ্য সেই একটাই। গ্রামের সব বাড়িতে বিদ্যুৎ এবং গরিবদের বাড়িতে নিখরচায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া।

পঞ্চমীর সন্ধেয় নরেন্দ্র মোদী এই ‘সৌভাগ্য’ প্রকল্পের ঘোষণা করেছেন। যা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। প্রশ্ন উঠছে, এটা কি নাম বদল? কিংবা সমান্তরাল ভাবে দু’টি প্রকল্পই চলবে? নাকি একই প্রকল্পের নামের উপরে মোদী নতুন একটি ডাকনাম চাপালেন ঘটা করে? এই বিষয়ে কিছুই বলা হয়নি সরকারি ঘোষণায়। ‘রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুতীকরণ যোজনা’ চালু হয়েছিল ২০০৫-এ। মোদী সরকার ২০১৫-র জুলাইয়ে সেই প্রকল্পই নতুন করে চালু করে দীনদয়ালের নামে। পুরনো প্রকল্প যে নতুনটিতে মিশে যাচ্ছে, তখন খাতায়-কলমেই তা স্বীকার করা হয়েছিল।

এই প্রশ্নও উঠছে যে, দীনদয়ালের নামে অ-বিজেপি রাজ্যগুলির আপত্তিতেই কি এই ভোলবদল? বিদ্যুৎ মন্ত্রক এই প্রশ্নে নীরব। রাজনীতির লোকজন যদিও বলছেন, নাম বদল করে প্রকল্পকে সর্বজনগ্রাহ্য করে তোলার আগ্রহ মোদীর থাকতেই পারে। তবে গুটিকয়েক অ-বিজেপি রাজ্যের আপত্তিতে কোনও প্রকল্প থেকে দীনদয়ালের নাম মোদী সরকার মুছে ফেলছে, এমনটি ভাবা যাচ্ছে না। বস্তুত, কালই ছিল দীনদয়াল জন্মশতবর্ষ পালনের শেষ দিন। এ দিন তাঁর মূর্তির উদ্বোধনও করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

মোড়ক বদল

এপ্রিল, ২০০৫

• রাজীব গাঁধী গ্রামীণ বিদ্যুতীকরণ যোজনা

• সব গ্রামে, সব বাড়িতে বিদ্যুৎ

জুলাই, ২০১৫

• দীনদয়াল উপাধ্যায় গ্রাম জ্যোতি যোজনা

• সব গ্রামে, সব বাড়িতে বিদ্যুৎ

• ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৮-র মধ্যে সব পরিবারে বিদ্যুৎ

বিরোধীরা বলছেন, মোদী এত দিন মনমোহন বা তার আগেকার সরকারের প্রকল্পের নাম পাল্টে নিজে নাম দিতেন। এখন নিজের সরকারেরই প্রকল্পের নাম বদলাতে শুরু করেছেন! কংগ্রেস নেতা মনীশ তিওয়ারির কটাক্ষ, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর কাছে এটাই প্রত্যাশিত। পুরনো ‘নির্মল ভারত অভিযান’ পাল্টে তিনি নাম দিয়েছেন ‘স্বচ্ছ ভারত’। ‘ন্যাশনাল ম্যানুফ্যাকচারিং পলিসি’ বদলে করে দিয়েছেন ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’।’’ কংগ্রেস এ নিয়ে কার্টুনও তৈরি করেছে মোদীর ছবি দিয়ে। যার ট্যাগ লাইন, ‘রাম-রাম জপনা, পরায়া কাম আপনা।’

সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি প্রশ্ন, ‘‘নাম পাল্টে, নিত্যনতুন ডাকনাম বের করে সমস্যার সমাধান হচ্ছে কি?’’ সরকারি খতিয়ানই বলছে, সমাধান দূর অস্ত্। দেশে ৬ লক্ষেরও বেশি গ্রাম রয়েছে। এ পর্যন্ত মাত্র ১ হাজার ১৮০টি গ্রামের সব বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। ২০১৬-র অক্টোবরে রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে তৎকালীন বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল ঘোষণা করেন, ২০১৭-র মে মাসের মধ্যে সব ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে যাবে। তা হয়নি। ২০১৭-র মার্চ পর্যন্ত বিনামূল্যে বিদ্যুৎ পেয়েছে দারিদ্রসীমার নীচের ২.৫ কোটি পরিবার। মোদী বলেছেন, ‘সৌভাগ্য’ প্রকল্পে ৪ কোটি বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছনো হবে। অর্থাৎ, দেশের ৪ কোটি পরিবার এখনও অন্ধকারে। রাজীব-দিনদয়াল-সৌভাগ্য, মোড়ক বদল সমানে চলেছে।

মোদী-ঘোষিত ‘সৌভাগ্য’ প্রকল্পে তবে নতুন কী হলো? বলা হচ্ছে, এত দিন নিখরচায় বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হতো দারিদ্রসীমার হিসেবে। এখন তা হবে আর্থ-সামাজিক জনগণনার ভিত্তিতে। তালিকায় নাম না থাকলেও ‘ইচ্ছুক’ পরিবার ৫০০ টাকা দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পারে। ক্ষমতায় এসে মোদী ঘোষণা করেছিলেন হাজার দিনে সব বাড়িতে বিদ্যুৎ। পারেননি। সব বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার নতুন লক্ষ্য স্থির হয়েছে ২০১৮-র ডিসেম্বর! যার অর্থ, অন্যান্য প্রকল্পের জন্য মোদী ২০২২-কে সময়সীমা ঘোষণা করলেও, সব বাড়িতে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে কি না— এর জবাব ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগেই দিতে হবে প্রধানমন্ত্রীকে।

Narendra Modi নরেন্দ্র মোদী Deendayal Upadhyaya দীনদয়াল উপাধ্যায় Saubhagya Scheme
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy