Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

মিথ্যা প্রচার, পরস্পরের তোপে মোদী-কংগ্রেস

জমি বিনে কথা নেই চাপানউতোরের দু’তরফেই! সব কিছু ছাপিয়ে মোদী সরকারের বিতর্কিত জমি নীতি ছায়া ফেলেছিল বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির সাম্প্রতিক বৈঠকে। সব রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নিজেই টেনে আনলেন জমি বিলের প্রসঙ্গ। কংগ্রেসকে আক্রমণ করে অভিযোগ আনলেন, শুধু রাজনৈতিক বিরোধিতা করার জন্যই সরকারের জমি নীতি নিয়ে মিথ্যা প্রচার করছে ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বিরোধীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৩৭
Share: Save:

জমি বিনে কথা নেই চাপানউতোরের দু’তরফেই!

সব কিছু ছাপিয়ে মোদী সরকারের বিতর্কিত জমি নীতি ছায়া ফেলেছিল বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির সাম্প্রতিক বৈঠকে। সব রাজ্যের পরিবেশ মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ নিজেই টেনে আনলেন জমি বিলের প্রসঙ্গ। কংগ্রেসকে আক্রমণ করে অভিযোগ আনলেন, শুধু রাজনৈতিক বিরোধিতা করার জন্যই সরকারের জমি নীতি নিয়ে মিথ্যা প্রচার করছে ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে বিরোধীরা। মোদীর বক্তব্য, “আদিবাসীদের জমির বিষয়টি জমি বিলের এক্তিয়ারেই পড়ে না। হতে পারে, তাঁরা বিষয়টি জানেন না। হতে পারে এটা ওঁদের কাছে স্রেফ রাজনীতি! কিন্তু এই নেতিবাচক প্রচারে দেশের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।”

মোদী সরকারের জমি নীতির বিরোধিতায় নেমে কংগ্রেস এখন এই প্রচারও করছে যে শুধু কৃষক নয়, আদিবাসীদের স্বার্থও ক্ষুণ্ণ করছে কেন্দ্র। বনাঞ্চলের পরিবেশের দিকেও সরকারের খেয়াল নেই। বিরোধীদের এই প্রচারেরই আজ মোকাবিলা করতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

পাল্টা আক্রমণ শানাতে মোটেই দেরি করেনি কংগ্রেস। কোনও বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষেত্রে আগে কংগ্রেসের ছিল আঠারো মাসে বছর। আজকাল তারা মুখিয়ে রয়েছে গরিব-কৃষক-আদিবাসীদের স্বার্থরক্ষার প্রশ্নে সরকারকে বিঁধতে। মোদীর ওই মন্তব্যের পরই কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ আজ বলেন, “জমি বিলে বা অধ্যাদেশে আদিবাসীদের জমির প্রসঙ্গ নেই ঠিকই। কিন্তু মোদী সরকার সম্প্রতি যে খনি বিল পাশ করেছে, তাতে আদিবাসীদের স্বার্থ খর্ব হবে বৈকি।” পরিবেশ বিষয়ক সম্মেলনে মোদী এ দিন বলেছেন, “গণতন্ত্রে বিতর্ক সব সময় স্বাগত। কিন্তু মিথ্যা প্রচার করা হবে কেন! এ ভাবে দেশ চলতে পারে না।” জবাবে জয়রামের শ্লেষ, ‘‘দেখে অবাক লাগছে যে বিরোধীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারের অভিযোগ করছেন প্রধানমন্ত্রী। আসলে উনিই মিথ্যা বলছেন।’’

প্রশ্ন উঠছে, কেন নিজেই আজ জমি প্রসঙ্গ টেনে বিতর্ক বাড়ালেন মোদী? বিজেপির একাংশ নেতা মনে করছেন, জমি নীতি নিয়ে চলতি বিতর্ক রাজনৈতিক ভাবে দলের ক্ষতি করতে পারে, সেই আশঙ্কা রয়েছে। সে জন্যই মোদী-জেটলিরা জমি নীতি নিয়ে ধারাবাহিক প্রচারের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। হাত গুটিয়ে বসে নেই বিরোধীরাও। ক্ষমতা খোয়ানোর পরে গত ১০ মাসে এক জমি প্রসঙ্গই খানিকটা অক্সিজেন জুগিয়েছে কংগ্রেসকে। জমি নীতির কট্টর বিরোধিতা করে গিয়ে সরকারকে চাপে ফেলা গিয়েছে বলেই বারবার জমি প্রশ্নে মুখ খুলতে হচ্ছে মোদী ও তাঁর সরকার ও দলকে।

এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের মূল লক্ষ্য এখন একটাই, মোদী সরকারকে বড়লোকের বন্ধু সরকার বলে প্রতিপন্ন করা। জমি বিলের বিরোধিতার সঙ্গে কৃষি পণ্যের সহায়ক মূল্য না বাড়ানো, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সত্ত্বেও কৃষকদের ক্ষতিপূরণ না দেওয়া বা খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নে সরকারের ‘অনীহার’ প্রসঙ্গও সে জন্য জুড়ে দিয়েছে কংগ্রেস। খাদ্য সুরক্ষা আইনের বিষয়টি নিয়ে আজ সাংবাদিক বৈঠক করেন কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ। তিনি বলেন, ‘‘গণবন্টন ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য কেন্দ্র সম্প্রতি শান্তাকুমার কমিটি গঠন করেছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সংস্কারের বিষয়টি ছুতো। খাদ্য সুরক্ষা আইনের আওতায় উপভোক্তার সংখ্যা কমানোর সুপারিশ করেছে ওই কমিটি।’’ কংগ্রেসের অভিযোগ, আন্তর্জাতিক বাজারে কাঁচা তেলের দাম কমলেও পেট্রোলে অন্তঃশুল্ক বাড়িয়ে সরকার ৮০ হাজার কোটি টাকা বাড়তি আদায় করেছে। অথচ খাদ্য সুরক্ষায় ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ করতেও বুকে বাধছে প্রধানমন্ত্রীর।

এই সব বিষয় একত্র করে ১৯ এপ্রিল দিল্লিতে কৃষকসভা ডেকেছে কংগ্রেস। ওই সভার আয়োজন নিয়ে আজ কংগ্রেস দফতরে বৈঠক ছিল। দিগ্বিজয় আজ জানান, “ওই সভায় রাহুল গাঁধী উপস্থিত থাকবেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE