রাজ্যসভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি পিটিআই।
এক দিন আগে রাজ্যসভার বক্তৃতায় আন্দলনরত কৃষকদের একাংশকে ‘আন্দোলনজীবী’ বলে দেগে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তা নিয়ে সংসদের ভিতরে ও বাইরে বিস্তর সমালোচনার মুখে পড়ে বুধবার লোকসভায় ‘আন্দোলনকারী’ এবং ‘আন্দোলনজীবী’র মধ্যে সূক্ষ্ম ফারাক বোঝানোয় মন দিলেন তিনি। দাবি করলেন, বেসরকারি সংস্থার কাছে ফসল বেচতে বাধ্য করার কথা নতুন কৃষি আইনে বলা হয়নি। শুধু মান্ডির প্রচলিত পদ্ধতির পাশাপাশি খুলে দেওয়া হয়েছে সেই বাড়তি বিকল্প। যাতে চাইলে, তা কাজে লাগিয়ে ভাল দাম পেতে পারেন চাষিরা। সেই সঙ্গে, দিল্লি সীমানায় আন্দোলনে শামিল চাষিদের ফের আর্জি জানালেন আলোচনার টেবিলে বসতে।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কথায় প্রবল ভাবে ক্ষুব্ধ কৃষক নেতারা। চাক্কা জ্যামের কর্মসূচির পরে এ বার ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশ জুড়ে রেল রোকো-র ডাক দিয়েছেন তাঁরা। কৃষক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ওই দিন সারা দেশে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত রেল চলাচলে বাধা দেওয়া হবে। কৃষক সভার নেতা হান্নান মোল্লা বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী দু’দিন ধরে সংসদে মিথ্যে বললেন। তাই আন্দোলন আরও জোরদার করতে দেশ জুড়ে রেল রোকোর এই সিদ্ধান্ত।’’
ছোট চাষিদের জন্য তাঁর সরকার কী কী করেছে, এ দিন লোকসভায় বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন মোদী। একই সঙ্গে, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে কিছুটা সাফাই দেওয়ার সুরে বলেছেন, ‘‘কৃষক আন্দোলনকে পবিত্র বলেই মনে করি। কিন্তু সেই পবিত্রতা যাঁরা নষ্ট করেন, তাঁরা আন্দোলনকারী নন, আন্দোলনজীবী। দু’য়ের পার্থক্য বোঝা জরুরি।... এরা গুজব ছড়িয়ে দেশকে হীনবল করতে চাইছেন।’’
আন্দোলনজীবী কারা? মোদীর কথায়, যাঁরা হাজতে বন্দি নকশালবাদী, সন্ত্রাসবাদীদের ছবি বুকে লাগিয়ে কৃষকের কথা বলছেন, টোল প্লাজ়া দখল করছেন, পঞ্জাবে টেলিফোনের তার ছিঁড়েছেন, তাঁরা কৃষক আন্দোলনের পবিত্রতা নষ্ট করতে চান। প্রধানমন্ত্রীর মতে, এঁরা মুখে বড় বড় কথা বলেন, কিন্তু আদপে কাজের কাজ করেন না। এঁরাই আন্দোলনজীবী।
মোদী বারবার বোঝাতে চেয়েছেন, নতুন কৃষি আইনে বেসরকারি সংস্থার কাছে ফসল বিক্রি বাধ্যতামূলক নয়। পুরনো মান্ডি-ব্যবস্থাও বহাল থাকছে। তাকে আরও জোরদার করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘‘এই আইনে দেশের কোনও জায়গায় লাভ হবে, কোনও জায়গায় হবে না। যাঁরা পুরনো ব্যবস্থায় থাকতে চান, তাঁদের জন্য সেই রাস্তা খোলা। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ মানুষের কল্যাণে এই আইন।’’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, ‘‘অনেকের মতে, এই আইন যখন চাওয়াই হয়নি, তাহলে তা আনা হল কেন? তিন-তালাক, বাল্যবিবাহ বিরোধী আইন, শিক্ষার অধিকার সংক্রান্ত আইনই বা কে চেয়েছিল? সবই তো আনা হয়েছে দেশের ও সমাজের উন্নতির জন্য।’’ তাঁর কটাক্ষ, এটি সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা নয় যে, চাইলে তবে তা দেওয়া হবে। ’’ মোদীর পাল্টা প্রশ্ন, ‘‘কংগ্রেস দশকের পর দশক দেশ শাসন করে স্থিতাবস্থা বজায় রেখেছিল। অথচ বিশ্ব বদলে যাচ্ছে। কত দিন আর অপেক্ষা করব?’’ চাষিদের অবশ্য জিজ্ঞাসা, তাঁদের সঙ্গে কথা না-বলে এই আইন তৈরির অর্থ কী? বেসরকারি সংস্থার দাপটে দীর্ঘ মেয়াদে মান্ডি-ব্যবস্থা কতটা থাকবে, তা নিয়েও সংশয়ী তাঁরা।
আজ সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার সময়ে বারবার বাধা দিয়েছেন বিপক্ষ দলগুলি। শোনা গিয়েছে চিৎকার এবং স্লোগান। প্রথমে তা হালকা চালে নিলেও, পরে বিরক্ত দেখিয়েছে মোদীকে। লোকসভায় কংগ্রেসের দলনেতা অধীর চৌধুরীর উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘‘অনেক বেশি হয়ে যাচ্ছে। এ বার বন্ধ করুন।’’ বক্তৃতার মাঝেই কংগ্রেস এবং পরে তৃণমূল সাংসদরা কৃষকদের প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে কক্ষত্যাগ করেন। প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, ‘‘এই হৈ-হল্লা করে বলতে না-দেওয়া ঠান্ডা মাথার রণনীতি। কারণ, বললে, গুজব ছড়ানো ব্যক্তিদের মুখোশ খুলে যাবে।’’
অধীরের কথায়, ‘‘দু’শোর বেশি কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু তবু প্রধানমন্ত্রী নীরব। উনি বলেছেন, এই আইনে কারও লোকসানও হতে পারে। তাহলে এমন আইন কেন আনা হল যাতে সবার লাভ হবে না?’’ তাঁর প্রশ্ন, যদি দেড় বছর আইন কার্যকর করার বিষয়টি স্থগিত রাখার কথাই বলেন, তাহলে তা প্রত্যাহার নয় কেন? তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের কথায়, ‘‘নব্বই দিন খোলা আকাশের নীচে শিশু, নারী, বৃদ্ধেরা বসে আছেন। যাঁদের জন্য আইন, তাঁরাই না চাইলে, তা প্রত্যাহার করা হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy