দু’বছরেই পরিস্থিতি আমূল বদলে গেল। ২০২৩ সালে মলদ্বীপের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে মহম্মদ মুইজ়্জ়ু তাঁর দেশের উপর ‘ভারতের সামরিক প্রভাব’ খর্ব করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ভোটে জেতার পরে মলদ্বীপ ফৌজকে প্রশিক্ষণে সহযোগিতার জন্য মোতায়েন ভারতীয় সেনাকে ফিরে যাওয়ার ‘নির্দেশ’ দিয়েছিলেন। শুক্রবার সেই মুইজ়্জ়ুই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে গেলেন সে দেশের প্রতিরক্ষা দফতরের নতুন সদর দফতরের উদ্বোধনে!
আর প্রধানমন্ত্রী মোদী? তাঁর গলায় শোনা গেল নয়াদিল্লি-মালে সামরিক সমঝোতা দৃঢ় করার অঙ্গীকার। প্রধানমন্ত্রী বললেন, ‘‘মলদ্বীপের প্রতিরক্ষা সক্ষমতা উন্নয়নে সহায়তা অব্যাহত রাখবে ভারত। আমাদের দুই দেশের অভিন্ন লক্ষ্য, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধি অব্যাহত রাখা।’’ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রতীক হিসেবে মলদ্বীপ সেনার হাতে ৭২টি সামরিক যান এবং কিছু প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তুলে দেন মোদী। মুইজ়্জ়ুর প্রতিরক্ষা দফতরের নতুন ভবনকে চিহ্নিত করে বলেন, ‘‘এটি শক্তিশালী অংশীদারি এবং অটল বিশ্বাসের কংক্রিট দিয়ে নির্মিত।’’
মলদ্বীপের রাজধানী মালেতে গিয়ে শুক্রবার প্রেসিডেন্ট মুইজ়্জ়ুর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার নানা বিষয় নিয়ে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। বিদেশ মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছে, দুই রাষ্ট্রনেতার শুক্রবারের বৈঠকের আলোচনার অন্যতম বিষয় ছিল ভারতের তরফে মলদ্বীপকে সাড়ে ৫৬ কোটি ডলার (প্রায় ৪৯০০ কোটি টাকা) ঋণ দেওয়ার প্রস্তাব। এ ছাড়া মোদী-মুইজ্জু বৈঠকে ভারত-মলদ্বীপ ‘মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি’ এবং সমুদ্র গবেষণার মতো বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
তার আগে শুক্রবার সকালে মলদ্বীপের রাজধানী মালের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে মোদীর বিমান। তাঁকে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে উপস্থিত ছিলেন মুইজ়্জ়ু। এর পরে মলদ্বীপের ৬০তম স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে যোগ দিতে যান প্রধানমন্ত্রী। ২১টি তোপধ্বনির মাধ্যমে সম্মানিত করা হয় মোদীকে। প্রসঙ্গত, ১৯৬৫ সালের ২৬ জুলাই আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাধীনতা লাভ করেছিল একদা ব্রিটিশ শাসনাধীন মলদ্বীপ। দু’বছর আগে মুইজ়্জ়ু যখন মলদ্বীপের প্রেসিডেন্টের কুর্সিতে বসেছিলেন, ভারতের সঙ্গে ওই দ্বীপরাষ্ট্রের সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। উল্টো দিকে চিনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে মুইজ়্জ়ুর। গদিতে বসার পরপরই তিনি চিন সফরেও গিয়েছিলেন।
এর পরে মোদীর লক্ষদ্বীপ সফরকে কেন্দ্র করে মলদ্বীপের কয়েক জন মন্ত্রীর মন্তব্যে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। মুইজ়্জ়ু মলদ্বীপ থেকে ভারতকে সেনা সরিয়ে নিতে বলার পরে নয়াদিল্লি-মালে টানাপড়েন নতুন মাত্রা পেয়েছিল। ভারতীয় পর্যটকদের প্রিয় মলদ্বীপকে বয়কটের ডাকও উঠেছিল এ দেশে। সেই দেশের পর্যটনে যা গুরুতর প্রভাব ফেলে। কিন্তু গত দু’বছরে মলদ্বীপের আর্থিক পরিস্থিতি ক্রমশ খারাপ হয়েছে। বেজিংয়ের তরফে প্রত্যাশিত সহায়তা না পাওয়ারও অভিযোগ উঠেছে ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রের অন্দরে। প্রশ্ন উঠেছে, ‘ইন্ডিয়া আউট’ নীতির কার্যকারিতা নিয়ে। এমনকি, আন্তর্জাতিক অর্থভান্ডার (আইএমএফ) সতর্কবাণী শুনিয়েছে যে, বেজিঙের ঋণের জালে জড়িয়ে পড়তে পারে মালে। এই আবহে মোদীর সফরে ভারত-মলদ্বীপ প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ঘোষণা নতুন মাত্রা আনল। শনিবার মালে থেকে নয়াদিল্লি ফেরার কথা প্রধানমন্ত্রীর। তার আগে তিনি আরও কয়েকটি কর্মসূচিতে যোগ দেবেন মলদ্বীপে।