গত পাঁচ দিনের মধ্যে গাজ়ায় শান্তি ফেরানো নিয়ে ট্রাম্পের উদ্যোগের দু’বার প্রশংসা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর আগে করেছিলেন গত বুধবার।এরপর আজ।
প্রসঙ্গত প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ট্রাম্পের কুড়ি দফা প্রস্তাব নিয়ে প্রাথমিকভাবে নীরব থাকায় ক্ষুব্ধ ট্রাম্প, হামাসকে সময় বেঁধে দেন। রবিবারের মধ্যে ওই প্রস্তাবে রাজি না হলে হামাসকে ‘নরক যন্ত্রণা’ ভোগ করতে হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন। এর পরেই হামাসের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়, ২০ দফা প্রস্তাবে তারা রাজি। বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। গাজ়ার পরিস্থিতি নিয়ে তারা আলোচনার টেবিলে যাওয়ার কথাও জানিয়েছে। ট্রাম্প নিজের সমাজমাধ্যমে হামাসের বিবৃতিটি প্রকাশ করেছেন। এর পরেই মোদী আজ সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘গাজ়ায় শান্তি ফেরানোর প্রচেষ্টার গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হল এবং এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। বন্দিদের মুক্তির ইঙ্গিত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।’ এর পর তিনি লেখেন, ‘স্থায়ী এবং ন্যায়সঙ্গত শান্তির লক্ষ্যে সকল প্রচেষ্টায় ভারতের দৃঢ় সমর্থন রয়েছে, আগামী দিনেও থাকবে।’
ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্টাইনের সংঘাতের মতো স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ভারত অত্যন্ত সতর্কতা বজায় রেখে কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া দেয়। রাষ্ট্রপুঞ্জে ভোটাভুটির ক্ষেত্রেও সাবধানতার সঙ্গে পদক্ষেপ করে। ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাব ও বিবৃতিতে মোদীর বারবার পাশে দাঁড়ানো নিয়ে কূটনৈতিক মহলে তাই প্রশ্ন এবং বিতর্ক শুরু হয়েছে। ঘটনা হল, এই বিষয়টি নিয়ে ভারতের চিরাচরিত এবং ঐতিহ্যগত রাজনৈতিক অবস্থান রয়েছে। ভারত ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্টাইন প্রশ্নে আলোচনার মাধ্যমে 'দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধান' চায়। কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ট্রাম্পের প্রস্তাবে বাস্তবে প্যালেস্টাইনবাসীর ভবিষ্যৎ গঠনে কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়ে গিয়েছে।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, ট্রাম্পের গাজ়া পরিকল্পনায় প্যালেস্টাইনের মানুষের ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি কী হবে তার কোনও উল্লেখ নেই। পশ্চিমের দেশগুলি যখন স্বাধীন সার্বভৌম প্যালেস্টাইন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিচ্ছে, তখন ট্রাম্পের পরিকল্পনায় দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের নাম গন্ধ নেই। বরং যে ভাবে আগ্রাসী হুমকি তিনি দিচ্ছেন তাতে ইজ়রায়েলের প্রেসিডেন্ট বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর প্রতি তাঁর পক্ষপাত অস্পষ্ট থাকছে না। পাশাপাশি এটাও মনে করা হচ্ছে, এই প্রস্তাব অনুযাযী গাজ়া ভূখণ্ডে সশস্ত্র বা নিরস্ত্র হামাসের আর কোনও ভূমিকাই থাকবে না। ১৯৮৮ সাল থেকে প্যালেস্টাইনের জাতীয় আন্দোলনের রাশ অনেকটাই যাদের হাতে ছিল সেই হামাসের কাছে এটা বিরাট ধাক্কা।
কূটনৈতিক মহলের বক্তব্য, মোদী ট্রাম্পের প্রস্তাবে বারবার সমর্থন জানাচ্ছেন ঠিকই, কিন্তু ভারতীয় অবস্থানের সঙ্গে তার কোনও সংযোগ নেই। প্যালেস্টাইন সঙ্কট সমাধানে নয়াদিল্লির দ্বিরাষ্ট্রীয় নীতির সংজ্ঞা—দু'পক্ষের আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছনো যেখানে নিরাপদ এবং স্বীকৃত সীমান্তের মধ্যে একটি স্বাধীন সার্বভৌম কার্যকর প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হবে, যেখানে ইজ়রায়েলের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস সম্ভব হবে। ট্রাম্পের বিশ দফায় প্রস্তাব তার ধার কাছ দিয়েও যাচ্ছে না। ভারত-আমেরিকা বাণিজ্যচুক্তির কথা মাথায় রেখেই নোবেল প্রত্যাশী ট্রাম্পকে পাকিস্তানের মতোই ভারতও ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইন প্রশ্নে সমর্থন করছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)