Advertisement
১৭ মে ২০২৪
PM Narendra Modi

বিজেপির নীতিতে প্রেরণা পাবে বিশ্ব, ‘তৃতীয় বিশ্বের’ আত্মবিশ্বাস বাড়াল ভারত, সাক্ষাৎকারে বললেন মোদী

জি২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্বের ‘গৌরবগাথা’ নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বললেন, ‘‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ নীতিতে ভর করে যেমন দেশের উন্নতিসাধন হয়েছে, এই মডেল গোটা বিশ্বকেও পথ দেখাতে পারে।’’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:৪৬
Share: Save:

২০১৪ সালে দিল্লির কুর্সি দখলের পর থেকেই ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ স্লোগানকে হাতিয়ার করে এগোতে দেখা যায় নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপিকে। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট, এমনকি দেশের কোনও রাজ্যে ভোট এলেই বিজেপির প্রচারসভায় বারেবারে ফিরে আসে ‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’-এর কথা। এ বার আন্তর্জাতিক স্তরেও সেই স্লোগানকে তুলে ধরতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। জি২০ গোষ্ঠীর সভাপতিত্বের ‘গৌরবগাথা’ নিয়ে বলতে গিয়ে তিনি বললেন, ‘‘সবকা সাথ সবকা বিকাশ’ নীতিতে ভর করে যেমন দেশের উন্নতিসাধন হয়েছে, এই মডেল গোটা বিশ্বকেও পথ দেখাতে পারে।’’ সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী এ-ও জানালেন, ভারতের জি২০-তে সভাপতিত্বের দায়িত্বলাভ তথাকথিত তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির আত্মবিশ্বাস আরও বাড়িয়ে তুলবে। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত উন্নত দেশ হয়ে উঠবে। দেশে দারিদ্র, দুর্নীতি, জাতিবাদ, সাম্প্রদায়িকতার অস্তিত্ব থাকবে না।

জি২০-এর সভাপতিত্বের পদপ্রাপ্তি সম্মানের হলেও কেন্দ্রের মোদী সরকার যে ভাবে এটিকে ‘বিশেষ কৃতিত্ব’ হিসাবে তুলে ধরতে চাইছে, তা মানতে নারাজ বিরোধীরা। তাদের বক্তব্য, ভারত এক বছরের জন্য সভাপতি পদে থাকবে। ২০২২-এর ১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া দায়িত্ব ২০২৩-এর ৩০ নভেম্বরে শেষ। জি২০ গোষ্ঠীর সদস্য দেশগুলি ঘুরেফিরে প্রত্যেকেই এই এক বছরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে থাকে, ভারতের আগে সভাপতি ছিল ইন্দোনেশিয়া। এ বছর ডিসেম্বরে ভারতের হাত থেকে দায়িত্ব নেবে ব্রাজ়িল, তার পরে দক্ষিণ আফ্রিকা। সবই পূর্বনির্ধারিত এবং জি২০’র নিয়ম মেনেই। বিরোধী দলগুলির যুক্তি, জি২০’র সভাপতিত্বকে দেশের তথা কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সাফল্য’ বলে প্রচার আসলে লোকসভা নির্বাচনে ভোট কুড়োনোর ফন্দি।

এতদসত্ত্বেও কূটনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, ভারত যে সময়ে সভাপতিত্বের দায়িত্ব পেয়েছে, তা খানিক অন্য রকম। আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতি এখন নানা টানাপড়েনে দীর্ণ। সময়টা অতিমারি-উত্তর অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। সেই কারণেই ভারতের এই পদপ্রাপ্তিকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন তাঁরা। পিটিআই-এর সাক্ষাৎকারে মোদীর বক্তব্যেও সে কথা বারবার ঘুরেফিরে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী জানান, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যে ভাবে শক্তিধর দেশগুলির ক্রমতালিকায় বদল এসেছিলেন, সেই একই প্রবণতা দেখা গিয়েছে অতিমারি-উত্তর পর্বেও। তা সত্ত্বেও মোদীর মত, অর্থনৈতিক দিক থেকে এগিয়ে না পিছিয়ে, তার বিচার না করে সব দেশেরই মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

ক্ষমতায় আসার পর একাধিক বার সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রবাদ (কোঅপারেটিভ ফেডারালিজ্ম)-এর পক্ষে সওয়াল করতে দেখা গিয়েছে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে। সাক্ষাৎকারেও তিনি জানালেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জি২০ বৈঠকের আয়োজন করে সাধারণ মানুষের মধ্যে সেই সহযোগিতামূলক যুক্তরাষ্ট্রবাদের ধারণা বৃদ্ধিরই চেষ্টা করা হয়েছে। মোদী বলেন, ‘‘আগে আমরা দেখতাম, এই ধরনের বড় বড় সম্মেলন সবই দিল্লিতে আয়োজিত হত। কিন্তু এ বার দেশের ২৮টি রাজ্য এবং আটটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মোট ৬০টি শহরে জি২০ বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ২২০টিরও বেশি বৈঠক হচ্ছে এ বার। শুধু সব রাজ্যে জি২০ বৈঠকের আয়োজনেই বিষয়টি সীমিত নয়, বৈঠক আয়োজনে প্রতিটি রাজ্যই তার নিজস্ব সংস্কৃতির ছাপও রাখছে।’’ কাশ্মীর এব‌ং অরুণাচপ্রদেশে জি২০ বৈঠকের আয়োজন নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে বিতর্ক দানা বেঁধেছিল। প্রবল আপত্তি জানিয়েছিল পাকিস্তান এবং চিন। সে প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেশ জুড়ে যখন বৈঠকের আয়োজন করা হচ্ছে, তখন কাশ্মীর এবং অরুণাচলপ্রদেশ কেন বাদ যাবে?’’

বিশ্ব অর্থনীতির বিচারে ভারতের অবস্থান নিয়েও সাক্ষাৎকারে কথা বলেছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘জনাদেশে মিলেছে। কেন্দ্রে স্থায়ী সরকার রয়েছে। স্থায়ী সরকার থাকার কারণেই নানা ক্ষেত্রে সংস্কার হচ্ছে। উন্নয়ন তো হবেই। দীর্ঘ দিন ধরে ভারতকে শুধু ক্ষুধার দেশ বলেই মনে করা হত। এখন অবস্থা বদলেছে। এদেশে শিক্ষিত যুবক-যুবতীর সংখ্যা দিনে দিনে বাড়ছে। কোটি কোটি মানুষ এখন দক্ষ হয়ে উঠছেন।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘এখন উন্নয়নের যে বীজ বপন করা হচ্ছে, তা আগামী এক হাজার বছর ধরে মনে রাখা হবে। ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারত উন্নত দেশ হয়ে উঠবে। দারিদ্র দূর হবে। দুর্নীতি, জাতিবাদ, সাম্প্রদায়িকতার কোনও অস্তিত্বই থাকবে না।’’

মোদী জানান, পরিবেশের কথা মাথায় রেখে ভারতের মতো আমদানি-নির্ভর দেশ ধীরে ধীরে জৈব জ্বালানির ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। গত কয়েক বছরে সৌরশক্তির উৎপাদন দেশের ২০ গুণ বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘জি২০ দেশগুলির মধ্যে ভারতই একমাত্র দেশ, যারা নির্ধারিত সময়ের ন’বছর আগেই পরিবেশরক্ষার লক্ষ্যমাত্রা ছুঁয়ে ফেলেছে।’’ জি২০ গোষ্ঠীতে আফ্রিকা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তি নিয়েও সওয়াল করেছেন মোদী। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের জি২০-তে সভাপতিত্বের থিম হল— এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ। আমরা সকলের অন্তর্ভুক্তিতেই বিশ্বাস করি। যাঁদের কথা শোনা হয় না, বিশেষত তাঁদের। আমরা মহাত্মা গান্ধী, মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র, নেলসন ম্যান্ডেলার আদর্শে বিশ্বাসী। ভারত এবং আফ্রিকার সম্পর্ক যাতে আরও মজবুত হয়, সেই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই অনেক পদক্ষেপ করা হয়েছে।’’ এই প্রসঙ্গে তিনি ‘ইন্ডিয়া-আফ্রিকা ফোরাম সামিট ২০১৫’-র কথা উল্লেখ করেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

PM Narendra Modi Narendra Modi G20 Summit 2023
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE