E-Paper

জরুরি অবস্থায় শিখও সাজেন, লিখেছেন প্রধানমন্ত্রী

ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময়ে, তিনি কী ভাবে একজন প্রতিরোধীর দায়িত্ব পালন করে সরকার বিরোধিতায় সক্রিয় ছিলেন, তা নিজের ‘ইমারজেন্সি ডায়েরি— ইয়ারস দ্যাট ফরজড লিডার’ বইতে তুলে ধরেছেন নরেন্দ্র মোদী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২৫ ০৭:১৪
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।

তাঁর বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ, তাঁর শাসনে গত এক দশক ধরে অঘোষিত স্বৈরতন্ত্র জারি রয়েছে দেশে। আরও অভিযোগ, সরকারের ইচ্ছেয় বদলে ফেলা হচ্ছে দেশের ইতিহাস। ধীরে ধীরে ধ্বংসের পথে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে সাংবিধানিক সংস্থাগুলিকে। বিরোধী তৃণমূল কং‌গ্রেসের মতে, পঞ্চাশ বছর আগে ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা জারি করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু মোদী সরকারের গত এগারো বছরে প্রচ্ছন্ন ভাবে জরুরি অবস্থার মধ্যেই রয়েছে দেশ। এমন অভিযোগ-বাণের মুখে যাবতীয় সমালোচনার জবাব দিতে কলম ধরলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এবং বেছে নিলেন জরুরি অবস্থার পাঁচ দশক পূর্তির সময়টাকেই।

ইন্দিরা গান্ধীর জরুরি অবস্থা ঘোষণার সময়ে, তিনি কী ভাবে একজন প্রতিরোধীর দায়িত্ব পালন করে সরকার বিরোধিতায় সক্রিয় ছিলেন, তা নিজের ‘ইমারজেন্সি ডায়েরি— ইয়ারস দ্যাট ফরজড লিডার’ বইতে তুলে ধরেছেন নরেন্দ্র মোদী। বিরোধীদের কটাক্ষ, তিনি যে স্বৈরাচারী নন, উল্টে জরুরি অবস্থার মোকাবিলায় তিনি যে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন, সেই ইতিহাস প্রমাণে এ হল মোদীর ‘ব্যর্থ প্রচেষ্টা’।

আজ প্রধানমন্ত্রীর লেখা বইটির উদ্বোধন করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। জরুরি অবস্থার সময়ে নরেন্দ্র মোদী কখনও শিখ, কখনও সন্ন্যাসী বা হিপি সেজে কী ভাবে বারংবার পুলিশকে ফাঁকি দিয়েছেন, সেই কাহিনি তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে। বইটি অনুযায়ী, জরুরি অবস্থার প্রতিবাদ জানিয়ে গুজরাতের বিশিষ্টজন ও আরএসএস নেতৃত্ব যে লেখা লিখতেন, তা গোপনে সংগ্রহ করে নিরাপদে ছাপাখানায় পৌঁছে দেওয়াই মূল কাজ ছিল মোদীর। জরুরি অবস্থার ২১ মাসে ধৃত আরএসএস কর্মীদের পরিবারের খোঁজখবর নেওয়া, প্রয়োজনে টাকা দিয়ে সাহায্য করার কথাও বইটিতে উল্লেখ করেছেন মোদী। সেই সময়ে যে তিনি গোপনে সঙ্ঘ প্রচারক হিসাবে সরকার বিরোধী আন্দোলনের জন্য খবর সংগ্রহ করে জায়গা মতো পৌঁছে দিতেন, সে কথা এ দিন সকালে নিজের এক্স হ্যান্ডলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

আজ মোদীর ওই বইয়ের উদ্বোধন ছাড়াও জরুরি অবস্থা নিয়ে দিল্লি-সহ দেশ জুড়ে একাধিক আলোচনাসভার আয়োজন করে বিজেপি। লক্ষ্য, পাঁচ দশক আগের জরুরি অবস্থার স্মৃতিকে নতুন করে উস্কে দেওয়া। যদিও বিরোধীদের মতে, জরুরি অবস্থা আজকের রাজনীতিতে অনেকাংশেই প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। রাজনৈতিক সমীকরণ পাল্টে গিয়েছে। বর্তমানে কেবল কংগ্রেসকে কোণঠাসা করতেই এ ভাবে জরুরি অবস্থার রাজনীতিকরণে নেমেছে শাসক দল, মত রাজনীতিকদের। আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে জরুরি অবস্থার স্মৃতিতে দু’মিনিট নীরবতাও পালন করা হয়। তার পরে বৈঠকে একটি প্রস্তাব পাশ হয়। ঠিক হয়েছে, কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রকের উদ্যোগে আগামী এক বছর ধরে জরুরি অবস্থার পাঁচ দশক পূর্তিতে দেশ জুড়ে নানা অনুষ্ঠানকরা হবে।

বইতে স্মৃতিচারণে সে সময়কার প্রধানমন্ত্রীর এক সঙ্গী জানিয়েছেন, এক দিন মোদী গালে চাপ দাড়ি ও মাথায় পাগড়ি পরে শিখের ছদ্মবেশে আমদাবাদে অটোয় যাচ্ছিলেন। শিখ অটোচালক শুদ্ধ পঞ্জাবিতে কথা শুরু করেন। ভাঙা ভাঙা পঞ্জাবিতেই চালককে জবাব দেন মোদী। তিনি জানান, আসলে তিনি শিখ হলেও, বড় হয়ে ওঠা গুজরাতে। তাই পঞ্জাবি ভাষা ভাল করে শেখা হয়নি। আত্মবিশ্বাসী গলায় মোদীর বলা অসত্যকেই সত্য বলে মেনে নেন ওই অটোচালক।

বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া। তাতে যুব বয়সে মোদী যে ভাবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, তার প্রশংসা করেন তিনি। যা নিয়ে কংগ্রেসের বর্তমান সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের বক্তব্য, ‘‘জরুরি অবস্থার প্রথম দিকে অন্য জনতা দল নেতাদের মতো দৌবগোড়াকে গ্রেফতার করা হয়নি। সে জন্য তিনি অস্থির হয়ে পড়েন। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী দেবরাজ উরসকে প্রশ্ন করেন দেবগৌড়া, কেন তাঁকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না? সেই দেবগৌড়া লিখেছেন মোদীর মুখবন্ধ!’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

PM Narendra Modi Sikh

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy