Advertisement
E-Paper

অস্থির সময়ে কবি চান সেতু বাঁধুক ভিন্ন মত

‘আছি, তবু ভাঙা এই দেশকাল নিয়ে আজও আছি / এরও চেয়ে বড়ো কিছু হয়?’ এই অমোঘ প্রশ্নটিই এক শান্ত উত্তর আসলে। ধর্মের দোহাই দিয়ে হানাহানি, কথ্য ভাষাকে গৃহস্থঘর থেকে হিঁচড়ে টেনে ধর্ষণ, সামাজিক পরিসরকে গ্রাস করে সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধিলাভের এই দুঃস্থ সময়ে তাঁর থাকাটা— ভরসারই নামান্তর।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:১৮
কবি-সঙ্গ:  ‘এক এবং দশ’ পাঠচক্রের আড্ডায় শঙ্খ ঘোষ। দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কে। —নিজস্ব চিত্র।

কবি-সঙ্গ: ‘এক এবং দশ’ পাঠচক্রের আড্ডায় শঙ্খ ঘোষ। দিল্লির চিত্তরঞ্জন পার্কে। —নিজস্ব চিত্র।

‘আছি, তবু ভাঙা এই দেশকাল নিয়ে আজও আছি / এরও চেয়ে বড়ো কিছু হয়?’

এই অমোঘ প্রশ্নটিই এক শান্ত উত্তর আসলে। ধর্মের দোহাই দিয়ে হানাহানি, কথ্য ভাষাকে গৃহস্থঘর থেকে হিঁচড়ে টেনে ধর্ষণ, সামাজিক পরিসরকে গ্রাস করে সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধিলাভের এই দুঃস্থ সময়ে তাঁর থাকাটা— ভরসারই নামান্তর।

তিনি, শঙ্খ ঘোষ, রাজধানীর চিত্তরঞ্জন পার্কে ‘এক এবং দশ’ পাঠচক্রের আড্ডায় থাকলেন শুক্রবার সন্ধ্যায়। মিতভাষে, নিজস্ব ঘরানায় আলো ফেললেন সমসময়ের ক্ষতে। সত্যিই তো, এর চেয়ে বড় সত্য কিছু হয়, যখন কবি বলেন, ‘‘স্বাভাবিক সামাজিক জীবনের যে পরিসর ছিল, তা ক্রমশ সঙ্কুচিত হতে হতে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক নেতাদের মুখের ভাষা বদলে যাচ্ছে, তা চেপে বসছে সাধারণ মানুষের ঘাড়ে। স্বার্থের রাজনীতি এখন নিয়ন্ত্রণ করছে সমাজ ও ব্যক্তিজীবনকে।’’

‘ভিন্ন রুচির অধিকার’ নিয়ে সে তো কবেই সওয়াল করেছিলেন কবি। আজও তাঁর কলম প্রতিবাদে অবিচল, অসহিষ্ণুতা নিয়ে প্রতিনিয়ত সরব। বলছেন, ‘‘কথা বলতে হবে ভিন্ন মেরুর মানুষের সঙ্গে। ভিন্ন মতাবলম্বীদের সঙ্গে। ভিন্ন ধর্মবিশ্বাসীদের সঙ্গে।’’ কোনও বড় রাজনৈতিক উদ্ধারের জন্য অপেক্ষা না করে নিজেদেরই সচেতনতা বাড়াতে হবে—তাঁর বিশ্বাস। ‘‘শুধুমাত্র হিন্দুদের সভা করে সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতার বিষয়ে মিটিং-আলোচনা করে লাভটা কী? একই ভাবে শুধুমাত্র মুসলমানরা নিজেরা বৈঠক করলেও সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী কোনও সুরাহা পাওয়া সম্ভব নয়। সমস্ত সম্প্রদায়কে এক মঞ্চে এনে সমস্যা নিয়ে আদানপ্রদান করলে, তবেই ফল মিলতে পারে।’’

আরও পড়ুন:‘বিপুলা পৃথিবী’র হাতে আনন্দ-অর্ঘ্য

শঙ্খ ঘোষের সঙ্গে আলোচনাচক্র, ফলে সমসময়ের ছায়ায় রবীন্দ্রনাথ এসে বসবেন না— এমনটা হয় না। ‘শিবাজি উৎসব’ কবিতাটি লেখার পরের বছরই বঙ্গভঙ্গ। রবীন্দ্রনাথ যে ভুল বার্তা যেতে পারে বলে কোনও বইতে তখন সে কবিতা দেননি, বহু পরে ‘পূরবী’ কাব্যগ্রন্থের শেষে জুড়ে দিয়েও তুলে নিয়েছিলেন কুণ্ঠায়— এই অব্যর্থ অনুমানের কথা শোনালেন শঙ্খবাবু। রবীন্দ্রনাথ যে কোনও দেবতা নন, রক্তমাংসেরই মানুষ— সেই প্রসঙ্গে শোনালেন একটি অনন্য কাহিনি। প্রমথনাথ বিশী এক বার রবীন্দ্রকাব্য সংক্রান্ত তাঁর একটি গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের অতিকথনের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। বইটি তিনি খোদ কবিগুরুর কাছেও পাঠান। সমালোচনায় খুব খুশি হননি রবীন্দ্রনাথ, প্রসঙ্গটি যেন এড়িয়েই গিয়েছিলেন প্রমথনাথের সামনে। এর পর প্রমথবাবু নিজের অন্য একটি বইও পাঠান রবীন্দ্রনাথকে পড়ার জন্য। তাঁর মৃত্যুর পর শান্তিনিকেতন গিয়ে সেই বইটি কবিগুরুর টেবিলে খুঁজে পান। খুলে দেখেন, কিছু পাতার মার্জিনে পেন্সিলের দাগ। সেখানে লেখা, ‘এটি কি অতিকথন নয়!’

Shankha Ghosh Society Politics
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy