সত্যান্বেষী ছাড়া আর কেউ কি পারবেন! উত্তর ভারতের পুলিশের এখন তাই ব্যোমকেশ বক্সীর মতো কাউকেই খুব প্রয়োজন! কারণ সেখানে চলছে অন্য এক ‘বেণীসংহার!’
মহিলারা কখনও ঘরের মধ্যে হঠাৎই শুনছেন অচেনা সুর। তার পরে অবশ হয়ে আসছে শরীর। আবার কখনও বা আশেপাশে কোনও ভারী চেহারার নড়াচড়া টের পাওয়া যাচ্ছে! তার পরে অসহ্য মাথা যন্ত্রণা। কারও কারও ক্ষেত্রে আবার এ সব কিছুই নয়। বন্ধ ঘরের ভিতরে গভীর
ঘুমের মধ্যেই সমূলে কাটা পড়ছে চুলের বেণী! মাটিতে পড়ে থাকছে মাথার চুলের সেই গোছা।
দিল্লি, রাজস্থান, হরিয়ানা, পঞ্জাবে এই নিয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আট থেকে আশি— সব বয়সের মহিলাদের চুলের ঝুঁটি নাকি ‘কেউ’ এসে সম্পূর্ণ অজ্ঞাতসারে কেটে দিয়ে যাচ্ছে! নানা দিক থেকে এমন অভিযোগের ঢল। কিন্তু ‘চুল-চেরা’ বিশ্লেষণের পরেও পুলিশ রহস্যভেদ করতে পারেনি এই আজব ঘটনার। ফলে দ্রুত ছড়াচ্ছে গুজব এবং ত্রাস। তার জেরে হিংসাও। ‘চুল-কাটিয়ে’ সন্দেহে গত কালই আগরার কাছে পিটিয়ে খুন করা হয়েছে ষাটোর্ধ্ব দলিত মহিলা মালা দেবীকে।
পশ্চিম দিল্লির মায়াপুরীর ঘটনাটি প্রথম প্রকাশ্যে আসে। রাতে দরজা বন্ধ করে ঘুমোচ্ছিলেন ৩৭ বছরের মনিকা এবং তাঁর তিন মেয়ে। শেষ রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে মনিকাদেবী দেখেন, তাঁর বালিশে পড়ে রয়েছে চুলের গোছা। ভয় পেয়ে মেয়েদের ঘুম থেকে তুলে দিয়ে তাঁর চোখে পড়ে একই কাণ্ড! মনিকা জানিয়েছেন, ‘‘আমি নিজে দরজায় খিল দিয়ে শুয়েছি। কারও ঢোকার কোনও সম্ভাবনাই নেই। এমনকী কুকুর বেড়ালেরও।’’
আরও পড়ুন:স্টান্ট দেখাতে গিয়ে মৃত্যু দুই মদ্যপ বন্ধুর
এ রকমই ‘ব্যাখ্যাহীন’ ঘটনার শিকার পূর্ব দিল্লির পাণ্ডব নগরের ৫০ বছর বয়স্ক মালতীদেবী। পুজো করছিলেন সন্ধ্যাবেলা। বাড়িতে একাই ছিলেন। হঠাৎ মনে হল, কালো মতো ভারী শরীরের কেউ এক জন তাঁর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। এর পরে সংজ্ঞা হারান তিনি। জ্ঞান ফিরতে দেখেন, মাটিতে সাজানো রয়েছে তাঁরই মাথার চুল। রোহিণীতে এক জন বিকেল তিনটেয় শুনেছেন অচেনা সুরের শব্দ, তার পরেই তীব্র মাথা যন্ত্রণা। তার পরেই চুলে কোপ।
বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, সমস্যা যত না আইনশৃঙ্খলার, তার চেয়ে বেশি মানসিক। অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এর মনোবিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন প্রধান সুধীর খান্ডেলওয়াল বলছেন, ‘‘তথ্যের ভিত্তিতে মনে হচ্ছে, মহিলারা নিজেরাই নিজেদের চুল কাটছেন। জ্ঞাতসারে বা কোনও ঘোরের মধ্যে। অন্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করা অথবা অবদমিত ইচ্ছে প্রকাশের জন্যই হয়তো এই পন্থা।’’
গুরু তেগ বাহাদুর হাসপাতালের মনোবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান এন এস ভাটিয়ার মতে, ‘‘দিল্লিতে অন্তত ‘গণ হিস্টিরিয়া’র পূর্ব ইতিহাস রয়েছে। গুজবে গা ভাসানোরও। এটা হয়তো তারই নয়া সংযোজন। ২০০১ সালে হঠাৎই জনতা ‘কালো বাঁদর’ দেখতে শুরু করেছিল রাস্তায়। সেই তথাকথিত বাঁদরকে ধরতে গিয়ে কেউ কেউ নাকি আহতও হয়েছিলেন! তার পর গোটা ব্যাপারটাই উবে যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy