উর্জিত পটেলের ইস্তফা নিয়ে সরগরম রাজনৈতিক মহল।গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
মেয়াদ শেষ হতে বাকি ছিল মাত্র ন’মাস। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত আর অপেক্ষা সইল না। তার আগেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর পদ থেকে ইস্তফা দিলেন উর্জিত পটেল। ১৯৯০ সালের পর এই প্রথম মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে ইস্তফা দিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কোনও গভর্নর। সোমবার পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন উর্জিত। তাতেব্যক্তিগত কারণে সরে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। আর তার পরই তেতে উঠেছে দেশের রাজনৈতিক মহল। মোদী সরকারের লাগাতার হস্তক্ষেপে অতিষ্ঠ হয়েই তিনি আরবিআইয়ের দায়িত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন বিরোধীরা।
মঙ্গলবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশন শুরু হচ্ছে। তার আগে সোমবার নয়াদিল্লিতে বৈঠক ছিল কংগ্রেস-সহ বিরোধী দলগুলির। তাই উর্জিত পটেলের ইস্তফার খবরে প্রতিক্রিয়া দিতে একটু দেরি হয়ে যায় তাদের।
তবে কংগ্রেসের তরফেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথম প্রতিক্রিয়াটি আসে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিশানা করে নিজেদের টুইটার হ্যান্ডলে দলের তরফে লেখা হয়, ‘‘ফের একজন সরে গেলেন। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানটিতে নাক গলাচ্ছিলেন দেশের চৌকিদার। তাই আরবিআইয়ের গভর্নর পদ থেকে সরে গেলেন উর্জিত পটেল।’’
Another one bites the dust.
— Congress (@INCIndia) December 10, 2018
This is the result of our 'chowkidar's' assault on democratic institutions - RBI Governor, Urjit Patel steps down. https://t.co/SFEih1WYZ9
বিরোধীদের বৈঠক থেকে বেরিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুকে পাশে নিয়ে মোদী সরকারের তীব্র সমালোচনা করেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি বলেন, ‘‘বৈঠক চলাকালীনই খবর পেলাম যে, বিজেপি এবং সঙ্ঘ লক্ষ্যপূরণে সফল হয়েছে। ইস্তফা দিয়েছেন আরবিআই গভর্নর। যত দিন যাচ্ছে বেপরোয়া হয়ে উঠছে সরকার। এমন বাড় বেড়েছে ওরা যে, আরবিআই গভর্নরও স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারলেন না।’’
We have to stop the BJP’s assault on our institutions, stop the assault on the CBI, RBI, on EC on all institutions & the constitution: Congress President @RahulGandhi #ModiDestroysRBI pic.twitter.com/6ZnfSh0NLz
— Congress (@INCIndia) December 10, 2018
আরও পড়ুন: সংঘাতের জের! শেষ পর্যন্ত ইস্তফাই দিলেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর উর্জিত পটেল
নিজের টুইটার হ্যান্ডলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লেখেন, ‘‘আগে কখনও এমন হয়নি। একেবারে নজিরবিহীন ঘটনা। সত্যি উদ্বিগ্ন আমরা। জনসাধারণের টাকা পাহারা দেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলির বিশ্বাসযোগ্যতা ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। দেশজুড়ে অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা জারি হয়েছে। যা একেবারেই কাম্য নয়। আসুন সকলে মিলে একজোট হই। যাতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্নের ভারতকে ধরে রাখতে পারি আমরা। দেশের সমস্ত প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা রক্ষা হয়।’’
This has never happened before. This is unprecedented. We are deeply concerned. The RBI is the custodian of public money. The credibility of all institutions is being destroyed. This is a financial and economic emergency
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) December 10, 2018
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরীবাল টুইটারে লেখেন, ‘‘মোদী সরকারকে তিন লক্ষ কোটির ভাগ দেননি, তাই সরে যেতে হল আরবিআই গভর্নর উর্জিত পটেলকে। এ বার নিজেদের পছন্দের কাউকে ওই পদে বসাবে মোদী সরকার। যাতে লুঠ চালাতে সুবিধা হয়।’’
RBI governor Urjit Patel has been eased out since he refused to allow the Modi govt to plunder Rs Three lakh crore of RBI reserves. Now Modi govt will get a more pliable RBI governor who will allow this loot
— Arvind Kejriwal (@ArvindKejriwal) December 10, 2018
২০১৬ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর হিসেবে মেয়াদ শেষ হয় রঘুরাম রাজনের। তিনি দ্বিতীয় দফায় আগ্রহী থাকলেও, মোদী সরকারের তরফে তাঁকে সে রকম কোনও প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। পরবর্তীকালে নোটবন্দি নিয়ে একাধিকবার কেন্দ্রের সমালোচনা করতে দেখা যায় তাঁকে। উত্তরসূরিউর্জিত পটেলের প্রস্থানে তিনিও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সক্ষাত্কারে রঘুরাম বলেন, ‘‘ইস্তফার যে কারণ দেখিয়েছেন উর্জিত, তাকে সম্মান জানানো উচিত। কিন্তু কেন তিনি এমন পদক্ষেপ করতে বাধ্য হলেন, খতিয়ে দেখা উচিত তা-ও। আমার মনে হয় এ বার দেশবাসীর উদ্বিগ্ন হওয়ারসত্যি সত্যিই সময় এসেছে। দেশের অর্থনৈতিক এবং সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলির স্বাধীনতা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।’’
আরও পড়ুন: বিজয় মাল্যর প্রত্যর্পণের নির্দেশ দিল ব্রিটেনের আদালত
একসময় রাজনের সমালোচক ছিলেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। কিন্তু এ ব্যাপারে রাজনের সঙ্গে একমত হতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তিনি বলেন, ‘‘উর্জিত পটেলের ইস্তফা দেশের অর্থনীতি তো বটেই, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং সরকারের পক্ষেও ক্ষতিকারক। অন্তত জুলাই পর্যন্ত থাকতে পারতেন উনি, যতদিন পর্যন্ত পরবর্তী সরকার গঠিত না হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর উচিত ওঁকে ফোন করা। ওঁর চলে যাওয়া আটকানো প্রয়োজন।’’
তবে প্রধানমন্ত্রীর তরফে যে আপাতত সে রকম কোনও পরিকল্পনা নেই , তা তাঁর টুইটেই পরিষ্কার। উর্জিত পটেল ইস্তফা দেওয়ার পরই একটি টুইট করেন তিনি। তাতে লেখেন, ‘‘উর্জিত পটেল একজন পেশাদার মানুষ। অসম্ভব ন্যায়পরায়ণও। ছ’বছর ধরে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সঙ্গে যুক্ত উনি। প্রথমে ডেপুটি গভর্নর ছিলেন, পরে গভর্নর হন। বিরাট উত্তরাধিকার রেখে গেলেন উনি। আমরা ওঁর অভাব বোধ করব।’’
Dr. Urjit Patel is a thorough professional with impeccable integrity. He has been in the Reserve Bank of India for about 6 years as Deputy Governor and Governor. He leaves behind a great legacy. We will miss him immensely.
— Narendra Modi (@narendramodi) December 10, 2018
অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, ‘‘ডেপুটি গভর্নর এবং গভর্নর থাকাকালীন দেশের হিতে সাধ্যমতো কাজ করে দিয়েছেন উর্জিত পটেল। সরকার তাঁর অবদান অস্বীকার করে না। ওঁর সান্নিধ্যে অনেক উপকৃত হয়েছি।’’
The Government acknowledges with deep sense of appreciation the services rendered by Dr. Urjit Patel to this country both in his capacity as the Governor and the Deputy Governor of The RBI. It was a pleasure for me to deal with him and benefit from his scholarship. (1/2)
— Arun Jaitley (@arunjaitley) December 10, 2018
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy