Advertisement
E-Paper

রাস্তা নিয়ে পূর্ত হলফনামায় ক্ষুব্ধ বরাক

৮ নম্বর জাতীয় সড়কে চুরাইবাড়ি-পোয়ামারা অংশে ৮ দিন থেকে যান চলাচল বন্ধ। বেহাল রাস্তার দরুন লরির চাকা ১ ইঞ্চি এগোনোর সুযোগ নেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ জুন ২০১৬ ০৯:২১
বেহাল পথের শিকার। অসম-ত্রিপুরা সীমানার চুরাইবাড়িতে ট্রাকের সারি। শুক্রবার। পিটিআইয়ের ছবি।

বেহাল পথের শিকার। অসম-ত্রিপুরা সীমানার চুরাইবাড়িতে ট্রাকের সারি। শুক্রবার। পিটিআইয়ের ছবি।

৮ নম্বর জাতীয় সড়কে চুরাইবাড়ি-পোয়ামারা অংশে ৮ দিন থেকে যান চলাচল বন্ধ। বেহাল রাস্তার দরুন লরির চাকা ১ ইঞ্চি এগোনোর সুযোগ নেই। ফলে ত্রিপুরার সঙ্গে সড়কপথে বাইরের যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ। একই সড়কে পাঁচগ্রামে ক-দিন পরপর রাস্তা বন্ধ করে দিতে হয়। সে সময় হালকা গাড়িগুলি কাগজকলের ভেতর দিয়ে চলাচল করে। আর কাটিগড়া থেকে কালাইন অংশে রাস্তার ওপর গর্ত নয়, একেকটা ডোবার চেহারা নিয়েছে।

অন্য দিকে, ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কে মণিপুরগামী গাড়িগুলি কাশীপুরে অনেক দিন ধরে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে মিজোরামের দিকে গেলেও একই হাল। সোনাই রোডে চলাচল দায়।

এই অবস্থায় পূর্ত বিভাগের পক্ষ থেকে হলফনামা দিয়ে গৌহাটি হাইকোর্টকে জানানো হয়, বরাক উপত্যকার ৮৬ শতাংশই ভাল। মাত্র ১৪ শতাংশ খুব বাজে। সেগুলি মেরামতের জন্যও বিভাগ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছে। আদালত আগামীকাল এই ব্যাপারে চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে ডেকে পাঠিয়েছে। কী রায় হয়, তা জানতে আগ্রহী সবাই। তবে আদালতের রায়ের আগেই উপত্যকা জুড়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে মানুষ।

আজ তাঁর কাছে হিসেব চাইতে শিলচরে পূর্ত (জাতীয় সড়ক) বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মলয় দেবের কাছে যান ইয়ুথ অ্যাগেনস্ট সোশ্যাল ইভিল (ইয়াসি)-এর সদস্যরা। আদালতে পেশের জন্য মূলত তিনিই বিভাগকে এই হলফনামা তৈরি করে দিয়েছেন। ইয়াসি-র সভাপতি সঞ্জীব রায় সহ স্বপ্না আরা বেগম, সত্যম নুনিয়া, সুষমা দাস অভিযোগ করেন, আদালতকে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন তিনি। পূর্তবিভাগ সবাইকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছে। তাতে উপত্যকায় সড়ক নির্মাণের কাজকর্ম আরও পিছিয়ে পড়তে পারে।

মলয়বাবু অবশ্য আজও নিজের অবস্থানে অনড়। তিনি জানান, আদালতে অত্যন্ত খারাপ রাস্তার হিসেব দেওয়া হয়েছে। ৬, ৮ ও ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কে মোট ২৮৭ কিলোমিটার রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে ৪১ কিলোমিটার রাস্তা খুবই খারাপ। তিনি এর বিবরণ দিয়ে বলেন, কাশীপুরে ৫ কিমি, পাঁতগ্রাম থেকে বদরপুরঘাট ২ কিলোমিটার, বদরপুর থেকে মালিডহর অংশ ১০ কিলোমিটার, ধলেশ্বরী থেকে ভৈরবীর মধ্যে ১ কিলোমিটার, পোয়ামারা থেকে চুরাইবাড়ির মধ্যে ৭ কিলোমিটার, শিলচর থেকে লায়লাপুর ১১ কিলোমিটার এবং বদরপুর থেকে চরগোলার মধ্যে ৫ কিলোমিটার মোট ৪১ কিলোমিটার।

সঞ্জীববাবুরা তাঁর এই হিসেব মানতে নারাজ। তাঁরা জানান, অধিকাংশ জায়গায় চলাচল অসম্ভব পর্যায়ে। ফলে ৫ কিলোমিটার আর ৭ কিলোমিটারের হিসেব মেনে নেওয়া যায় না।

মলয়বাবু ইয়াসি প্রতিনিধিদের আশ্বস্ত করেন, হিসেব যা-ই হোক না কেন, উপত্যকার সমস্ত রাস্তাঘাটে কাজ ধরা হচ্ছে। আগামী বর্ষার আগে সব সড়ক চলাচলযোগ্য হয়ে উঠবে।

তিনি জানান, শ্রীকোণা ডেইলি বাজার থেকে পাঁচগ্রাম পর্যন্ত ২১ কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার করা হয়েছে। করিমগঞ্জ শহরের আগে ১৬ কিলোমিটারেও কাজ হয়েছে। শিলচর-আইজল সড়কে ক্যাপিটেল পয়েন্ট থেকে হলিক্রশ স্কুল এবং উত্তর কৃষ্ণপুর থেকে সোনাবাড়িঘাট পর্যন্ত ৪ কোটি টাকার কাজের ঠিকা বরাদ্দ করা হয়েছে। হলিক্রশ থেকে উত্তর কৃষ্ণপুর অংশে ২০ কোটি টাকার কাজ বণ্টন করা হয়েছে। লায়লাপুর থেকে ১৮০ কিলোমিটারের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ৮০ লক্ষ টাকা। শিলচর-জিরিবাম অংশে সদরঘাট থেকে মধুরা পয়েন্ট পর্যন্ত ৩০ কোটি টাকার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। মঞ্জুরি মিললে ফুটপাত থেকে ফুটপাত রাস্তা হবে, মাঝে ডিভাইডার। মধুরা পয়েন্ট থেকে কাশীপুর অংশে ২৩ কোটি টাকার কাজের টেন্ডার ডাকা হয়েছে। ৩০ জুন এর শেষ দিন। পয়লাপুল থেকে জিরিঘাট পর্যন্ত ৪০ কোটি টাকার কাজ শেষের পথে। অন্যদিকে সদরঘাট পয়েন্ট থেকে শিলচর-কালাইন সড়ক পর্যন্ত আড়াই কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। শালচাপড়া ও কাটাখালের মধ্যে দুটি রেল ওভারব্রিজ তৈরির জন্য ৪৯ কোটি টাকার টেন্ডার ডেকেছে তাঁর বিভাগ। পাঁচগ্রামেও ডাইভারশন রোডের জন্য ১৪৪ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া, মালিডহর থেকে বিহারি হোটেল ও হিলারা লক্ষ্মীপুর থেকে শ্রীগৌরী পর্যন্ত অংশে ১০০ কোটি টাকার কাজ চলছে। শ্রীগৌরী থেকে করিমগঞ্জ বাবা হোটেল, বাইপাস এবং অতিরিক্ত ১৮ কিলোমিটার কাজের জন্য ১৩০ কোটি টাকা মঞ্জুর হয়েছে। ৪জন টেন্ডারে অংশ নিয়েছেন। সেগুলি কেন্দ্রীয় ভূতল পরিবহণ মন্ত্রক খতিয়ে দেখছে। পাথারকান্দি বাইপাসের জন্য ৭০ কোটি টাকার কাজ গত নভেম্বরে বণ্টিত হয়। এখন জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কাজ চলছে। তবে করিমগঞ্জ বাবা হোটেল থেকে চুরাইবাড়ি অংশে রাস্তা নির্মাণের দায়িত্ব পেয়েছিল ওড়িশার একটি ঠিকা সংস্থা। তাদের সঙ্গে ৩০ কোটি টাকার চুক্তি বাতিল করার পর এখন নতুন করে ১১৭ কোটি টাকার এস্টিমেট তৈরি করা হয়েছে। মলয়বাবু আরও জানান, দিগরখাল এমভিআই গেট থেকে হিলারা লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত ১১ কিলোমিটার অংশে ১২ কোটি টাকার কাজ চলছে এই সময়ে।

অভিযোগ উঠেছে, ত্রিপুরাতে সামগ্রী নামিয়ে আসা লরিচালকরা হামলা চালান অসম-ত্রিপুরা সীমানার চুরাইবাড়ির পুলিশ ফাঁড়িতে। গত রাতের ঘটনার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি। তার জেরে আজ সকাল থেকে সেখানে আরও বেশি যানজট ছড়িয়েছে। পুলিশ সূত্রে খবর, গত রাতে চুরাইবাড়ির পুলিশ চৌকিতে পাথর ছোঁড়া হয়। পুলিশ টাকা নিয়ে পণ্যবাহী গাড়ি ছাড়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠে। করিমগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নবীন সিংহ জানান, জাতীয় সড়ক বেহাল থাকায় প্রথমে পণ্যবাহী লরি যাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল পুলিশ। ত্রিপুরা সরকারের তরফে অসমকে জানানো হয়েছিল, জাতীয় সড়কে আটকে থাকা লরিগুলি না ছাড়া হলে ওই রাজ্যে খাদ্য ও জ্বালানি সঙ্কট দেখা দিতে পারে। করিমগঞ্জ পুলিশও সে জন্য ত্রিপুরায় মাল খালাস করে আসা লরিগুলিকে আটকে পণ্যবাহী লরিগুলিতে যাওয়ার রাস্তা করে দেয়। সেই কারণেই একাংশ লরি চালক উত্তেজিত হয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালান।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy