E-Paper

প্রণব-সাক্ষাৎ বাতিল করেন শেষ মুহূর্তে

প্রণববাবুর অফিস থেকে সময়ও স্থির করে ফেলা হয়েছিল বেগম সাক্ষাতের। কিন্তু ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনে দু’লাইনের মেল করে শেষ মুহূর্তে সেই সাক্ষাৎ বাতিল করে দেন খালেদা।

অগ্নি রায়

শেষ আপডেট: ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৭:৩১
(বাঁ দিকে)  প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং খালেদা জিয়া (ডান দিকে)।

(বাঁ দিকে) প্রণব মুখোপাধ্যায় এবং খালেদা জিয়া (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।

রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর প্রথম সফরেই ঢাকাকে বেছেছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। সেই সফরের সঙ্গী হিসেবে জেনেছিলাম, বিরোধী বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করার বিশেষ উৎসাহ রয়েছে তাঁর। প্রণববাবুর অফিস থেকে সময়ও স্থির করে ফেলা হয়েছিল বেগম সাক্ষাতের। কিন্তু ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনে দু’লাইনের মেল করে শেষ মুহূর্তে সেই সাক্ষাৎ বাতিল করে দেন খালেদা। কারণ হিসেবে জানিয়েছিলেন, জামায়েতের ডাকা হরতালের কারণে তিনি দেখা করতে স্বচ্ছন্দ নন। প্রণববাবুর মুখের হাসি মিলিয়ে গিয়েছিল সে দিন। আসলে পরের বছর সে দেশের নির্বাচন মাথায় রেখে ভারত বিরোধিতার স্বর চড়িয়েছিলেন খালেদা।

আজ বাংলাদেশের রাজনীতির সন্ধিক্ষণে তাঁর মৃত্যুর খবরে যথাবিহিত শোক জানিয়েছে সাউথ ব্লক। শ্রদ্ধা জানাতে আগামিকাল একদিনের সফরে ঢাকা যাচ্ছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। এক্স হ্যান্ডলে বাংলায় পোস্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। কিন্তু খালেদার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক ধারাবাহিক ভাবে তিক্তই থেকেছে। মাঝে মধ্যে তিনি ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করলেও বিএনপি এবং নয়াদিল্লির সম্পর্ক বিশেষ উজ্জ্বল হয়নি। শোকপ্রকাশ করে মোদী এ দিন লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়ন ও ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ অবদান চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ২০১৫ সালে ঢাকায় তাঁর সঙ্গে আমার সৌহার্দ্যপূর্ণ সাক্ষাতের কথা স্মরণ করছি। আমরা আশা করি, তাঁর ভাবনা ও উত্তরাধিকার আমাদের অংশীদারিত্বকে ভবিষ্যতেও পথনির্দেশ করবে’।

খালেদা জিয়া মূলত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েই ভারত-সম্পর্ককে দেখেছেন। ১৯৭২ সালের ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী চুক্তি পুনর্নবীকরণের বিরোধিতা করে, তাকে ‘দাসত্ব চুক্তি’ বলেও একে অভিহিত করেছিলেন। তিস্তার জলবণ্টন, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা এবং অবৈধ অভিবাসনের মতো বিষয়গুলি নিয়ে ভারতের সঙ্গে সংঘাতমূলক অবস্থান তিনি বজায় রাখেন। বলেছিলেন, ‘ফরাক্কা ব্যারাজ দিয়ে যখন জলের দরকার হয় তখন বন্ধ করে দেয়, যখন প্রয়োজন হয় তখন দেওয়া হয় না, এটা দুঃখজনক। এক জনের মাথা উঁচু থাকবে আর এক জনের নিচু থাকবে এটা বন্ধুত্ব নয়। ভারতের সঙ্গে যে সব চুক্তির কথা শোনা যাচ্ছে, তা জনগণের বিপক্ষে।’

২০০১-২০০৬ সালে, বাংলাদেশে বিএনপি সরকারের আমলে অশান্ত হয়ে উঠেছিল ভারতের ‘সাত বোন’। বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি, এই অশান্তির পিছনে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদার ভূমিকা ছিল। উত্তর–পূর্ব ভারতে আলফা এবং এনএসসিএন-এর মতো সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলি সেই সময়ে অনেকটাই শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। অভিযোগ ওঠে, ওই সংগঠনগুলির নেতাদের বেশির ভাগেরই আশ্রয়স্থল ছিল বাংলাদেশ।

সে দেশের মাটি ব্যবহার করেই ভারতে একের পর এক হামলার ষড়যন্ত্র করেছিল তারা। বাংলাদেশ থেকে প্রচুর অস্ত্র এবং বিস্ফোরক উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রবেশ করত বলেও জানা যায়।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জোর চেষ্টা চালায় রাজনৈতিক ভাবে বেকায়দায় থাকা বিএনপি তথা খালেদা। তবে সম্পর্ক মসৃণ হয়নি আর।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

pranab mukherjee khaleda zia

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy