হৃদ্্রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ১২ দিন। আজ বেলা ১১টা ৫১-এ মারা গেলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের স্ত্রী, দেশের ‘ফার্স্ট লেডি’ শুভ্রা মুখোপাধ্যায়। বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
৭ অগস্ট সন্ধ্যায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন শুভ্রাদেবী। প্রণববাবু তখন পুরী সফরে। সেনা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে শুভ্রাদেবী হৃদ্্রোগে আক্রান্ত হন। মস্তিষ্কে কিছু ক্ষণের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ না হওয়ায় সঙ্কট তীব্রতর হয়। এই ক’দিন লাইফ সাপোর্টেই ছিলেন তিনি।
দুপুরে দেহ আনা হয় রাষ্ট্রপতি ভবনে। প্রণব-জায়াকে শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল-সহ তাবড় রাজনীতিকরা। সন্ধ্যায় দেহ নিয়ে যাওয়া হয় তালকাটোরা রোডে বড় ছেলে সাংসদ অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের সরকারি বাসভবনে। অতীতে রাজ্যসভার সাংসদ ও পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে প্রায় দু’দশক ধরে তালকাটোরার এই বাড়িটি প্রণববাবুরও সরকারি বাসভবন ছিল। পদাধিকার বলে এর থেকেও বড় বাংলো পাওয়ার সুযোগ থাকলেও মূলত শুভ্রাদেবীর কারণে বাড়িটি কখনও ছাড়েননি প্রণববাবু।
পড়ুন, ঘরের মেয়ে আর ফিরবে না, শোকের ছায়া নড়াইলে
শুভ্রাদেবীকে শ্রদ্ধা জানাতে আজ রাতে দিল্লি এসে পৌঁছন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাত পৌনে দশটা নাগাদ তিনি তালকাটোরা রোডের বাড়িতে যান। সঙ্গে সুব্রত মুখোপাধ্যায়, শুভেন্দু অধিকারী, ডেরেক ও’ব্রায়েন, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সুখেন্দুশেখর রায় ও দীনেশ ত্রিবেদী। তার একটু আগেই সেই বাড়িতে এসেছেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। মমতা তাঁর সঙ্গে দেখা করে মিনিট দশেক কথা বলেন। কাল সকালে লোধি রোডের শ্মশানে শুভ্রাদেবীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। সেখানেও থাকবেন মমতা। তালকাটোরা রোডের বাড়ি থেকে বেরিয়ে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘‘কিছু সম্পর্ক রাজনীতির ঊর্ধ্বে হয়। প্রণববাবু ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে আমার কয়েক দশকের সম্পর্ক। তাঁর পরিবারের সবাইকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি। এই সময়ে প্রণববাবুর পাশে থাকা আমার কর্তব্য।’’
পড়ুন, প্রণব মুখোপাধ্যায় হয়ে ওঠার পিছনে কারিগর ছিলেন শুভ্রাই
১৯৪০ সালে বাংলাদেশের যশোরে জন্ম শুভ্রাদেবীর। ছেলেবেলাতেই পশ্চিমবঙ্গে চলে আসেন। প্রণববাবুর সঙ্গে যখন তাঁর পরিচয় হয়, তখনও তিনি নাবালিকা। বিয়ে হয় ১৭ বছর বয়সে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একনিষ্ঠ ভক্ত শুভ্রাদেবী রবীন্দ্রসঙ্গীত ও কবিতা আবৃত্তিতে পারদর্শী ছিলেন। বিয়ের পর গীতাঞ্জলি নামে একটি ট্রুপও তৈরি করেছিলেন তিনি। সেই ট্রুপ নিয়ে দেশ-বিদেশের বহু জায়গায় গান ও নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করেছেন। চিত্রশিল্পী ও লেখক হিসেবেও পরিচিতি ছিল তাঁর। দু’টি বই লিখেছিলেন, ‘চোখের আলোয়’ এবং ‘চেনা অচেনায় চিন’। রামকৃষ্ণ মিশনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে অনাথ ও দুঃস্থ ছেলেমেয়েদের পুনর্বাসনের জন্য এক সময় প্রচুর কাজ করেছেন তিনি।
মুখোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা বলতেন, ব্যক্তি প্রণববাবুর শক্তি-স্তম্ভ ছিলেন শুভ্রাদেবী। প্রণববাবু তাঁকে ডাকতেন ‘গীতা’ বলে। ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গেও শুভ্রাদেবীর ব্যক্তিগত ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়েছিল। মাঝে মধ্যে প্রণববাবুকে না জানিয়ে শুভ্রাদেবীকে ফোন করে তাঁর হাতের রান্না খেতে চলে আসতেন ইন্দিরা গাঁধী। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও আজ তাঁর শোকবার্তায় বলেন, ‘‘যিনিই তাঁর বাড়িতে গিয়েছেন, তিনিই তাঁর আদর আপ্যায়ন, ভালবাসা ও আতিথেয়তায় আপ্লুত হয়েছেন।’’
শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পরে ভারতে আত্মগোপন করে ছিলেন শেখ হাসিনা। তখন দীর্ঘদিন প্রণববাবুর বাড়িতেই ছিলেন তিনি। শুভ্রাদেবীর সঙ্গে তখনই হাসিনার দিদি-বোনের সম্পর্ক তৈরি হয়। হাসিনার ছেলেমেয়েরা মাসির মতোই দেখতেন শুভ্রাদেবীকে। আজ প্রণববাবুকে ফোন করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। কাল শেষকৃত্যে যোগ দিতে দিল্লি আসছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গেও দেখা করবেন হাসিনা।
শিক্ষিকা শুভ্রাদেবীর স্মরণে ছুটি স্কুলে