Advertisement
E-Paper

মোদী ম্যাজিকের কারিগরই নীতীশের সেনাপতি

দিন তিনেক আগের ঘটনা। বিহারের ভোটগ্রহণ পর্ব সবে মিটেছে। ৭ সার্কুলার রোডে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বাসভবনের লনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন দুই তরুণ। বুথফেরত সমীক্ষা নিয়ে আলোচনা করছিলেন তাঁরা।

দিবাকর রায়

শেষ আপডেট: ০৯ নভেম্বর ২০১৫ ০৩:৫৯
জয়ের পরে প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে নীতীশ। ছবি: পিটিআই।

জয়ের পরে প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে নীতীশ। ছবি: পিটিআই।

দিন তিনেক আগের ঘটনা। বিহারের ভোটগ্রহণ পর্ব সবে মিটেছে। ৭ সার্কুলার রোডে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের বাসভবনের লনে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন দুই তরুণ। বুথফেরত সমীক্ষা নিয়ে আলোচনা করছিলেন তাঁরা। বিভিন্ন চ্যানেলের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে কথা হচ্ছিল। দু’জনের কথা মন দিয়ে শুনছিলেন বছর সাঁইত্রিশের আর এক যুবক। বাকি দু’জন তাঁকে টিভি চ্যানেলের ফল নিয়ে নানা কথা বললেও শান্ত এবং আত্মবিশ্বাসী সেই যুবক জানাচ্ছিলেন, ১৩৫টি আসনে মহাজোটের জয় নিশ্চিত। বাকি ৫০টি কেন্দ্রে লড়াই হবে। সেই লড়াইয়ে জয় হবে কার, তা নিয়ে বরং আলোচনা চলতে পারে।

যুবকের নাম প্রশান্ত কিশোর। গত লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডিজিটাল প্রচারের অন্যতম কারিগর ছিলেন। এ বারে আরও বড় দায়িত্ব নিয়ে নীতীশ কুমারের গোটা নির্বাচনী প্রচারটাই সামলেছেন। শুধু প্রচার সামলেছেন বললে ভুল হবে, দলের নির্বাচনী পরিকল্পনাটাই ছিল প্রশান্তের। সেই প্রশান্ত, যাঁকে নিয়ে একটা সময়ে জেডিইউ নেতাদের মধ্যে দানা বেঁধেছিল ক্ষোভ। এমনকী নীতীশের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সেই সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে নীতীশ আস্থা রেখেছিলেন প্রশান্ত ও তাঁর টিমে। তাঁর সিদ্ধান্ত কতটা সঠিক ছিল, প্রমাণ হয়ে গেল আজ।

প্রশান্ত বিহারের বক্সারের ছেলে। ২০১১ সালে আফ্রিকায় রাষ্ট্রপুঞ্জের স্বাস্থ্য বিশেষ়জ্ঞের দায়িত্ব ছেড়ে দেশে ফিরে আসেন। তার পরেই যুব পেশাদারদের দল তৈরি করে গুজরাতে সুশাসনের প্রচার শুরু করেন। সেই দলের বেশির ভাগই ছিলেন আইআইটি-আইআইএমের স্নাতক। ২০১২ সালে সেই প্রচারের জোরেই গুজরাতে ক্ষমতায় ফেরেন নরেন্দ্র মোদী। সেই দল নিয়েই জাতীয় স্তরে প্রচারের কাজ শুরু হয়। ‘চায়ে পে চর্চা’র সাড়া জাগানো প্রচারের ডিজাইন করেছিলেন প্রশান্তের টিমের সদস্যেরাই। ২০১৪ সালের নির্বাচনে তার ফল হাতেনাতে পান মোদী। ঠিক এর পরেই মোদীর হাত ছেড়ে দেন প্রশান্ত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পেশাদার মানুষ কোনও দলের জন্য কাজ
করে না। আমি নরেন্দ্র মোদীর জন্য কাজ করেছিলাম। কাজ শেষ হয়েছে। ছেড়ে দিয়েছি।’’

সময় থেমে থাকেনি। নীতীশ কুমার জানুয়ারি থেকেই প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। গত মার্চে নীতীশের জন্য নির্বাচনী কৌশল তৈরির দায়িত্ব পান প্রশান্ত। টিমের সদস্যদের নিয়ে লেগে পড়েন। তা নিয়ে বিস্তর কথাও হয়। জেডিইউ-এর মিডিয়ার দায়িত্বে থাকা নেতারা ক্ষুব্ধ হন। অনেকে ছেড়ে যান। কেউ বলেন, নরেন্দ্র মোদীর প্রচারের অন্ধ অনুকরণ করছেন প্রশান্ত! এত কিছুর মধ্যে নিজের কাজে অবিচল ছিলেন এক জন। তিনিই প্রশান্ত কিশোর। প্রথমে ‘পর্চা পে চর্চা’ বা ‘ঘর ঘর দস্তক’ প্রচার করে মাটির খবর তুলে নিয়ে এসেছেন। নীতীশ কুমারের বক্তৃতাকে প্রতিটি এলাকাভিত্তিক প্রাধান্য দিয়ে তৈরি করে দিয়েছেন। যাতে প্রতিটি মানুষের মনে হয়, মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের কথাই ভাবছেন।

কেমন ছিল এই কাজটা? টিম প্রশান্তের সদস্য, প্রাক্তন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাঙ্কার ঋষিরাজ সিংহ বলেন, ‘‘২০১৪ সালে আমরা প্রচার করেছিলাম শাসকের বিরুদ্ধে। এ বারের কাজটা কঠিন ছিল। কারণ এখানে শাসককে ফের জেতানোর জন্য লড়াই করতে হয়েছে।’’ পটনা শহরে বড় বড় হোর্ডিং থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ার যুদ্ধ, প্রতিটি পদক্ষেপেই জিতেছেন প্রশান্তের টিম। মোটা মাইনের চাকরি ছেড়ে প্রশান্তের দলে যোগ দেওয়া প্রতীক জৈনের তৃপ্তি, ‘‘নীতীশ কুমারের বক্তব্যকে ঠিক ভাবে তুলে ধরতে সাহায্য করেছি আমরা। তাঁর ব্যক্তিত্বকে মানুষের সামনে ফুটিয়ে তোলাই লক্ষ্য ছিল।’’

ফল বেরিয়ে গিয়েছে। আজ দুপুরে সার্কুলার রোডের বাড়ির চাতালে মুখ্যমন্ত্রীর পাশেই বসেছিলেন প্রশান্ত। মুখে শিশুসুলভ হাসি। সাদা পাজামা-কুর্তায় রাজনৈতিক নেতার মতোই দেখাচ্ছিল তাঁকে। তিনটে নাগাদ মুখ্যমন্ত্রী উঠে যেতে নিজে থেকে এগিয়ে এলেন। কুশল বিনিময় সেরে পিছন ফেরার সময় প্রশ্ন ছুটে এল, ‘‘এ বার কি অন্য ভূমিকায় দেখা যাবে? মানে রাজনীতির আঙিনায়!’’

কালো ফ্রেমের চশমাটা খুলে পাঞ্জাবিতে মুছে নিলেন প্রশান্ত। খানিক কৌতুক আর খানিক রহস্য মিশিয়ে বললেন, ‘‘উত্তরের জন্য আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।’’

Prashant Kishor Nitish Kumar Successful campaigns Bihar Election
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy