সিঁদুর অভিযানের সময়ে তিনি নাকি ধরা পড়েছিলেন পাকিস্তানের হাতে। এমনটাই ‘খবর’ ছড়িয়েছিল পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে। বুধবার ভারতীয় বায়ুসেনার সেই স্কোয়াড্রন লিডার শিবাঙ্গী সিংহকে সঙ্গে নিয়েই যুদ্ধবিমান রাফালে সওয়ার হলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন পাকিস্তানি সমাজমাধ্যম ব্যবহারকারীদের একাংশ দাবি করেন, শিবাঙ্গীর যুদ্ধবিমান নাকি পাক ফৌজ গুলি করে ভূপাতিত করেছে। শিবাঙ্গীকে পাকিস্তান বন্দি করেছে এমন খবরও ছড়ায় পাক সংবাদমাধ্যমগুলিতে। তবে সেই দাবি যে সম্পূর্ণ অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর, তা বুধবার ফের গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিল ভারত। রাষ্ট্রপতি মুর্মুর সঙ্গে রাফালে সফরসঙ্গী হলেন স্কোয়াড্রন লিডার শিবাঙ্গী।
পহেলাগাঁও হত্যাকাণ্ডের পরে গত ৭ মে পাকিস্তান এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গিঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করে সিঁদুর অভিযান শুরু করেছিল ভারত। চলেছিল গত ১০ মে পর্যন্ত। ওই সময়েই সমাজমাধ্যমে পাকিস্তানিদের একাংশ দাবি করেন শিবাঙ্গীকে আটক করেছে পাকিস্তান। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমগুলিতে সেই খবর ছড়ায়। যদিও ওই দাবি যে ভুয়ো, তা গত ১০ মে-ই স্পষ্ট করে দিয়েছিল নয়াদিল্লি। জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ভারতীয় বায়ুসেনার কোনও মহিলা পাইলট পাকিস্তানের হাতে ধরা পড়েননি। বুধবার অম্বালা ক্যান্টনমেন্টে শিবাঙ্গীর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির ছবি প্রকাশ্যে এনে, তা আরও স্পষ্ট করে দিল নয়াদিল্লি।
শিবাঙ্গীর জন্ম উত্তরপ্রদেশের বারাণসীতে। সংবাদসংস্থা এএফপিকে দেওয়া পুরনো এক সাক্ষাৎকারে শিবাঙ্গী জানিয়েছিলেন, ছোটবেলা থেকেই তিনি বায়ুসেনার পাইলট হতে চাইতেন। তাঁর স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিল দিল্লির পালামে বায়ুসেনার সংগ্রহশালা ঘোরার সময় থেকে। ২০১৭ সালে ভারতীয় বায়ুসেনায় যোগ দেন তিনি। প্রথমে বায়ুসেনার মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমানের পাইলট ছিলেন তিনি। এখন শিবাঙ্গী রাফালের পাইলট। বর্তমানে হরিয়ানার অম্বালায় ভারতীয় বায়ুসেনার ১৭ নম্বর স্কোয়াড্রন ‘গোল্ডেন অ্যারোজ়’-এর দায়িত্বে রয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন:
বায়ুসেনার মহিলা পাইলটদের মধ্যে তিনিই প্রথম রাফালে সওয়ার হন। কর্মজীবনের শুরুর দিকে তাঁর প্রশিক্ষণ চলেছিল বায়ুসেনার কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের হাত ধরেই। ২০১৯ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশের বালাকোট শহরের অদূরে জঙ্গি শিবিরে অভিযান চালিয়েছিল ভারতীয় বায়ুসেনার মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান। ভারতের ওই জঙ্গিদমন অভিযানের পরে ২৭ ফেব্রুয়ারি ভারতের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে হামলা চালায় পাক বায়ুসেনা। সে সময় হামলাকারী এফ-১৬ বিমানের পিছু ধাওয়া করেন উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান। নিজের মিগ-২১ বাইসন যুদ্ধবিমান নিয়ে আকাশসীমা পেরিয়ে ঢুকে পড়েন পাক অধিকৃত কাশ্মীরে। এর পরে আহত অবস্থায় পাক সেনার হাতে বন্দি হন তিনি। প্রায় ৬০ ঘণ্টার টানাপড়েনের পর ১ মার্চ অভিনন্দনকে মুক্তি দেয় পাকিস্তান।
এ বার সিঁদুর অভিযানের সময়েও সমাজমাধ্যমে পাকিস্তানিদের একাংশ শিবাঙ্গীর ধরা পড়ার ভুয়ো খবর ছড়িয়ে বায়ুসেনার কমান্ডার অভিনন্দনের প্রসঙ্গও টেনে আনেন। তাঁরা দাবি করতে থাকেন, অভিনন্দনের পরে এ বার আরও এক জন ধরা পড়লেন। তবে সেই দাবি যে মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন, তা স্পষ্ট হয়ে গেল অম্বালা ক্যান্টনমেন্টে বুধবারের ছবিতেই।