Advertisement
E-Paper

বফর্স বিতর্ক পিছনে ফেলে সুইডেনে প্রণব

বলা-কওয়া নেই, আচমকাই বফর্স বিতর্কের মেঘ ঘনীভূত হয়েছিল পশ্চিম আকাশে। আজ সেই মেঘ কাটিয়েই স্টকহলমের মাটি ছুঁল রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিমান। ভারতের কোনও রাষ্ট্রপতি হিসেবে আজ প্রথমবার প্রণববাবু পা দিলেন সুইডেনের মাটিতে। প্রণববাবুর এই সফর যে নিতান্তই পোশাকি সফর নয়, তা প্রথম থেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। এই সফরের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি যেমন লক্ষ্য, তেমনই দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করার দায়িত্ব নিয়েও স্টকহলমের মাটিতে পা দিয়েছেন প্রণববাবু।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৫ ০৪:০৩
জুড়িগাড়ি চড়ে। সুইডেনের রাজা ষোড়শ কার্ল গুস্তাফের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। ছবি: এএফপি।

জুড়িগাড়ি চড়ে। সুইডেনের রাজা ষোড়শ কার্ল গুস্তাফের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। ছবি: এএফপি।

বলা-কওয়া নেই, আচমকাই বফর্স বিতর্কের মেঘ ঘনীভূত হয়েছিল পশ্চিম আকাশে। আজ সেই মেঘ কাটিয়েই স্টকহলমের মাটি ছুঁল রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের বিমান।

ভারতের কোনও রাষ্ট্রপতি হিসেবে আজ প্রথমবার প্রণববাবু পা দিলেন সুইডেনের মাটিতে। প্রণববাবুর এই সফর যে নিতান্তই পোশাকি সফর নয়, তা প্রথম থেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। এই সফরের মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি যেমন লক্ষ্য, তেমনই দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করার দায়িত্ব নিয়েও স্টকহলমের মাটিতে পা দিয়েছেন প্রণববাবু। তা না হলে রাষ্ট্রপতির সফর উপলক্ষ্যে কেন সুইডেনে পৌঁছে যাবেন ভারতের বিভিন্ন সংস্থার ৬০ জন শীর্ষ কর্তা! যাঁদের লক্ষ্য একটাই— সুইডেনের বাজার ধরা। রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় গতকাল বণিক সভার প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করে টুইট করেছেন, ‘‘দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির প্রশ্নে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।’’

আজ সুইডেনে নেমেই প্রথমে রাজা ষোড়শ কার্ল গুস্তাফের সঙ্গে দ্রটিঙ্গহম প্রাসাদে বৈঠক করেন প্রণববাবু। আগামিকাল বৈঠক হওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী স্টিফান লিভেনের সঙ্গে। আশির দশকের বফর্স বিতর্ককে পিছনে ফেলে, এখন বাণিজ্যের হাত ধরে দু’পক্ষের সম্পর্ক আরও মজবুত হবে, প্রণববাবুর সফর উপলক্ষ্যে এই আশায় বুক বাঁধছে সুইডেন। বিশ্বব্যাপী মন্দার দিন কাটিয়ে এখন নতুন বাজার ধরতে আগ্রহী সুইডিশ বহুজাতিক সংস্থাগুলিও। যে তালিকায় ভারত রয়েছে একেবারে উপরের সারিতে।

প্রণববাবুকে যে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সুইডেন, তা স্পষ্ট হয়ে যায় এ দেশের মাটি ছোঁয়ার আগেই। ভারতের রাষ্ট্রপতির বিমান সুইডেনের বায়ুসীমায় ঢোকা মাত্রই দু’টি ফাইটার জেট প্রণববাবুর বিমানের দু’দিকে চলে আসে। রাষ্ট্রপতির বিমানকে গার্ড অব অনার দিতে দিতে নিয়ে চলে তারা। শুধু তাই নয়। বিমানবন্দরে প্রণববাবুকে স্বাগত জানাতে এসেছিলেন রাজা কার্ল গুস্তাফের কন্যা যুবরানি ভিক্টোরিয়া। গুস্তাফের কোনও ছেলে নেই। তাঁর অবর্তমানে সিংহাসনে বসবেন এই ভিক্টোরিয়াই।

বর্তমানে ভারত ও সুইডেনের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় আড়াই বিলিয়ন ডলার। আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে তা দ্বিগুণ করতে আগ্রহী দু’পক্ষই। সুইডেনের বিদেশমন্ত্রী মার্গট ওয়ালস্ট্রম বলেন, ‘‘বর্তমানে প্রায় ১৭০টি সুইডিশ সংস্থা ভারতে সক্রিয় রয়েছে। সেই সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ ভারতীয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত রয়েছেন। ভারতে ব্যবসার উদ্দেশ্যে প্রায় প্রতি দিনই গড়়ে একটি করে সুইডিশ সংস্থা নথিভুক্ত হচ্ছে।’’

ক্ষমতায় এসেই সংস্কারমুখী সিদ্ধান্ত নিয়ে বিদেশি লগ্নির রাস্তা খুলে দিয়েছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। মার্গটের মতে, ‘‘সাম্প্রতিক কালে মেক ইন ইন্ডিয়া, স্মার্ট শহর, ডিজিটাল ইন্ডিয়ার মতো নীতি গ্রহণ করার মাধ্যমে দিল্লি গোটা বিশ্বকে এই বার্তাই দিয়েছে যে, ভারত বিনিয়োগ টানতে শুধু আগ্রহীই নয় তারা এখন প্রস্তুত।’’ বিদেশি লগ্নির বিনিয়োগের সীমা বাড়ায় রেল আধুনিকীকরণ, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্র, ভারি শিল্প, পেট্রো-রসায়ন শিল্প তালুক গড়ে তোলার মতো ক্ষেত্রগুলিতে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী সুইডেন। আগ্রহ রয়েছে পরিবহণ ক্ষেত্রকে ঘিরেও। ভলভোর মতো সংস্থা ভারতে তাদের কারখানা সম্প্রসারণেরও পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এবিবি বা এরিকসনের মতো সুইডিশ সংস্থাগুলিও আগ্রহী নতুন সম্প্রসারণে।

রেলের মতো প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির রাস্তা খুলে দিয়েছে নয়াদিল্লি। যে বফর্স সংস্থার কামানকে ঘিরে এত বিতর্ক, সেই সংস্থাও নতুন করে ভারতে লগ্নি করতে আগ্রহী। একই সঙ্গে ক্ষমতায় এসেই গোটা দেশে একশোটি স্মার্ট শহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে স্মার্ট শহর গড়ে তুলতে আগ্রহী সুইডেন। বিদেশ মন্ত্রকের সচিব (পশ্চিম) নভতেজ সারানা বলেন, ‘‘সুইডেন সরকার তাদের দেশে গড়ে ওঠা একটি স্মার্ট শহর দেখাতে প্রণববাবুকে আমন্ত্রণ পর্যন্ত জানিয়েছে।’’ সাউথ ব্লকের ব্যাখ্যা, এর থেকেই
বোঝা যায় ভারতে বিনিয়োগ করতে কতটা আগ্রহী তারা। সুইডেন সরকারের দাবি, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিক শহর গড়ে তুলতে সফল হয়েছে তারা। সেই মডেলের সাফল্য তুলে ধরতেই ওই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

আপাতত তাই বফর্স বিতর্ককে পিছনে ফেলে লক্ষ্য শুধু বাণিজ্যই।

Pranab Mukherjee Sweden State visit Belarus President India
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy