Advertisement
E-Paper

মুখে দোঁহা কবিরের, বুদ্ধ স্মরণে মোদী

সাবরমতী আশ্রম থেকে গত কাল মহাত্মা গাঁধীর অহিংসার শিক্ষা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রশ্ন তুলেছিলেন, যে দেশে অহিংসার বার্তা দেওয়া হয়, সেই দেশে কী ভাবে গো-রক্ষার নামে মানুষ খুন হয়! আর আজ গাঁধীনগরে ‘মহাত্মা মন্দির’-এ মোদীর মুখে শোনা গেল কবিরের দোঁহা।

প্রেমাংশু চৌধুরী

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৭ ০৪:০০

প্রথমে গো-রক্ষার দোহাই দিয়ে খুনের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি। এ বারে তাঁর মুখে কবিরের দোঁহা। সঙ্গে বুদ্ধদেবের কথা, ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের জয়গান।

সাবরমতী আশ্রম থেকে গত কাল মহাত্মা গাঁধীর অহিংসার শিক্ষা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রশ্ন তুলেছিলেন, যে দেশে অহিংসার বার্তা দেওয়া হয়, সেই দেশে কী ভাবে গো-রক্ষার নামে মানুষ খুন হয়! আর আজ গাঁধীনগরে ‘মহাত্মা মন্দির’-এ মোদীর মুখে শোনা গেল কবিরের দোঁহা। পঞ্চদশ শতকের সেই দোঁহা শুনিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘এই দোঁহা বা কবিতার মধ্যেই ভারতের সাংস্কৃতিক বিবিধতার প্রতীক অন্তর্নিহিত রয়েছে। এ দিনই পশ্চিম ভারতে বৌদ্ধ সংস্কৃতির প্রসারের কথা তুলে ধরে নিজ-রাজ্যে অহিংসার পূজারি বুদ্ধদেবের বিশাল মূর্তি গড়ার ইচ্ছের কথা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

রাজনীতিকেরা যদিও বলছেন, গো-রক্ষার নামে পরের পর খুন হয়ে চলায়, চাপের মুখেই এর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে হয়েছে মোদীকে। কারণ দাদরি থেকে অলওয়র, পেহলু খান থেকে জুনেইদ— মোদী জমানায় একের পর এক খুনের ঘটনায় আমজনতা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মহলেও মোদীর নিন্দা শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে, আর্থিক সংস্কারক নয়, মোদী যে আসলে হিন্দুত্ববাদী, তা ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। কিন্তু মোদী গো-রক্ষার নামে মানুষ খুন বরদাস্ত করা হবে না বলার পরেও ঝাড়খণ্ডে একই ভাবে খুনের ঘটনা ঘটেছে। আজ তাই কবিরের দোঁহা পাঠ করে ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের কথা মনে করিয়ে দিতে হয়েছে মোদীকে। বিরোধীরা বলছেন, অন্যকে শোনানোর আগে মোদীর নিজের বোঝা উচিত, এই দেশ বহু ধর্ম, বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতি, নানা রকম খাদ্যাভাসের দেশ।

আরও পড়ুন: স্বাগত, কিন্তু চিন্তা রূপায়ণ

কবিরের কোন দোঁহা-র কথা বলেছেন মোদী?

সেটি হলো, ‘ঝিনি ঝিনি বিনি চাদরিয়া, কাহে কে তানা, কাহে কে ভরনি, কউন তার সে বিনি চাদরিয়া।’ যার মূল অর্থ হল, উপরওয়ালা কী সুন্দর ও অতি সূক্ষ্ম এই চাদর বুনেছেন। এতে কোনও রকম খাদ নেই। কবির নিজে ধর্মের নামে যে কোনও রকম আচার চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন। তার জন্য হিন্দু ও মুসলমান, দুই ধর্মেরই মৌলবাদ বা গোঁড়ামির বিরুদ্ধে ছিলেন তিনি।

ভারতের সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের কথা তুলে ধরতে মোদী এ দিন শরণ নেন অহিংসার প্রতীক বুদ্ধদেবেরও। মোদাসায় গিয়ে মোদী আজ জানান, তাঁর ইচ্ছে, ‘দেব নী মোরী’তে বুদ্ধদেবের বিশাল এক মূর্তি গড়া হোক। যাতে গোটা বিশ্বের লোক এখানে আসেন। স্থানীয় আদিবাসীদের পোশাক পরে মোদী সেখানে বলেন, ‘‘অনেকের ধারণা ভগবান বুদ্ধের প্রভাব বুঝি শুধু পূর্ব ভারতেই ছড়িয়েছিল। কিন্তু (আরাবল্লি জেলায়) শামলাজী মন্দিরের কাছে ‘দেব নী মোরী’-তে খনন চালিয়ে প্রাচীন বেশ কিছু বৌদ্ধ নিদর্শন পাওয়া গিয়েছে। তাতেই প্রমাণ মিলেছে, এক সময়ে পশ্চিম ভারতেও ভগবান বুদ্ধের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছিল।’’

বুদ্ধদেব ও কবিরের কথা মোদী এ দিন স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন বড় অর্থবহ ভাবে। নিজের শহর ও নির্বাচনী কেন্দ্রের সঙ্গে এই দুই মহাপুরুষের যোগ তুলে ধরেছেন তিনি। মোদাসায় মোদী উল্লেখ করেন, তাঁর নিজের শহর বডনগরে কয়েক শতক আগেও ১০ হাজার বৌদ্ধ সন্ন্যাসী থাকতেন। কবিরের কথা বলেছেন তার আগে। মনে করা হয়, বারাণসীর এক মুসলমান পরিবারেই কবিরের জন্ম হয়েছিল বলে মনে করা হয়। এখন যা তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র। মুসলমান পরিবারে জন্ম নিলেও হিন্দু ভক্তি আন্দোলনের নেতা রামানন্দ কবিরকে প্রভাবিত করেছিলেন। তাঁর প্রসঙ্গটি আজ বড় অদ্ভুত ভাবে টেনে এনেছেন মোদী। বলতে গেলে প্রায় জোর করে। গাঁধীনগরের ‘মহাত্মা মন্দির’-এ আজ বস্ত্রশিল্পের আন্তর্জাতিক সম্মেলন ‘টেক্সটাইল ইন্ডিয়া’-র উদ্বোধন করেন মোদী। এই বস্ত্র কী ভাবে এক সুতোর মতো গোটা দেশকে বেঁধে রেখেছে, তা বোঝাতে গিয়ে মোদী বলেন, চেন্নাইয়ে এক অনুষ্ঠানে বারাণসীর এক বস্ত্রশিল্পী তাঁকে একটি চাদর উপহার দিয়েছিলেন। সেই চাদরেই কবিরের এই দোঁহাটি সুতো দিয়ে লেখা ছিল।

এর পরেই মোদী বলেন, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত ওই শিল্পী আজ এই অনুষ্ঠানেও থাকতে পারেন। সঙ্গে সঙ্গেই উঠে দাঁড়ান রমেশ সিংহ পরদেশি। মোদী তাঁকে দেখে খুশি হয়ে হেসেও ওঠেন। পরে অবশ্য রমেশ বলেন, তিনি বারাণসীর নয়, মহারাষ্ট্রের শিল্পী। চেন্নাইয়ের অনুষ্ঠানে তিনি মোদীকে সিল্কের পৈঠানি চাদর উপহার দিয়েছিলেন। তবে সেই চাদরে সুতোর কাজে পদ্মফুল থাকলেও, কবিরের দোঁহা ছিল না।

Narendra Modi Mahatma Gandhi নরেন্দ্র মোদী মহত্মা গাঁধী মহাত্মা মন্দির Kabir কবির
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy